পৌর এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা নিশ্চিতে অনাদায়ী বকেয়া বিল প্রধান অন্তরায়
দেশের অর্থনৈাতিক উন্নয়নের অন্যতম প্রধান চালিকা নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা। সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিক এই খাতটি সুবিধাভোগী জনজীবনে ইতোমধ্যে সফলতার ছাপ ফেলেছে। তারই ধারাবাহিকতায় ওয়েষ্ট জোন বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানী লি:(ওজোপাডিকো) এই অঞ্চলের নাগরিক জীবন ও শিল্প-কারখানায় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা নিশ্চিত করে দেশসেরা শ্রেষ্ঠত্বের গৌরব অর্জন করেছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমাঞ্চলীয় বিদ্যুৎ বিতরণ কুষ্টিয়া জোনের অধীন ১০টি পৌর এলাকায় অনাদায়ী প্রায় সাড়ে ১১ কোটি (১১ কোটি ৫৩লক্ষ ৬হাজার ৫শত ৭৯টাকা) বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের বোঝা টানতে হিমসিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। পৌর নাগরিক সেবায় নিয়োজিত স্পর্শকাতর এসব পৌরসভার অনাদায়ি বিল আদায়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনসহ সরকারের উর্দ্ধতন মহলে নানা দেনদরবার করেও কাংখিত ফল মেলেনি। পরিস্থিতির উত্তরনে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকগণ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার তাগাদা দিয়ে পত্র প্রেরণ করেন এলজিআরডি সচিব বরাবর। অবশেষে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় সচিবের নির্দেশনা ও খুলনা বিভাগীয় বিতরণ কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক অর্থ দপ্তর প্রেরিত চিঠিতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নের নির্দেশ থাকলেও বিল পরিশোধে মেয়রদের বিরুদ্ধে গড়িমসির অভিযোগ তুলেন ওজোপাডিকো লি: কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট মেয়রগণ বলছেন, কিস্তি সুবিধা পেলে আস্তে আস্তে তারা বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে উদ্যোগ নেবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন।
বিদ্যুৎ বিতরণ কুষ্টিয়া অঞ্চল দপ্তর সূত্র মতে, কুষ্টিয়া ডিভিশনের অধীন ১১টি পৌরসভা যথাক্রমে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ভেড়ামারা, আলমডাঙ্গা, কুমারখালী, কালিগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, শৈলকুপা ও মহেশপুর পৌরসভাগুলিতে বিদ্যুৎ বিতরণ করা হয়। এরমধ্যে কেবলমাত্র কুষ্টিয়া পৌর কর্তৃপক্ষ ব্যতিত অন্য ১০টি পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের পরিমান যথাক্রমে-ঝিনাইদহ প্রায় ৫৩লাখ, চুয়াডাঙ্গা প্রায় ১১ লাখ, মেহেরপুর ৫৯লাখ, ভেড়ামারা প্রায় আড়াই কোটি, আলমডাঙ্গা প্রায় ৬১লক্ষ, কুমারখালী প্রায় সোয়া কোটি, কালিগঞ্জ প্রায় দেড় কোটি, কোটচাঁদপুর প্রায় সোয়া দুই কোটি, শৈলকুপা প্রায় সাড়ে ১৭ লাখ এবং মহেশপুর প্রায় আড়াই কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল অনাদায়ি বকেয়া আছে। ৫ থেকে ১০বছর সময়কালের মধ্যে এসব বকেয়া বিল আদায়ে পৌর কর্তৃপক্ষের বরাবর তাগাদা পত্র প্রেরণ করেও কোন ফল পাওয়া যায়নি।
আবাসিক বিদ্যুৎ প্রকৌশলী কুমারখালী তাপস কুমার সাহা জানান, পৌর নাগরিক সেবায় বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহের মতো খাতে বিদ্যুৎ ব্যবহার করেই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ তাদের জনসেবা নিশ্চিত করেন। এর বিনিময়ে এই প্রতিষ্ঠান নাগরিকদের নিকট থেকে যথারীতি সেবা করও আদায় করছেন। কিন্তু বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে এই প্রতিষ্ঠান প্রধানদের চরম অনীহা বা অবহেলার কারনেই দীর্ঘ প্রায় ১১ বছর ধরে অনাদায়ি প্রায় সোয়া কোটি টাকা বকেয়ার বোঝা আমাদের ঘারে চেপেছে।
ভেড়ামারা আবাসিক বিদ্যুৎ প্রকৌশলী আলিউল আজম বলেন, বকেয়া বিল আদায়ে বিদ্যুৎ বিভাগ নানাভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করেও এমনকি বিদ্যুৎ আদালত কর্তৃক বিল পরিশোধের জন্য লিগ্যাল নোটিশ দিয়েও কোন কাজ হচ্ছেনা। এমনকি এসব নিয়ে কথা বলতে গেলে নানাভাবে রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়তে হয়।
কুমারখালীর বিদ্যুৎ গ্রাহক দিলু কবীর বলেন, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবহারে গ্রাহকদের উপরও অনেক বড় দায়িত্ব রয়েছে। শুধু সরকারের কাছে বিদ্যুৎ চাইলেই হবে না। বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়া এবং সময়মত বিদ্যুৎ বিলটাও পরিশোধ করা দরকার। পৌরসভা বিদ্যুৎ ব্যবহার করে নাগরিকদের সেবা দিচ্ছে তার বিনিময়ে নিয়মিত কর আদায় করছে। তাহলে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকবে কেন ? যত সীমাবদ্ধতাই থাক না কেন এর জন্য দরকার শুধু আন্তরিক সদিচ্ছা।
এ বিষয়ে কুমারখালী পৌর চেয়ারম্যান সামসুজ্জামান অরুণ জানান, পৌরসভার জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে বকেয়া থাকায় এখন একসঙ্গে অনেক বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন যত চাপই দেয়া হোক না কেন এতোবড় অংকের বিল একসঙ্গে পরিশোধ সম্ভব নয়। ভেড়ামারা পৌর মেয়র শামীমুল ইসলাম ছানা বিদ্যুৎ বিল বকেয়ার কথা স্বীকার করেই বলেন, বহুদিনের পুরোন এই বকেয়া বিল তারপক্ষে একসঙ্গে এবং এককভাবে পরিশোধ করা সম্ভব নয়। মুঠোফোনে যোগাযোগ করে প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে প্রায় একই সমস্বরে একমত জানালেন অন্য ৮টি পৌরসভার মেয়রগণ।
পশ্চিমাঞ্চলীয় বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানী লি: এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আরিফুর রহমান বলেন, কুষ্টিয়ার সবগুলি সরকারী দপ্তর ও পাঁচটি পৌরসভার মধ্যে কুষ্টিয়া পৌরসভা যথারীতি সময়মত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করলেও ভেড়ামারা ও কুমারখালীসহ কুষ্টিয়া অঞ্চলের অধীন অন্য ৮টি পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে প্রায় সাড়ে ১১কোটি টাকা বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আদায়ে সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষও সব রকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বকেয়া পরিশোধে তারা আশ^স্ত করে কিস্তি সুবিধার দাবি করেছেন।