প্রতিবারই স্ত্রী আসমা বেগম ধর্ষণের শিকার হন আর স্বামী বাদি হয়ে নিকটস্থ থানায় গিয়ে মামলা করেন। আজ এই শহর তো কাল ওই শহর। এভাবে ঢাকা, বাগেরহাট, নেত্রকোণা বা রাঙামাটি।
এভাবেই তাদের বছর কাটে জেলাঘুরে। বছরজুড়ে জেলায় জেলায় ঘুরেন আর মামলা করেন! মামলার কাহিনী কাকতালীয়ভাবে প্রতিবারই এক।
একই ফরমেটে মামলা করতে গিয়ে এবার কিন্তু ধরা খেলেন ‘বার বার ধর্ষণের শিকার’ আসমা বেগম। পাকড়াও করা হয় তার স্বামীকেও।
ধর্ষণ মামলার ফাঁদপাতা সেই দম্পত্তির কথা জানালেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কোতোয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন।
কীভাবে ধরা খেলেন?
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরের পর সিএমপির কোতোয়ালী থানায় কথিত এক ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করতে গেলে তাদের আটক করা হয়।
ওসি জানান, ধর্ষণের ফাঁদপাতা এই দম্পতি কখনও হোটেল বয়, কখনওবা হোটেলের মালিক, বা বাড়ির দারোয়ান অথবা বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ বা ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ আনেন।
আর স্ত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে নিজে বাদি হয়ে মামলা করেন স্বামী সবুজ মিয়া। পাহাড় থেকে সমতলে- সমানতালে মামলা করেছেন এই দম্পতি।
বৃহস্পতিতে শনির দশা
ওসি জানান, বৃহস্পতিবারও সিএমপির কোতোয়ালী থানায় যান আসমা ও সবুজ। অভিযোগ করেন, হোটেল লালদীঘির এক বয় আসমাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাদের অভিযোগের সাথে মুখের অভিব্যক্তির সাদৃশ্য না থাকায় সন্দেহ হয় পুলিশের।
এরপর তাদেরকে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে তাদের ভয়ঙ্কর প্রতারণার কথা। একেই হয়তো বলে শনির দশা!
প্রতারণার শুরু ২০১৫ থেকে
এই দম্পতি পুলিশের কাছে স্বীকার করেন, ২০১৫ সাল থেকেই এমন ভয়ঙ্কর প্রতারণা করে আসছেন তারা। প্রথমে কোনো মধ্যম মানের হোটেলে যান। সেখানে বাইরে বেরোনের কথা বলে ভাড়ায় নেয়া কক্ষের চাবি ম্যানেজারের কাছে দিয়ে যান। এরপর এসেই অভিযোগ করে বসেন, তাদের কক্ষে (রুমে) নগদ টাকা রাখা ছিল তা পাওয়া যাচ্ছে না।
এমন অভিযোগের পর প্রাথমিকভাবে হোটেল মালিকের মধ্যস্থতায় মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আপোষ করতেন তারা।
তবে প্রাথমিকভাবে আপোষে না আসলে সেই হোটেলের মালিক কিংবা বয়ের বিরুদ্ধে আসমাকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ তোলেন তারা। এরপর মামলা করেন থানায় গিয়ে। পরে আদায় করেন মোটা অংকের টাকা।
ওসি বলেন, তাদের এমন ভয়ঙ্কর মামলা পেয়েছি ঢাকা, বাগেরহাট, নেত্রকোণা এবং রাঙামাটিতে। মামলা করে এদের প্রত্যেকের কাছ থেকেই হাতিয়ে নিয়েছে মোটা অংকের টাকা।
এই মামলার মাস ছয়েক আগে কোতোয়ালী থানার স্টেশন রোডের এ ধরনের একটি অভিযোগ করে ১২ হাজার টাকা নিয়েছেন হোটেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। তবে সেটি থানা পর্যন্ত আসেনি।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, এক জেলায় বেশি মামলা করলে সন্দেহ করতে পারে। তাই এক জেলায় তারা বেশিদিন থাকেন না। দুয়েকটি মামলা করেই চট্টগ্রাম থেকে অন্য জেলায় সটকে পড়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। কিন্তু তার আগেই পুলিশের জালে আটকে গেছেন এই দম্পতি।
তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে পুলিশ মামলা করেছে বলে ওসি জানান।