Friday, March 29, 2024
প্রচ্ছদবাংলাদেশরাজনীতি‘খালেদা জিয়াকে মুক্ত করেই নির্বাচনে যাবে বিএনপি’

‘খালেদা জিয়াকে মুক্ত করেই নির্বাচনে যাবে বিএনপি’

Published on

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর নয়াপল্টনে অনুষ্ঠিত জনসভায় ব্যাপক শোডাউন করেছে দলটি। দীর্ঘদিন পর খোলামঞ্চে অনুষ্ঠিত বিএনপির এ জনসভা থেকে দলের নেতারা বলেছেন, খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করেই আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবেন তারা।

শনিবার (১ অক্টোরবর) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে আয়োজিত ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এ জনসভায় যোগ দিতে সকাল থেকেই ঢাকা ও আশপাশের জেলা থেকে দলটির নেতা-কর্মীরা নয়াপল্টনে জড়ো হতে শুরু করেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা জনস্রোতে রূপ নেয়। বিকেলের আগেই কাকরাইল মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত জনসভা বিস্তৃত হয়। জনসভা শুরু হওয়ার পর থেকেই বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। তারা তাদের বক্তব্যে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেন। তারা বলেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। মুক্ত খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে নির্বাচনে যাবে বিএনপি।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দি থাকায় ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিদেশে অবস্থান করায় এ জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এতে সভাপতিত্ব করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ একটি দেউলিয়া রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগ থেকে মানুষ দূরে সরে গেছে।

আওয়ামী লীগ দেশকে বাকরুদ্ধ করতে চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন সরকারের বিরুদ্ধে সত্য কথা বললেও তাকে কারাবন্দি করা হচ্ছে। রিমান্ডে নিয়ে তাদের অমানুষিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে।

এই সরকার অবৈধ দাবি করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশের মানুষের সমর্থন না নিয়েই সরকার ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। এই অবৈধ শাসনের অবসান ঘটাতে সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। বিএনপি চেয়াপারসন খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার আগেই এই জাতীয় ঐক্যের আহবান জানিয়ে ছিলেন।

সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার আগে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। সংসদ ভেঙে দিতে হবে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। নির্বাচন কমিশন পুর্নগঠন করতে হবে।

তিনি অারও বলেন, বিএনপি নির্বাচনে যেতে চায়। তবে খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে, নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে, সেনা মোতায়েন করতে হবে। এ ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না, জনগণ হতে দেবে না। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করেই বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে।

দেশের জনগণের প্রতি আকুল আবেদন জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার দায়িত্ব আপনাদেরই। আপনারা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করুন।

জনসভার প্রধান অতিথি ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন প্রস্তুতি নেয়ার আহবান জানান।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া গণতন্ত্রের মুক্তি হবে না। এজন্য সবাইকে আন্দোলনে নামতে হবে। আমাদের এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। দেশের মানুষ তাদের হারিয়ে আজ বাকরুদ্ধ। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে এখন রাজপথে লড়াই করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। লড়াই করেই আমরা আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনবো। মুক্ত খালেদা জিয়াকে নিয়েই আমরা নির্বাচনে অংশ নেব।

জনসভায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকারের খুঁটি নড়বড়ে হয়ে গেছে। সারাদেশে অবৈধ সরকারের পতনের আওয়াজ উঠেছে। কিন্তু এই অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা টের পাচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন জনকল্যাণে কাজ করছেন। আসলে তিনি জনগণের কল্যাণে নয়, আওয়ামী লীগের কল্যাণে কাজ করেন। তার জনগণকে প্রয়োজন নাই, তার প্রয়োজন ক্ষমতা। কারণ ক্ষমতায় থাকলে পদ্মা সেতুর টাকা লুট করা যায়, ব্যাংক লুট করা যায়, রিজার্ভ লুট করা যায়, সোনা লুট করা যায়, কয়লা, পাথর লুট করা যায়।

সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, দেশের জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া কোন নির্বাচন হবে না। তাকে মুক্তি দিতে হবে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। ইভিএম মানিনা, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।

দলের যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, এখন আমাদের আন্দোলন হচ্ছে সিইসি নুরুল হুদার বিরুদ্ধে। কারণ শেখ হাসিনা সরকার যা বলছে, যা করতে চাইছে হুদা কমিশন সেগুলো বাস্তবায়ন করছে। ১৯৯৬ সালের জনতার মঞ্চের নেতা নুরুল হুদার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। আর নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। তার নেতৃত্বেই বিএনপি নির্বাচনে যাবে, দেশের গণতন্ত্র মুক্ত হবে।

যুগ্ম মহাসচিব খাইরুল কবির খোকন বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে দেশে কোনো নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না।’আমরা সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলতে চাই, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। না হলে দেশের জনগণ আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের প্রিয় নেত্রীকে মুক্ত করে আনবে।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন বলেন, ‘আজ মিথ্যা মামলায় কারাগারে আমাদের নেত্রী। আমরা সরকারকে বলতে চাই, অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। না হলে এ দেশে আর কোনো নির্বাচন হবে না।’

যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরব বলেন, ‘খালেদা জিয়া এ দেশের মাটি ও মানুষের নেত্রী। অবৈধ সরকার অন্যয়ভাবে তাকে জেলে আটকে রেখেছে। আমরা তাঁকে কারাগারে রেখে আজ আমাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছি।আমরা বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মী খালেদা জিয়াকে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে কারাগার থেকে মুক্ত করে আনবে। তাঁর নেতৃত্বে আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারের পতন ঘটাব।’

স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু বলেন, ‘মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে কারাগারে আটকে রেখেছে এ অবৈধ সরকার। তারা চায়, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে আবারও একটা পাতানো নির্বাচন করতে। কিন্তু এ দেশের জনগণ খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে কোনো নির্বাচন হতে দিবে না। ‘সরকার যদি খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে বিএনপিকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করতে চায় তাহলে দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সেটি প্রতিহত করা হবে। আগামী নির্বাচন হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে মুক্ত খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে। এ ছাড়া এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না।’

জনসভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড.আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস-চেয়ারম্যান রুহুল আলম চৌধুরী, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আযম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, তৈয়মুর আলম খন্দকার, ফরহাদ হালীম ডোনার, যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দীন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন, ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আউয়াল খানসহ সংগঠনটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন এবং সমমনা সংগঠনসমূহের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ

কুষ্টিয়ায় আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল সমর্থকদের সংঘর্ষে আহত ৭

কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল খেলা নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডার পর সংঘর্ষে জড়িয়ে অন্তত সাতজন...

কুষ্টিয়ায় শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানি, বরখাস্ত প্রধান শিক্ষককে পুলিশে সোপর্দ

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে পঞ্চম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানির মামলায় বরখাস্ত প্রধান শিক্ষককে বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর)...

কুষ্টিয়ায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২

কুষ্টিয়ায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় একটি শিশুসহ দু’জনের মৃত্যু হয়েছে।   বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে...

পাসপোর্ট সংশোধনে সরকারের নতুন নির্দেশনা

এনআইডির তথ্য অনুযায়ী পাসপোর্ট রি-ইস্যুর নির্দেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পাসপোর্ট...

আরও পড়ুন

যশোরে প্রধানমন্ত্রী | ‘নৌকায় ভোট দিয়ে জয়ী করুন, যা চাইবেন তার চেয়ে বেশি দেব’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যশোরবাসীর কাছে আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার যশোর...

সাহারা খাতুন আর নেই

আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি...

আওয়ামী লীগের ৭১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ৭১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ (২৩ জুন)।...