Friday, April 19, 2024
প্রচ্ছদখুলনা বিভাগকুষ্টিয়াকুষ্টিয়া জেলার চার আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী

কুষ্টিয়া জেলার চার আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী

Published on

আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে কুষ্টিয়ার ৪টি আসনে এরই মধ্যে ভোটের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনয় প্রত্যাশীরা এরই মধ্যে জনসংযোগ বাড়াতে তৎপর হয়ে ওঠেছে। ভোটের মাঠে আছে, জাসদসহ আরো কয়েকটি রাজনৈতিক দল।

গত সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়ার ৪টি আসনেই আওয়ামী লীগ প্রার্থী নির্বাচিত হয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ কুষ্টিয়া সদর ও জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু কুষ্টিয়া ২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় নির্বাচিত হন। অন্য দুই আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী একে অপরের প্রতিদ্বন্দী। কুষ্টিয়া ৪(কুমারখালী-খোকসা) আসনে দলের মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থী আব্দুর রউফ জয়লাভ করলেও কুষ্টিয়া ১(দৌলতপুর) আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল হক চৌধুরী নির্বাচনে জয়লাভ করেন। এদিকে আওয়ামী লীগ নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে উন্নয়ন কাজকে গতিশীল করার ওপর জোর দিয়েছেন। আর আসন ফিরে পেতে তৎপর বিএনপি। অন্যদিকে জাসদ শরিক দল হলেও আওয়ামী লীগের সাথে সম্পর্ক মোটেও তাদের ভালো নয়।

কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর)

ভারতের কাটাতারের বেড়া সংলগ্ন কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসন। সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সীমান্তবর্তি এই উপজেলায় বেশ জোরেশোরেই বইছে ভোটের হাওয়া। জেলার বৃহত্তম এ উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে নির্বাচনী আসন। কুষ্টিয়া-১ আসনে ২০০৮ সালের আগ পর্যন্ত বিএনপির দাপট থাকলেও এখন তা আগের মত নেই। আওয়ামী লীগ সমর্থিত বর্তমান এমপি রেজাউল হক চৌধুরী ও সাবেক এমপি আফাজ উদ্দিন এক অপরের প্রতিদ্বন্দী।

এছাড়াও আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কুষ্টিয়া-১ আসনের জন্য আওয়ামী লীগের বিকল্প প্রার্থী খোঁজ হচ্ছে। আর এক্ষেত্রে নাম সর্বত্র আলোচনা হচ্ছে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্থানীয় এবং সংসদীয় মনোয়ন বোর্ডের অন্যতম সদস্য রশিদুল আলমের নাম।

এদিকে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপিতেও প্রার্থী নিয়ে জট দেখা দিতে পারে বলে জানা গেছে। উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লাকে দলের একক প্রার্থী মনে করেন বেশির ভাগ নেতাকর্মি। তবে ২০০৮ সালে মনোনয়ন পাওয়া জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আলতাফ হোসেন শেষ পর্যন্ত বাচ্চু মোল্লার গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারে। পাশাপাশি উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শহীদ সরকার মঙ্গল ও বিএনপির বর্ষিয়ান নেতা আলতাফ হোসেন, এ্যাডভোকেট রমাজান আলী সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন।

বড় দুই দলের বাইরে জাতীয় পার্টি থেকে সাবেক প্রতিমন্ত্রী কুরবান আলীর ছেলে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারন সম্পাদক ফারিয়ার জামিল জুয়েল নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এছাড়া উপজেলা জাসদের (ইনু) সাধারন সম্পাদক শরিফুল ইসলাম নির্বাচন করবেন।

কুষ্টিয়া -২ (মিরপুর-ভেড়ামারা)

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে এরই মধ্যে ভোটের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। গত সংসদ নির্বাচনে জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় এ আসনে নির্বাচিত হন। এ আসনের প্রতিদ্বন্দী আওয়ামী লীগ ও শরীক দল জাসদ।

এদিকে আসন ফিরে পেতে তৎপর বিএনপি। তবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে এ আসনে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর অন্যতম শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের নেতাকর্মীরা। দুই দলের কোন্দল এখন প্রকাশ্যে।

আগামী নির্বাচনে হাসানুল হক ইনু নৌকার প্রার্থী হলে তাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে মাহবুব-উল-আলম হানিফের ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে পরিচিত মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চান বলেও শোনা যাচ্ছে।

এ আসনে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাবেক সাংসদ অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রিয় দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার রাগিব রউফ চৌধুরী ও ঢাকা মহানগর মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন দলের প্রার্থী হতে পারে।

এখানে ২০ দলীয় জোটভুক্ত জামায়াত নেতা আব্দুল গফুরকে দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে জোটভুক্ত জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) কেন্দ্রীয় নেতা আহসান হাবিব লিংকন সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন।

কুষ্টিয়া-৩ (সদর)

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনের বাসিন্দা হলেও জোটগত নির্বাচনের কারণে গত নির্বাচনে আসনটি জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে ছেড়ে দিতে হয়।

ওই নির্বাচনে হানিফ কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন পান। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনএফের প্রার্থী লিটন হোসেন। লিটনকে সহজেই পরাজিত করে প্রথম বারের মত সাংসদ নির্বাচিত হন হানিফ। তবে আাগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে দলের হেভিওয়েট নেতা হানিফের জন্য নির্বাচনী বৈতরনী পার হওয়া অতটা সহজ হবে না বলে মনে করছেন অনেকে। বিশেষ করে দলীয় কোন্দলের কারণে এবার তাকে কিছুটা হলেও চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিতে পারে বলে মনে করেন দলীয় নেতারা।

তবে মাহবুবউল আলম হানিফ ছাড়াও এ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পৌর মেয়র আনোয়ার আলী ও আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা ব্যারিষ্টার এম আমীর উল ইসলামকে মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে দলীয় সুত্র জানিয়েছে।

কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে স্বাধীনতার পর বেশির ভাগ সময়ই এমপি নির্বাচিত হন বিএনপির প্রার্থীরা। তবে দীর্ঘ সময় পর ২০০৮ সালের আওয়ামী লীগের প্রার্থী খন্দকার রশীদুজ্জামান দুদু এমপি নির্বাচিত হন। বিএনপির প্রার্থী অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিনকে ধরাশয়ী করেন। এর আগে ২০০১ সালে অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ব্যারিষ্টার আমীর উল ইসলামকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন। তার আগে ১৯৯৬ সালে বিএনপি ও ৯১ সালেও সদর আসনে বিএনপির প্রার্থীরা নির্বাচিত হন। তবে সোহরাব উদ্দিনের বাইরেও বেশ কয়েকজন নেতাও প্রচারনা চালাচ্ছেন। তারাও মনোনয়ন চাইবেন দলের কাছে। জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক অ্যাডভোকেট শামীম উল হাসান অপু।

এছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে বেশ কয়েকজন প্রার্থী আলোচনায় আছেন। জাতীয় পার্টি জাফর গ্রুপ থেকে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাফরুল্লাাহ খান চৌধুরী লাহরি ও এরাশদ গ্রুপ থেকে জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি নাফিজ আহমেদ খান টিটু গনসংযোগ করছেন। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল ( জাসদ ইনু) থেকে নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রচারনায় নেমেছেন জেলা জাসদের সভাপতি গোলাম মহসিন। তিনি বিভিন্ন এলাকায় গনসংযোগ করছেন।

কুষ্টিয়া ৪ (খোকসা-কুমারখালী)

এই আসনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুর রউফ এমপি নির্বাচিত হন। আগামী নির্বাচনেও তিনি আওয়ামীলীগের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় গণসংযোগ করছেন।

তবে আগামী নির্বাচনকে ঘিরে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী তৎপর আছেন। ফলে দলীয় কোন্দলসহ বর্তমান এমপি আব্দুর রউফের সঙ্গে দলের প্রভাবশালী নেতাদের সৃষ্টি হয়েছে দূরত্ব ও টানাপোড়েন। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা এমপি আব্দুর রউফের বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়িয়ে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে মাঠে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

তারা হলেন- খোকসা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ সদর উদ্দিন খান, সাবেক এমপি সুলতানা তরুণ, জেলা আওয়ামীলীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক সুফি ফারুক, আওয়ামী লীগের কুমারখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান খান, কুমারখালী পৌরসভার মেয়র সামছুজ্জামান অরুণ, সাবেক জেলা পরিষদের চেয়াম্যান বর্ষীয়ান নেতা জাহিদ হোসেন জাফর। সম্ভাব্য এসব প্রার্থীর ক্লিন ইমেজের নেতা এবং এলাকায় বেশ জনপ্রিয়।

অপরদিকে এই আসনে ২০ দলীয় জোট থেকে সাবেক এমপি ও কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী গণসংযোগ করছেন। তিনি ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার পাশাপাশি বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে নুরুল ইসলাম প্রামানিক আনসার ও অ্যাডভোকেট গোলাম মহম্মদের নাম শোনা যাচ্ছে।

সর্বশেষ

কুষ্টিয়ায় আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল সমর্থকদের সংঘর্ষে আহত ৭

কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল খেলা নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডার পর সংঘর্ষে জড়িয়ে অন্তত সাতজন...

কুষ্টিয়ায় শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানি, বরখাস্ত প্রধান শিক্ষককে পুলিশে সোপর্দ

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে পঞ্চম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানির মামলায় বরখাস্ত প্রধান শিক্ষককে বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর)...

কুষ্টিয়ায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২

কুষ্টিয়ায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় একটি শিশুসহ দু’জনের মৃত্যু হয়েছে।   বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে...

পাসপোর্ট সংশোধনে সরকারের নতুন নির্দেশনা

এনআইডির তথ্য অনুযায়ী পাসপোর্ট রি-ইস্যুর নির্দেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পাসপোর্ট...

আরও পড়ুন

কুষ্টিয়ায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে হোটেলে, কলেজছাত্রীর মৃত্যুর পর যুবক আটক

কুষ্টিয়ায় একটি আবাসিক হোটেলে শয্যা বিশ্বাস (১৮) নামে এক কলেজছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায়...

ব্রাজিলের পতাকা টাঙাতে গিয়ে কুষ্টিয়ার মাদ্রাসা ছাত্রের মৃত্যু

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে সুপারি গাছে ব্রাজিলের পতাকা টাঙাতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে মিঠু শেখ (১৪) নামে...

যশোর বোর্ডে পাসের হার ৯৫% | কুষ্টিয়ায় শীর্ষে জিলা স্কুল, জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৪৩ জন

মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলে এ বছর যশোর শিক্ষা বোর্ডে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।...