“আব্দালপুর গ্রামের গন্ডগোল-গ্যাঞ্জামের কারনে আমরা এসএসসি পরীক্ষার্থীরা চরম আতংকে দিন কাটাচ্ছি, আর কয়দিন পর পরীক্ষা অথচ পড়াশুনা বন্ধ হওযার উপক্রম, সেই সাথে এক অজানা শংকায় বিপন্নের মুখে আছি” বলছিলেন আব্দালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আফিয়া খানম। পুলিশ প্রশাসনের কাছে তার আবেদন- দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে এলাকাবাসীকে শংকামুক্ত করা হোক।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রক্তাক্ত জনপদ খ্যাত অঞ্চলের অংশ কুষ্টিয়া সদর উপজেলার চিহ্নিত ১১নং আব্দালপুর ইউনিয়ন আবারও অশান্ত হয়ে উঠেছে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গ্রামীণ অধিপত্যকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলে গত দেড় দশকে অন্তত: শতাধিক হত্যাকান্ড, সংঘর্ষ, হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটসহ ফসল নিধন অতি পরিচিত ঘটনা। এসব ঘটনায় সবসময়ই চরম বিপন্নের মুখে দাঁড়াতে হয় নারী-শিশু ও শিক্ষার্থীদের। তাৎক্ষনিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে সংশ্লিষ্ট পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতা থাকলেও আশ^স্ত হতে পারছেন না এলাকাবাসী।
স্থানীয় সূত্রমতে, সদ্য শেষ হওয়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটির জেরে গত ৬জানুয়ারী ভোরে আব্দালপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষ, হত্যাকন্ড, ঘরবাড়ি ভাংচুর, লুটপাটসহ সংগঠিত সহিংসতায় এক আতকিংত জনপদের রূপ নিয়েছে ইউনিয়নটি। স্থবির জনপদের হাট-বাজার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও নেই স্বাভাবিক চিত্র।
আব্দালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় সহকারী প্রধান শিক্ষক জিয়াউল হক দিলু জানান, দু’পক্ষের সংঘর্ষের জেরে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ব্যাহত ছাড়াও চরম শংকা যেন আরও কিছুর বিশেষ করে ছাত্রীদের। ভীতসন্ত্রস্ত অভিভাবকরা অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে জরুরী জিনিষপত্রসহ নিরাপত্তার সন্ধানে এলকা ছাড়ছে। এরই বিরূপ প্রভাবে স্কুলে আসছে না শিক্ষার্থীরা। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে এমন পরিস্থিতির স্থায়ী সমাধানের দাবি করেন এই শিক্ষক।
আব্দালপুর গ্রামের এই সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে কুষ্টিয়া জেলা আওয়ীলীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী বলেন, স্থানীয় দলাদলী বা আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এরা প্রায়ই রাজনৈাতিক প্রভাবকে ব্যবহার করে বসে। ঐ ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আলী হায়দার স্বপন এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা দুইজনই আওয়ামী লীগের। অথচ গত ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আলী হয়দার নির্বাচিত হওয়ার মধ্যদিয়ে তাদের মধ্যে কার্যত: গ্রুপিংটা প্রকাশ্য রূপ নেয়। বিদ্যমান এই গ্রুপিংই সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনের সময় আবার নতুন মাত্রায় প্রকট হয়। এবিষয়গুলি জানার পরও জেলা নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে যে উদ্যোগ নেয়া দরকার ছিলো সেখানে ঘাটতি থাকায় এই দু’পক্ষের সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির সমাধান হয়ে উঠেনি। ঘটনা যা হবার হয়েছে। খুব শীঘ্রই স্থানীয় দলীয় নেতাকর্মীদের ডেকে উদ্ভুত পরিস্থিতি নিরসনে উদ্যোগ নেয়ার কথা জানালেন তিনি।
ইসলামী বিশ^বিদ্যালয় (ইবি) থানার অফিসার ইনচার্জ রতন শেখ জানান, দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান এই সমস্যার সমাধানে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোপূর্বে অসংখ্যবার নানা উদ্যেগ নেয়া হয়েছে। সং্িশ্লষ্ট পক্ষগন তাৎক্ষনিক অঙ্গীকার করেও আবার একই ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে জানিয়ে এলাকায় দ্রুত শান্তি ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হবে একই সাথে ভয় বা আতংকের কারণে শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসার বাধা দুর করে স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে।
উল্লেখ্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন আ’লীগ সমর্থক দু’পক্ষের মধ্যে বাক-বিতন্ডা ও কথা কাটাকাটি ও চর থাপ্পরের ঘটনা হয়। আব্দালপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও আ’লীগ নেতা আলী হায়দার স্বপন ও ইউনিয়ন আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফার সমর্থক এরা। ওই দিনের জের ধরে গত ৬জানুয়ারী ভোরে আব্দালপুর নতুন বাজার গ্রামে গোলাম মোস্তফার কয়েক‘শ সমর্থক দেশীয় ধারালো অস্ত্র-শস্ত্রসহ হামলা চালায় আলী হায়দার স্বপনের এলাকায়। এসময় প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিহত হয় ইউপি চেয়ারম্যান আলী হায়দারের সমর্থক ও ইবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা হালিমের পিতা মঈনুদ্দিন বিশ্বাস (৫৮) এবং আহত হয় ১০জন। এসময় ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটে এলাকা জুড়ে।