করপোরেট এলাকায় চোখ ধাঁধানো অফিস সাজিয়ে ডিজিটাল মাধ্যম ও বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় লোভনীয় বেতনে চাকরি ও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা সম্বলিত বিজ্ঞাপন প্রচার করে প্রতারণা চালিয়ে আসছিল একটি চক্র। বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে চক্রটির সঙ্গে জড়িত ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি।
আটককৃতরা হলেন, মো. আদনান তালুকদার ওরফে আল আমিন (৪০), খন্দকার মো. আলমগীর হোসেন ওরফে মাছুম ওরফে মো. মোস্তাফিজুর রহমান, মো. জহুরুল হক ওরফে মো. শাহজাহান মিয়া, সৈয়দ সাহারিয়ার সোহাগ ওরফে মো. আবু শাফি তালুকদার ওরফে শাফিন ওরফে মালটুস, খালেদ মাহামুদ (৩২), রহমত উল্লাহ সৌরভ (২১), হাফিজুর রহমান আল মামুন (২৯), ইনছান আলী (৩৭), সিরাজুল ইসলাম (৩৫), নাদিম উদ্দিন (৩১), মেহেদী হাসান (২১), হানিফ কাজী (৪৫) এবং মো. মামুনুর রশিদ (৩৮)।
সিআইডি জানিয়েছে, সংঘবদ্ধ এই প্রতারক চক্রটি অত্যন্ত সুচতুর ও ধুরন্ধর প্রকৃতির। তারা পরস্পর যোগসাজশে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের নামে প্রতারণার উদ্দেশ্যে কর্পোরেট এলাকায় অফিস খুলে এবং চোঁখ ধাঁধানো ডেকোরেশন করে থাকে- যেন ভিকটিমের বিশ্বাস অর্জনে সহজ হয়। এরপর তারা ওয়েবসাইট, ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্টমিডিয়াতে লোভনীয় বেতনে চাকরি ও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা সম্বলিত বিজ্ঞাপন প্রচার করে।
এসব বিজ্ঞাপন দেখে ভিকটিম তাদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা ইন্টারভিউ নেয়ার নাটক করে আগ্রহী সবাইকে চাকরি হয়ে গেছে বলে জানিয়ে দেয়া হয়। সিকিউরিটি মানি, পেনশন স্কিম এবং ব্যক্তিগত গাড়ি দেওয়ার নামে প্রত্যেকের কাছে তিন থেকে ১৫ লাখ টাকা করে নিয়ে নেয়া। ভিকটিমরা নির্ধারিত তারিখে যোগদান করতে গেলে উক্ত প্রতিষ্ঠান তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখে এবং চাকরি দাতাদের সবার ফোন নম্বরও বন্ধ থাকে।
তিন চার মাস পরপর তারা অবস্থান পরিবর্তন এবং একেক সময় একেক নাম ব্যবহার করে চক্রটি দীর্ঘদিন যাবৎ এই প্রতারণা করে যাচ্ছে। এই চক্রটি গত ২০১৩ সাল থেকে এই পর্যন্ত ফরচুন গ্রুপ অব কোম্পানিজ, রেক্সন অব কোম্পানিজ, ইস্টার্ন গ্রুপ অব কোম্পানিজ, কেয়া গ্রুপ অব কোম্পানিজ, নেক্সাস গ্রুপ অব কোম্পানিজ, সানলাইট অব কোম্পানিজ, ম্যক্স ভিশন অব কোম্পানিজ নামে বহু মানুষকে প্রতারিত করেছে।
প্রতারক চক্রটি গত ২৩ ফেব্রুয়ারি এবং ১১ মার্চ একটি শীর্ষ দৈনিকে ইংরেজীতে যথাক্রমে ‘সানলাইট গ্রুপ রিক্রুটমেন্ট’ এবং ‘জব ভেকেন্সি সানলাইট গ্রুপ’ শিরোনামে দুটি বিজ্ঞাপন প্রচার করে। বিজ্ঞাপনের সূত্র ধরে চাকরি প্রার্থীরা আবেদন করে। চক্রটি তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ইন্টারভিউ নেয় এবং উচ্চ বেতন, পদ, ব্যক্তিগত গাড়ি ও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধাসহ চাকরি অফার করে। বিপরীতে সিকিউরিটি মানি, পেনশন স্কিম হিসেবে প্রায় ৫০ জনের কাছ থেকে আনুমানিক দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
উক্ত ঘটনায় পল্টন থানায় একটি মামলা রুজু হলে সিআইডি বুধবার (১১ জুলাই) রাজধানীর বিভিন্ন স্থান হতে চক্রটির মূল হোতা কথিত সানলাইট গ্রুপের এমডি পরিচয়দানকারী মো. আদনান তালুকদার ওরফে আল আমিনসহ মোট ১৩ জনকে গ্রেফতার করে।
প্রাথমিক তদন্তে জানা যায় আটক চক্রটির বিরুদ্ধে রমনা, পল্টন ও গুলশান থানায় আরো সাতটি মামলা রয়েছে। চক্রটির প্রতারণায় অর্জিত অবৈধ টাকা সিজ করার লক্ষ্যে মানি লন্ডারিং মামলা রুজু প্রক্রিয়াধীন আছে।