কুষ্টিয়া জেলা কারাগারে উৎপাদন হচ্ছে কয়েদিদের পোশাক, তোয়ালে ও লুঙ্গি। কারাগারের ভেতরে চালু তাঁতেই চলছে এ কার্যক্রম। গত বছরের কুষ্টিয়া কারাগার ‘একতারা’ তৈরি করে দেশজুড়ে আলোচনায় আসে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কারা সুপার জাকের হোসেন গত বছরে এখানে যোগদানের পর বিভিন্ন প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে। এসব প্রশিক্ষনের মাধ্যমে অপরাধ সংশোধনও হচ্ছে আবার তাদের কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হচ্ছে। এর আগে জেলা প্রশাসক মো. জহির রায়হান জেলা কারাগার পরিদর্শনে এসে বন্দীদের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে জেনে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং বন্দীদের দিয়ে একতারা তৈরীর কথা জানান কারা সুপারকে। আমরা কারাবন্দিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে একতারা তৈরী করতে শুরু করি এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে তা সরবরাহ করি। সম্প্রতি লালন একাডেমীর অনুষ্ঠানে অতিথিদের বরণ করা হয় কারাবন্দীদের তৈরীকৃত একতারা দিয়ে।
এদিকে কুষ্টিয়া জেলা কারাগারে বন্দীদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সংশোধন করছে কর্তৃপক্ষ। প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর তাঁরা জামিনে মুক্ত হয়ে কেউ নিজে দোকান দিয়ে ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি মেরামত করে বেকারত্ব ঘোচাচ্ছে, আবার কেউ অন্যের দোকানে চাকরি নিয়ে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে। শুধু তাই নয় হাজতিদের বাধ্যতামূলক অক্ষর জ্ঞানের শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। যাতে টিপসই বাদ দিয়ে নুন্যতম অক্ষর জ্ঞান নিয়ে হাজতিরা নিজের নামটা স্বাক্ষর করতে পারেন।
কারা সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৮ সালে ২৯ একর জায়গার উপর কুষ্টিয়া জেলা কারাগারে ৬শ জন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন হলেও বর্তমানে পুরুষ-মহিলাসহ সাড়ে ৬শ হাজতি-কয়েদি অবস্থান করছে। বন্দি মহিলা ও পুরুষদেরকে বিভিন্ন কাজে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এসব কাজে সার্বিক তত্বাবধায়নে রয়েছেন জেলা কারাগারের সুপার জাকের হোসেন। তাকে সহযোগীতা করছেন জেলার মোস্তফা কামাল ও কারারক্ষী বনি আমিন নয়ন।
কুষ্টিয়া জেলা কারাগার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কারাগারের উৎপাদন বিভাগ যথেষ্ট সমৃদ্ধ। এখানকার তাঁত বিভাগে দুটি যান্ত্রিক তাঁত রয়েছে। এখান থেকে উৎপাদন হয় কয়েদিদের পোশাক, তোয়ালে ও লুঙ্গি। এর প্রসার ঘটাতে আরও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলেই জানালেন জেল সুপার জাকের হোসেন।
কারাগারের ভেতরে চালুকৃত যন্ত্রচালিত তাঁতে প্রশিক্ষণ দিতে আসা প্রশিক্ষকের মাধ্যমে ৩০ জন কারাবন্দি কাজ করছেন নিয়মিত। এছাড়াও এখানকার বন্দীদের হাতের কারুকাজে দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে বিভিন্ন ধরণের সামগ্রী। আর পুরো এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকবেন কারাবন্দিরা। এছাড়া সাজার মেয়াদ কমানো এমনকি মুক্তির পর এ পেশায় প্রতিষ্ঠার সুযোগ তো থাকছেই।
জেল সুপার বলেন, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে নয়, তারা এ কার্যক্রম চালু করতে যাচ্ছেন কেবল বন্দিদের প্রশিক্ষিত করতে। যাতে করে তারা নিজেরা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া এখানকার তৈরীকৃত লুঙ্গী, গামছা বিক্রির জন্য কারা অভ্যন্তরে ষ্টল দেওয়া হবে। যাতে করে বন্দীদের আত্মিয়স্বজনরা আবার সেগুলো ক্রয় করে বন্দীদের জন্য পাঠাতে পারে।
সম্প্রতি এসব পরিদর্শন করেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. জহির রায়হান।
এসময় তিনি কুষ্টিয়া জেলা কারাগারে বন্দীদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের কার্যক্রম পরিদর্শণ করেন এবং ভুয়ষী প্রশংসা করে তিনি বলেন, কুষ্টিয়া জেলা কারাগার প্রকৃত অর্থে সংশোধনাগার হয়ে উঠেছে। বন্দিদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে তারা নানান কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করছেন। উৎপাদন বিভাগ ছাড়াও রয়েছে কর্মমুখী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন বন্দিরা।
কারাগারে প্রশিক্ষণ পাওয়া অনেকেই মুক্তি পেয়ে নিজ নিজ পেশায় প্রতিষ্ঠাও পেয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এস এম জামাল