Thursday, March 28, 2024
প্রচ্ছদকুষ্টিয়াঅপরাধকুষ্টিয়ায় লাইব্রেরিয়ান ও শিক্ষকদের সিন্ডিকেটে বন্ধ হচ্ছে না নিষিদ্ধ নোট গাইড

কুষ্টিয়ায় লাইব্রেরিয়ান ও শিক্ষকদের সিন্ডিকেটে বন্ধ হচ্ছে না নিষিদ্ধ নোট গাইড

Published on

নতুন বছর শুরু হয়েছে। স্কুল-কলেজেও শুরু হয়েছে নতুন শিক্ষাবর্ষ। ইতোমধ্যে সরকার বিনামূল্যে সারাদেশের শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিয়েছে নতুন বই। কিন্তু বছর শুরু হলেও বিগত বছরগুলোর মতো এবারো নিষিদ্ধ নোট-গাইড বইয়ের অবাধ বাণিজ্য বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন অভিভাবক-শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকরা। নিষিদ্ধ এসব নোট-গাইড বইয়ের বাণিজ্যের সঙ্গে এক শ্রেণির শিক্ষকদের সহায়তায় সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে বলে মনে করেন অভিভাবকরা। তাদের ধারণা, ওই সিন্ডিকেটের কারণেই বন্ধ করা যাচ্ছে না অসাধু এই ব্যবসা। ফলে শিক্ষকদের সহায়তায় গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটটি প্রতিবছরই হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।

কুষ্টিয়াতে এইসব নিষিদ্ধ গাইড বই বিক্রয় জন্য করা হয়েছে একটি কমিটি। এই কমিটির মাধ্যমেই সিন্ডিকেট করে বিক্রয় করছে নিষিদ্ধ গাইড বই।

একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, ৫০% কমিশনে ওইসব নিষিদ্ধ গাইড বই ঢাকা থেকে কিনে নেয় কুষ্টিয়াতে ১৫% কমিশনে বিক্রয় করছে ওই সিন্ডিকটি।

জানা যায়, ১৯৮০ সালে একটি আইনে এসব বই ছাপা ও বাজারজাত করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু বাস্তবে এ আইন কার্যকর হচ্ছে না। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশেই অনেকটা প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে নোট-গাইড বই। এবছর জাতীয় সংসদ নির্বাচন, নির্বাচন পরবর্তীতে নির্বাচিতদের শপথ, মন্ত্রিসভা গঠনসহ নানাবিধ কারণে ব্যস্ত সরকারসহ আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাকারী বাহিনী। আর এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে চক্রটি বিপুল উদ্দীপনা নিয়ে বিক্রি শুরু করেছে এসব নোট-গাইড বই।

শিক্ষার্থীরা বলছে, স্কুল থেকেই এসব বই কিনতে অনেক সময় শিক্ষকরা উদ্বুদ্ধ করেন। শিক্ষকরা ক্লাসে এসে বুকলিস্ট দিয়ে দেন। ওই লিস্ট অনুযায়ী নোট, গাইড, গ্রামার ও ব্যাকরণ বই কিনতে বলা হয়। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়েই কিনতে হয় নির্দিষ্ট প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের এসব সহায়ক বই। অভিভাবকরা বলছেন, শিক্ষকদের পরামর্শ অনুযায়ী ছেলে-মেয়েদের ভালো ফলের আশায় বুকলিস্ট অনুযায়ী বই কিনতে হচ্ছে। এসব নোট বা গাইড বই কেনার সময় ভাবারও অবকাশ থাকে না নিষিদ্ধ কিনা। মূলত এক ধরনের বাধ্যবাধকতা থেকেই এসব বই কেনা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজ মার্কেটের পুথিঘর, পপি লাইব্রেরীসহ বিভিন্ন লাইব্রেরিতে প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ নোট ও গাইড বই। এসব লাইব্রেরিতে গ্যালাক্সি, লেকচার, অনুপম, জননী, জুপিটার, আদিল, দিগন্ত, ক্যামব্রিয়ান, গ্লোবাল, ক্লাস ফ্রেন্ড, অ্যাপোলো, সংসদ, ক্যাপ্টেন, সুপার, ছাত্রকণ্ঠসহ অন্তত ৫০টি পাবলিকেশন্সের বই বিক্রি হচ্ছে।

প্রতিযোগিতার এই বাজারে বেশি ব্যবসা করার জন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষকদের ম্যানেজ করছে কমিশন দিয়ে নিষিদ্ধ নোট ও গাইড বই এর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে এসব বই কিনতে অনেক সময় শিক্ষার্থীদের বাধ্যও করা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বই ব্যবসায়ী বলেন, এক সময় আমরা বোর্ড বই বিক্রি করতাম। বছরের শুরুতে বোর্ড বই বিক্রি করে সারা বছরের ব্যবসা হয়ে যেতো। কিন্তু এখন আমাদের দুরাবস্থা। সরকার গত ১০ বছর ধরে বিনামূল্যে বই বিতরণ করছে। ফলে আমাদের সেই ব্যবসা আর নেই। তাই কিছু গাইড বই বিক্রি করে টিকে আছি। কুষ্টিয়ার প্রতিটি বই এর দোকানে গাইড বইয়ের বাণিজ্য চলছে অবাধে। আর এসব বাণিজ্যের মূল চালিকাশক্তি স্থানীয় স্কুলগুলোর অসাধু কিছু শিক্ষক। তারা লাইব্রেরির সাথে যোগাযোগ রেখে কমিশনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বই কিনতে বাধ্য করছে। ফলে নিষিদ্ধ হলেও বন্ধ হচ্ছে না এসব নোট-গাইড বিক্রি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বছরের শুরুতেই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষকদের আকৃষ্ট করতে নানাভাবে প্রস্তাব দেয়। কখনো বিভিন্ন উপহার দিয়ে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বই কিনতে শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দিতে বলা হয়। কখনো কখনো ঘুষ দেয়া হয় নগদ টাকা। টাকার পরিমাণ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ভেদে ২০ হাজার থেকে লাখও ছাড়িয়ে যায়। এছাড়া সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়কে আসবাবপত্র দিয়ে থাকে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন অভিভাবক বলেন, আমাদের এলাকার বই বিতানগুলোতে বিভিন্ন কোম্পানির নোট, গাইড বই বিক্রি হচ্ছে। শ্রেণিভেদে দামের ভিন্নতা রয়েছে। তারা বলেন, অবাধে নিষিদ্ধ গাইড বই বিক্রির কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

পশ্চিম আব্দালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় এর এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, ‘আমরা আসলে অনেকটা বাধ্য হয়েই নোট, গাইড কিনি। কেননা, সৃজনশীল পদ্ধতিটা এখনো রপ্ত করতে কষ্ট হচ্ছে। তাছাড়া নোট, গাইড বাসায় থাকলে ছেলে-মেয়েরা মাঝে মাঝে নিজেরাই পড়তে পারে।’ তবে ভিন্নমত প্রকাশ করেন ঝাউদিয়া বাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয় এর ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া এক ছাত্রীর মা। তিনি বলেন, নোট-গাইড পড়ার কারণেই আমাদের ছেলে-মেয়ের মেধার বিকাশ হচ্ছে না। এগুলো পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা দরকার। নবম শ্রেণির এক ছাত্র বলে, ‘গত বছর যখন অষ্টম শ্রেণিতে উঠলাম, ক্লাস শুরু হওয়ার কিছুদিন পরই ক্লাসে এসে স্যার একটি বুকলিস্ট দিয়ে বললেন গাইড বই কিনলে এই লিস্ট দেখে কিনতে হবে। আমরাও সেই লিস্ট দেখেই বই কিনেছি।

এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান গণমাধ্যমকে বলেন, সারাদেশে প্রায় একই চিত্র বিরাজ করছে। নোট-গাইড বইয়ের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেয়া হবে। যারা এসব বই পড়াবে তাদের সবাইকে শাস্তির আওতায় আনা হবে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অবৈধ নোট ও গাইড বই বন্ধের দায়িত্ব আমাদের নয়। এমনকি অনুমোদনহীন বই পড়ানোর বিষয়ে তদারকি ব্যবস্থা বা বন্ধের কার্যক্রম এনসিটিবিতে নেই।’

সর্বশেষ

কুষ্টিয়ায় আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল সমর্থকদের সংঘর্ষে আহত ৭

কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল খেলা নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডার পর সংঘর্ষে জড়িয়ে অন্তত সাতজন...

কুষ্টিয়ায় শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানি, বরখাস্ত প্রধান শিক্ষককে পুলিশে সোপর্দ

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে পঞ্চম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানির মামলায় বরখাস্ত প্রধান শিক্ষককে বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর)...

কুষ্টিয়ায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২

কুষ্টিয়ায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় একটি শিশুসহ দু’জনের মৃত্যু হয়েছে।   বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে...

পাসপোর্ট সংশোধনে সরকারের নতুন নির্দেশনা

এনআইডির তথ্য অনুযায়ী পাসপোর্ট রি-ইস্যুর নির্দেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পাসপোর্ট...

আরও পড়ুন

কুষ্টিয়ায় ফিটকারী, রঙ, সোডা, হাইড্রোজ দিয়ে তৈরি হচ্ছে গুড় | ব্যবস্থাপকের কারাদণ্ড

কুষ্টিয়ার খোকসায় আখেঁর গুড়ের সঙ্গে মানব দেহের জন্য ক্ষতিকারক ফিটকারী, রঙ, সোডা, হাইড্রোজ ও...

ভারতীয় সিরিয়াল ‘সিআইডি’ দেখে কুষ্টিয়ার ফুল ব্যবসায়ী আবু তৈয়ব হত্যার পরিকল্পনা

কুষ্টিয়ার মিরপুরে ফুল ব্যবসায়ী আবু তৈয়ব (৫৪) হত্যার পর দ্রুততার সাথে রহস্য উদঘাটন করেছে...

কুষ্টিয়া দৌলতপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় বৃদ্ধ নিহত

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় সরোয়ার মালিথা (৭০) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায়...