কুষ্টিয়ায় হঠাৎ করেই ইউরিয়া সার সংকট দেখা দিয়েছে। চাহিদার বিপরীতে সার সরবরাহ কম থাকায় এ সংকট দেখা দিয়েছে। এদিকে আমনের ভরা মৌসুমে চাহিদামত সার পাচ্ছেন না হাজার হাজার কৃষক। সার পেলেও গুনতে হচ্ছে বেশি অর্থ। এদিকে চাহিদার তুলনায় সার না থাকায় অনেক সাব ডিলার বেশি দামে সার বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা কৃষি অফিসার সেলিম হোসেন বলেন,‘ জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত আমাদের চাহিদা ছিল ৭ হাজার ১৮০ মেট্রিক টন। এর বিপরীতে আমরা পেয়েছি বিসিআইসি থেকে পেয়েছি মাত্র ৪ হাজার ৪ মেট্রিক টন। আমাদের ঘাটতি আছে ৩ হাজার ১৬৭ মেট্রিক। বিষয়টি জানিয়ে জেলা সার বীজ মনিটরিং কমিটিকে একটি চিঠি দিয়েছি। তারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
খামারবাড়ি সূত্র জানায়, জেলায় মোট ৮২ জন সার ডিলার আছে। সদরে আছে ২৩জন ডিলার। ৮২জন ডিলার সারের জন্য যে পরিমান অর্থ ডিও করেছেন তার বিপরীতে সার পাচ্ছেন অর্ধেক। এ জন্য সরবরাহে কিছুটা ঘাটতি আছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বিশেষ করে ইউরিয়া সারের সংকট দেখা দিয়েছে গ্রাম অঞ্চলগুলোতে। যে পরিমান সার প্রতি সপ্তাহে গ্রাম পর্যায়ের একজন ডিলারের পাওয়ার কথা তার থেকে অনেক কম সার পাচ্ছেন তারা। যারা বিসিআইসির মূল ডিলার তারা খুচরা ডিলারদের চাহিদা অনুযায়ী সার দিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এ সুযোগ ডিলাররা সাব ডিলারদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করছেন। ও খুচরা ডিলাররা কৃষকের কাছ থেকে বেশি মুনাফা করছেন।
কৃষি অফিস সুত্র জানিয়েছে, কুষ্টিয়া জেলায় মূলতঃ চিকন ইউরিয়া সারের চাহিদা বেশি কৃষকদের মাঝে। মোটা ইউরিয়া পর্যাপ্ত থাকলেও কৃষকরা চিকন ইউরিয়া ব্যবহারে ঝুঁকছেন। এ কারনে সারের সংকট তৈরি হচ্ছে। চিকন ইউরিয়া দ্রুত কাজ করলেও জমিতে থাকে অল্পদিন, আর মোটা ইউরিয়া ধীরে ধীরে কাজ করলেও জমিতে বেশি দিন থাকে।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বাঁধগ্রাম বাজারের সার ডিলার রাশিদুল ইসলাম বলেন, ‘ চলতি মাসে তার চাহিদা ছিল ৫৬ মেট্রিক টন। তিনি এর বিপরীতে মাত্র পেয়েছেন ৩৫ মেট্রিক টন। এখন আমনের ভরা মৌসুম চলছে। প্রথম ধাপে কৃষকরা সার দিয়েছেন, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের জন্য সার প্রয়োজন। তবে সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়ায় আমরা সার পাচ্ছি না। এ জন্য ঠিকাদারদের দুষছেন তিনি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সাব ডিলার বলেন,‘ মূল ডিলাররা ঘরে বসেই লাখ লাখ টাকা লাভ করছেন। তারা বস্তায় ৫০ থেকে ১০০টাকা বাড়িয়ে দিচ্ছেন। অতিরিক্ত যে টাকা নিচ্ছেন তার জন্য কোন রশিদ দিচ্ছেন না। বেশি জোরাজোরি করলে সার দিচ্ছেন না। বেশি দাম দিয়ে কিনে তাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
সার ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ বলেন,‘ এক মাস যাবৎ আমরা চিকন ইউরিয়া সার পাচ্ছি না। মোটা সার সরবরাহ করছে বাফার গোডাউন থেকে। কৃষকরা মোট ইউরিয়া ব্যবহার করতে চাই না। এ সুযোগে অনেক ডিলার বাইরে থেকে চিকন ইউরিয়া সার নিয়ে এসে বেশি দামে বিক্রি করছে। কৃষকরা বেশি দাম দিয়েই কিনছেন। চিকন সার না থাকায় আমরা মোটা ইউরিয়া বিক্রি করছি।’
আব্দালপুর গ্রামের কৃষক খলিল হোসেন বলেন,‘ বাজারে ইউরিয়া সারের সংকট আছে। যে পরিমান সার প্রয়োজন তা পাওয়া যাচ্ছে না। চিকন ইউরিয়াতো বাজার থেকে উধাও। যা পাওয়া যাচ্ছে তার দাম বেশি নিচ্ছে। সদর উপজেলায় এ বছর আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০ হাজার ৮০৩ হেক্টর। জেলায় ৮২ হাজার ৮৬৭ হেক্টর।
খামারবাড়ির উপ-পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ দেবনাথ বলেন,‘ চাহিদা অনুযায়ী সারের সরবরাহ কম। বিসিআইকে আমরা চিঠি দিয়েছি, চাহিদা অনুযায়ী যাতে তারা সার সরবরাহ করে। কিছু ডিলার আছে যারা সংকট সৃষ্টি করতে চাই। আমাদের কঠোর নজরদারি আছে। সার নিয়ে কেউ বাণিজ্য করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’