আমাকে বাঁচান। আমার খুব অসুবিধা হচ্ছে। আপনি আমাকে সহযোগীতা করেন ভাইয়া। এখন আমাকে বলছে ১ লক্ষ টাকা লাগবে। আমি এখানে অসুস্থ হয়ে পরেছি। খেতে দিচ্ছেনা এমনকি পানি পর্যন্ত দিচ্ছেনা। আমার নাম সাবিনা। আমার পিতার নাম রফিক। আমার বাসা কুষ্টিয়া থানা পাড়া পুলিশ ক্লাবের পিছনে।
বলে বললেন ভাইয়া আপনি একটু ফোন দিবেন আমাকে? বলতে বলতে ফোনটি কেটে গেল। কিছুক্ষন পরে তার ঐ নাম্বারে ফোন করা হলে সে জানায় আমি অনেক কষ্ট করে আপনার নাম্বারটি পেয়েছি। আপনি একজন সাংবাদিক। আপনার অনেকের সাথে জানা শোনা আসে। আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করুন। নাহলে আমি আত্মহত্যা করবো। আমাকে সৌদি সাহারা কোম্পানিতে চাকুরী দেবার কথা বলে সৌদিতে নিয়ে গিয়ে বিক্রয় করে দিয়েছে। সেখানে বাসা বাড়ীর কাজ করতে হয় আমাকে। প্রায় ই চুরির অপবাদ দিয়ে প্রচুর পরিমান মারধর করে। পরে জানতে পারি আমাকে ৩ মাসের জন্য ৭ হাজার টাকায় বিক্রয় করে দিয়েছে। কান্না জড়িত কন্ঠে এই কথা গুলাই বলছিল অসহায় দরিদ্র পরিবারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে বিদেশ পাড়ি জমানো এক নারী।
সংসারে অসুস্থ বাবা ও একটি ছোট্ট ৫/৬ বছরের পুত্র সন্তান রেখে দালাল মাধ্যমে সৌদি যান এই নারী। চোখে তার রঙিন স্বপ্ন। বাবাকে ভালো কোন ডাক্তার দেখিয়ে সুস্থ করবে, আর ছেলেকে ভালো কোন স্কুলে পড়া লেখা করিয়ে মানুষের মত মানুষ করবে! স্বপ্ন তার স্বপ্নই রয়ে গেল বেচে ফেরাটায় এখন তার জন্যে বড় চ্যালেঞ্জ। এদিকে থানা পাড়ার সাবিনার বাড়িতে গেলে সাবিনার মা, বোন, স্বামী ও তার ছোট্ট ছেলেটা ছুটে আসে। হাতে পাসপোর্ট ও ভিসার ফটোকপি। সাবিনার মা জানান, আমার মেয়ে পরিবারের একটু সচ্ছলতা ফেরাতে কুঠি পাড়া বড় ড্রেন এলাকার রাইজুলের স্ত্রী হালিমার সাথে যোগাযোগ করে সৌদি যান কোন টাকা খরচ ছাড়ায়। হঠাৎ গত কয়েকদিন আগে ফোন দিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পরে। এসময় সে বলে, আমার কাছে ১ লক্ষ টাকা দাবী করেছে দালালরা না হলে আমাকে তারা হত্যা করবে না হলে আমি নিজেই আত্মহত্যা করবো। এরপর আমি বিভিন্ন জায়গায় ছোটাছুটি করছি আমার মেয়েকে আপনারা বাচান। আমি ১ লক্ষ টাকা কোথাই পাবো?
এব্যাপারে দালাল হালিমা জানান, আমি ৫ হাজার টাকা কমিশনে এভাবে মানুষ পাঠায়, পরবর্তীতে কি হয় তার ব্যাপারে জানিনা। আমি যার কাছে পাঠায় তার নাম মোস্তফা তার অফিস ঢাকাতে। এর বেশি কিছু জানিনা। আমি কাউকে পাঠালে সে আমাকে ৫ হাজার টাকার বেশি দেইনা। সাবিনার বিষয়ে জানতে চাইলে হালিমা বলেন, গত ৫ই জানুয়ারি আমি তাকে পাঠায় এরপর কি হয়েছে আমি তার কিছুই জানিনা। কিন্তু পরে পরিবারের লোক এই ব্যাপারে জানালে আমি দালালের সাথে ফোনে কথা বলি। সে আমাকে বলে তাকে ফেরত চাইলে ১ লক্ষ টাকা লাগবে। এরপর সে দালাল মোস্তফার নাম্বার আমাদেরকে দিয়ে ফোন কেটে দেই। আমার প্রতিবেশি ১ বোনের মাধ্যমে আমার ঐ দালালের সাথে আমার পরিচয় হয়। এব্যাপারে হালিমার দেওয়া কথিত দালাল মোস্তফার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার এজেন্সির নাম বাংলাদেশ এক্সপোর্ট কর্পোরেশন, রেজিঃ নং-৮০৩। আমি এখানে এজেন্ট হিসাবে কাজ করি। আমার সাথে এম্যালি নামে কুষ্টিয়ার এক মেয়ের সাথে যোগাযোগ হতো সে আমাদেরকে বিভিন্ন সময় মেয়ে দিয়ে থাকে। আমাদের এজেন্সির চেয়ারম্যানের নাম হাসান। সৌদি আরব যেতে যাত্রীর যে খরচ হয়েছে তা দিয়ে আসতে হবে। আরো অনেক মেয়ে আছে তারাও একই সিস্টেমে সেখানে যায়।
এজেন্সি চেয়ারম্যান হাসানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ওখানে যেয়ে যখন ভালো না লাগে তখন বাড়ি আসার জন্য এধরণের অযুহাত দেখায়। তারা আমাদের কাছে এসে বললে আমরা এবিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, প্রতিটি মেয়েকে এই সব এজেন্সির মাধ্যমে পাঠানোর আগে ৩০ দিনের ট্রেনিং সহ যাবতীয় খরচ সরকার বহন করে। মেয়ে প্রতি ১৮০০-২০০০ ডলার পর্যন্ত পেয়ে থাকে এজেন্সি মালিক। তিনি আরো বলেন এবিষয়ে আপনারা আমাদের হেড অফিস নারী ব্যবস্থাপনা সেলে লিখিত অভিযোগ দিতে পারেন। তারা এবিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।