রাস্তা খারাপের অজুহাতে কুষ্টিয়া-মেহেরপুর সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে দুই জেলার মালিক সমিতি। যদিও নেপথ্যে আছে দুই সমিতির চাঁদা তোলা ও বাসের সংখ্যা বাড়ানো নিয়ে দ্বন্দ্ব। এক বছর ধরে এভাবে চলে আসছে। এমনকি যাত্রীবাহী ছোট যানবাহন চলাচলেও তারা বাধার সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। জেলা প্রশাসন বলছে, মেহেরপুর বাস মালিক সমিতির গোয়ার্তুমির কারণেই এই জনভোগান্তি।
গাংনীর একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন কুষ্টিয়ার আফজাল হোসেন। প্রতিদিন ৫৮ কিলোমিটার পথ অনেক কষ্ট করে তাকে যেতে হয়। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, দুই জেলার বাস মালিক সমিতির দ্বন্দ্বের কারণে নানা খোঁড়া যুক্তিতে হরহামেশা অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস বন্ধ রাখা এখন এ অঞ্চলের মানুষের গা-সওয়া হয়ে গেছে। মাঝপথে যাত্রী নামিয়ে হয়রানি করার ঘটনাও ঘটছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব দুর্ভোগ চলছে।
গৃহবধূ নূর মুর্শেদা অভিযোগ করেছেন, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া করে কুষ্টিয়া থেকে গিয়েছিলেন মেহেরপুরের কাথুলি গাড়াবাড়ি গ্রামে। ফেরার পথে একদল লোক তাদের গতিরোধ করে অটেরিকশা ভাড়া করে আসার কারণ জানতে চায়। তারা ৫০০ টাকা আদায় করে তারপর ছেড়ে দেয়। মেহেরপুর বাস মালিক সমিতির এমন সিদ্ধান্ত আছে বলে দাবি করে তারা।
বাস বন্ধ রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে মেহেরপুর জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ গোলাম রসুল বলেন, রাস্তা খারাপ ছিল বলে দুই জেলার মালিক সমিতির সিদ্ধান্তেই সরাসরি বাস বন্ধ করা হয়েছে। তবে এখন যেহেতু রাস্তা মেরামত হয়েছে, সেহেতু আমরা বসে শিগগিরই আবার বাস চালু করব। রাস্তায় অটো বা সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচলে বাধা দেয়া কিংবা টাকা আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা প্রশাসনের নির্দেশেই আমাদের শ্রমিকরা কিছুদিন করেছিল। এখন আর করে না। সব রাস্তায় আনসার নিয়োগ দেয়া আছে। তারাই এগুলো দেখাশোনা করে। মাস শেষে আমরা তাদের বেতন দিই।
তবে দুই সমিতির সিদ্ধান্তে বাস বন্ধ রাখার কথা অস্বীকার করেছেন কুষ্টিয়া বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম। তিনি বলেন, মেহেরপুর মালিক সমিতির নেতাদের বারবার অনুরোধ করলেও তারা রাজি হয়নি। এ ব্যাপারে দুই জেলার প্রশাসককে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানান তিনি।
এছাড়া রাস্তা খারাপের দাবিও নাকচ করেছেন কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, মিরপুর উপজেলার ভাঙ্গা বটতলা থেকে খলিশাকুণ্ডি পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার অনেক পুরনো হওয়ায় ছোটখাটো গর্ত ছিল, যার মেরামতের কাজ সিংহভাগই শেষ হয়েছে। তাছাড়া চলাচলে এ রাস্তা এতটাই অযোগ্য নয় যে, পরিবহন বন্ধ রাখতে হবে। অন্য সব ধরনের যানবাহন চলছে। অথচ কুষ্টিয়া-মেহেরপুর আন্তঃজেলা সরাসরি বাস বন্ধ। দুই জেলার মালিক সমিতির দ্বন্দ্বেই এটা হয়েছে।
রাস্তার ব্যাপারে নির্বাহী প্রকৌশলীর বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন কুষ্টিয়া-মেহেরপুর মহাসড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহনের চালকরা। এছাড়া যাত্রীদের পছন্দের পরিবহন ব্যবহারে বাধা দেয়ার নিন্দা জানিয়েছেন বাসচালকরা।
গত বছর রোজার ঈদের সময় মুজিবনগর ভায়া রাজশাহী রুটে কুষ্টিয়ার একটি বাস চালু নিয়ে মেহেরপুর বাস মালিক সমিতির সঙ্গে দ্বন্দ্বে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া মহাসড়কে সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে সেভাবেই চলছে।
দুই সমিতির দ্বন্দ্ব মিটিয়ে বাস চলাচল শুরু করার ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মো. জহির রায়হান বলেন, এরই মধ্যে মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা হয়েছে। দুই জেলার মালিক সমিতির নেতাদের নিয়ে বসে এর সমাধানে পদক্ষেপ নেয়া হবে। সাধারণ মানুষের ভোগান্তির জন্য তিনিও মেহেরপুর বাস মালিক সমিতিকেই দোষারোপ করেন।
এ ব্যাপারে মেহেরপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় মেহেরপুর বাস মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। দু-একদিনের মধ্যেই দুই জেলার নেতাদের নিয়ে একটা সমন্বয় সভা হবে।
মাহাতাব উদ্দিন লালন
কুষ্টিয়া