ছাত্রজীবনে বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্র হবার কল্যানে হতে পারতেন তিনি সরকারী বড় কোন আমলা। আবার তুখোড় খেলোয়াড় হবার কল্যানে হতে পারতেন পুলিশ কর্মকর্তা। সে অনুযায়ী তিনি একবার নয় দু’দুবার খেলোয়াড় কোটায় নিয়োগ পেয়েও পুলিশের ট্রেনিংয়ে না যাবার ইচ্ছা থেকে শেষ পর্যন্ত খেলাকেই জীবনের ধ্যান ও জ্ঞানের জগতে ছড়িয়ে দেন। তবে লেখাপড়াকে একেবারে সিকেই তুলে না রেখে একই সাথে আগে খেলা সময় সুযোগ বুঝে লেখাপড়াও চালিয়ে যান।
ঘটনার অবতারনা যাকে নিয়ে তিনি হলেন, কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা ‘ক্রীড়াঙ্গনের বাতিঘর’ চিত্তরঞ্জন রঞ্জন পণ্ডিত (৬০)। পিতার নাম মৃত গোবিন্দ পণ্ডিত। বাড়ী উপজেলার পৌরসভাধীন ৫ নং মিরপুর বাজার মহল্লায়।
ছাত্র জীবনে আন্তঃস্কুল ফুটবল প্রতিযোগীতার সাফল্যে তৎসময় এ উপজেলার ক্রীড়াঙ্গনে দেখভালের দায়িত্বে থাকাদের নজর পড়েন চিত্তরঞ্জন। সে সসময় একাধারে ফুটবল,ক্রিকেট ও গাদন খেলায় তার ছিল সমান পারদর্শিতা। তবে এলাকার মানুষ তাকে বেশি চেনেন ফুটবলার হিসাবেই।
২৩ নভেম্বর ১৯৫৭ সালে জন্ম নেয়া চিত্তরঞ্জন পণ্ডিত ১৯৭২ সালে মিরপুর পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন।
কুষ্টিয়ায় এইচএসসি ভর্তি হলে তাঁর ফুটবল পারদর্শিতায় মুগ্ধ হয়ে ১৯৭৪ সালে কুষ্টিয়ার মুসলিম হাইস্কুলের পক্ষে বয়স ও নাম লুকিয়ে একজন মুসলিম খেলোয়াড়ের পরিবর্তে চিত্তরঞ্জনকে দলভুক্ত করে নেয়।
সেবার চিত্তরঞ্জনের সুপার-ডুপার পারফর্মেন্সে মুসলিম হাইস্কুল খুলনা বিভাগ চ্যাম্পিয়ন হয়। পরে ঢাকায় নিয়ে যদিও ঢাকা বিভাগের সাথে ২-০ গোলে হেরে বিদায় নিতে হয়।
চিত্তরঞ্জনের খেলোয়াড়ী নামডাক যখন তুঙ্গে সে সময় ১৯৭৫ সালে ৩৫৬ টাকা মাসিক বেতনে খেলোয়াড় কোটায় পুলিশে চাকুরী হয়। ৩ মাস চাকুরী করার পর ট্রেনিংয়ের ডাক পড়লে ট্রেনিংয়ে যাবার ভয়ে চাকুরী ছেড়ে দেন।
১৯৭৬ সালে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে খেলোয়াড় কোটায় ৮০/৮৫ জন আবেদন করলে চিত্তরঞ্জন প্রথম হয়ে চাকুরী পান। মাসিক বেতন ৩০০ টাকা। এখানে তিনি ১ বছর চাকুরী করেন।
১৯৭৭ সালে আবার তিনি খেলোয়াড় কোটায় পুলিশে আবেদন করে চাকুরী পান। এ সময় চিত্তরঞ্জনের সাথে খেলোয়াড় কোটায় চাকুরী পেয়েছিলেন কুষ্টিয়া-৩ সদর আসনের সাবেক সাংসদ অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, নেক বাবলু,কুটু,মিলন, সনি ও মাসুম। মাসিক বেতন ছিল ৪ শত টাকা।
দুই দফা পুলিশে চাকুরী করলেও পুলিশের ইউনিফর্ম একদিনও গাঁয়ে লাগাননি। এবার তিনি পুরো এক বছর চাকুরী করার পর আবার ট্রেনিংয়ের ডাক পড়লে আবারো তিনি ইস্তফা দেন।
১৯৭৭/৭৮ সালে ঢাকার দ্বিতীয় বিভাগের ক্লাব বিজি প্রেসের পক্ষে খেলেছেন।
১৯৭৯ সালে খুলনার প্রথম বিভাগের দল খুলনা টেক্সটাইল মিলের পক্ষে খেলে অভাবনীয় সাফল্য দেখান। সেবছর তিনি ওই ক্লাবের পক্ষে ২ টি হ্যাট্রিকসহ ১৬ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা ও শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় হবার অনন্য কৃতিত্ব দেখান।
খুলনার খেলার অভাবনীয় সাফল্যের কল্যাণে ১৯৮০ সালে ঢাকার প্রথম বিভাগের ঐতিহ্যবাহী ওয়ারী ক্লাবে খেলার ডাক পান চিত্ত পণ্ডিত।
অনুশীলন বিবেচনায় ওয়ারী ক্লাবের প্রথম একাদশে সুযোগও ঘটে তাঁর। প্রথম ম্যাচেই খেলার সুযোগ ঘটে সে সময় দেশের অন্যতম সেরা ক্লাব মোহামেডান ক্লাবের বিরুদ্ধে। বাকীটা ইতিহাস।
১ নভেম্বর ১৯৯০ সালে তিনি মিরপুর মাহমুদা চৌধুরী কলেজে ১৫০৫ টাকা বেতনে শরীর চর্চা শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। ২২ নভেম্বর ২০১৭ সালে চাকুরী জীবন থেকে অবসর নেন। তখন তাঁর বেতন ছিল ২২ হাজার টাকা।
কৃতি এই ক্রীড়াবিদ, মিরপুর উপজেলা ক্রীড়াঙ্গনের দিকপাল চিত্ত রঞ্জন পণ্ডিত ব্যাক্তিগত জীবনে চিন্ময় পণ্ডিত (২১) নামের পুত্র ও ঋতু পণ্ডিত (১৬) নামের কন্যা সন্তানের জনক।