সময় ২০১৫ সালের মার্চ। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিংয়ে কেবল এমবিএ ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন হুসেইন এম ইলিয়াস, অপরদিকে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন সিফাত আদনান। চাকরি নামের সোনার হরিণের পেছনে না ছুটে নিজে থেকে কিছু একটা করার কথা ভাবলেন এই দুই তরুণ।
দুই বন্ধু মিলে ভাবনাকে বাস্তব রূপ দিতে ছোট পরিসরে শুরু করলেন ডেলিভারি এজেন্টের কাজ। দুই চাকার যান বাইসাইকেল, বাসায় গিয়ে ডকুমেন্ট পৌঁছে দিত। বর্তমানে জনপ্রিয় রাইড শেয়ারিং কোম্পানি ‘পাঠাও’- এর সূচনা লগ্নের গল্পটা ঠিক এমন।
এক সময় দুই বন্ধু ভাবলেন, দুই চাকার বাহন মোটরসাইকেল সেবা চালু করার। মোটরবাইক সহজেই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পৌঁছে দিবে যাত্রীদের। এতে একদিকে যেমন সময় বাঁচবে অন্য দিকে যাত্রীদেরকে গুণতে হবে না বাড়তি টাকা। সেই সময় ‘পাঠাও’ কোম্পানিতে যুক্ত হলেন কানাডায় পড়াশোনা করা কিশোয়ার হাশমী।
তিনজন মিলে শুরু করলেন দেশীয় ডেভেলপার দিয়ে অ্যাপস তৈরির কাজ। অ্যাপস তৈরির পর রাজধানীতে প্রথমবারের মতো স্মার্ট ফোনভিত্তিক মোটরবাইক সার্ভিস ‘পাঠাও’ চালু করেন তারা। ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে এই সেবা চালু করা হয়।
এই তিন তরুণ হলো-
১। হোসাইন এম ইলিয়াস, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি।
২। সিফাত আদনান, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (RUET)
৩। ফাহিম সালেহ, বেন্টলি ইউনিভার্সিটি, USA.
একদম শূন্য অবস্থান থেকে শুরু করা এই তিন তরুণ বর্তমানে ১০০ মিলিয়ন USD বা বাংলাদেশি টাকায় ৮২০ কোটি টাকা! বাংলাদেশের তরুণদের জন্য যা অনন্য রেকোর্ড। সম্পদ বলতে কেবল তিনটি বাই সাইকেল নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিল তারা।
নিজের সততা আর পরিশ্রমের মাধ্যমে তারা অল্প সময়েই সফলতা পেতে শুরু করে। তাদের সফলতা দেখে বিভিন্ন বিদেশি ইনভেস্টররা তাদের ব্যবসায় ইনভেস্ট করে। যার ফলাফল স্বরূপ এত কম সময়ে এই তিন তরুণ ১০০ মিলিয়ন ডলারের মালিক হতে পেরেছে।
ইন্দোনেশিয়াভিত্তিক ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম প্রতিষ্ঠান গো-জেকসহ বিভিন্ন দেশের কয়েকটি কোম্পানি হতে দ্বিতীয় রাউন্ডের বিনিয়োগ শেষে পাঠাও-এর অর্থমূল্য ৮২০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। গো-জেক ছাড়া দ্বিতীয় রাউন্ডে বিনিয়োগকারী কোম্পানিগুলো হলো, ওপেনস্পেস ভেনচারস, ওসাইরিস গ্রুপ এবং ব্যাটারি রোড ডিজিটাল হোল্ডিংস।
তবে এই বিনিয়োগের পরিমাণ কতো তা প্রকাশ করা হয়নি। যদিও শোনা গেছে, পাঠাও অন্তত ২৫০ কোটি টাকা ফান্ডিং আশা করেছে।বিনিয়োগের পর কোম্পানি স্টেটমেন্ট অনুযায়ী, পাঠাও-এর মূল্য ১০০ মিলিয়ন ডলার বা ৮২০ কোটি টাকা।
পাঠাও-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হুসেইন মো. ইলিয়াস বলেছেন, বিনিয়োগের টাকা ব্যবহার করে তারা আরও শহরগুলোতে রাইড শেয়ারিং, ফুড ডেলিভারি ও পাঠাও-পে অনলাইন পেমেন্ট সুবিধা চালু করবেন। পাঠাওতে সিরিজ-এ ফান্ডিং করার জন্য যে সকল আন্তর্জাতিক কোম্পানির কাছে পাঠাও আবেদন করেছিল তার মধ্যে রাইড শেয়ারিং জায়ান্ট গো-জেক অন্যতম।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পাঠাওতে সিরিজ-এ বিনিয়োগে এগিয়ে আসে গো-জেক। পরে নভেম্বর মাসেই গো-জেক পাঠাওতে বিনিয়োগ শুরু করে। তখন তারা ২০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করেছিল। তবে পাঠাও শুরু করার জন্য সিড মানি দিয়েছিল ব্যাটারি রোড ডিজিটাল হোল্ডিংস। ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে এই অর্থ দেয় তারা।
তবে তখন কোম্পানিটি কত টাকা বিনিয়োগ করেছিল তা জানা যায়নি। সিরিজ-বি ফান্ডিং পর পাঠাও পরবর্তীতে শেয়ার বাজারে প্রবেশ করে কি না তা দেখার বিষয়-বলছেন বিশ্লেষকরা। কিছু করতে হবে এমন ভাবনা হতে ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে দুই বন্ধু হুসেইন মো. ইলিয়াস ও সিফাত আদনান ৩টি বাই সাইকেল নিয়ে নেমে পড়েন পণ্য ডেলিভারির কাজ করতে।
কার্যক্রম শুরু হলো ‘পাঠাও’ নামে। কিছুটা সফলতা পাওয়ার পর ডেলিভারির বাহনে আসে কয়েকটি মোটর সাইকেল। দুই বন্ধু চিন্তা করতে লাগলেন এই বাহন আরও কী কী কাজে লাগানো যায়।আর এমন ভাবনা হতেই ২০১৬ সালের শুরুর দিকে বাইকগুলোতে যাত্রী পরিবহন শুরু হয়।
দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা রাখতে যাচ্ছে পাঠাও। অ্যাপের মাধ্যমে বাইক, কার ও খাবার সেবাদাতা এই প্রতিষ্ঠান এবার নেপালে কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে। দেশি রাইড শেয়ারিং স্টার্টআপ হিসেবে এটিই কোনো প্রতিষ্ঠানের বিদেশে কার্যক্রম শুরু করার ঘটনা। পাঠাও কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শিগগিরই বিষয়টির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে তারা।