প্রতিষ্ঠার ৪ দশক পেরিয়ে ৪১ তম বর্ষে পদার্পণ করেছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়টি। নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে ইতিমধ্যে ৪০টি বছর অতিক্রম করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বর্তমানে দেশের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যিালগুলোর মধ্যে অন্যতম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।
৪১ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন চত্তর, আবাসিক হল ও বিভিন্ন ভবনগুলো। শুক্রবার বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের সামনে জাতীয় সঙ্গীত পাঠের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ভিসি অধ্যাপক ড. হারুন-উর-রশিদ আসকারী। এসময় বিশ্ববিদ্যলয়ের পতাকা উত্তোলন করেন প্রোভিসি অধ্যাপক ড. শাহিনুর রহমান। পরে প্রশাসন ভবন চত্তরে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচীর উদ্বোধন করা হয়।
ছেলেরা বাহারি রঙের পাঞ্জাবি আর মেয়েদের কপালে লাল টিপ সঙ্গে লাল রংয়ের শাড়ি। চারিদিকে রঙিন পতাকা, লাল ও নীল ব্যানারে শিক্ষার্থীদের ছুটে চলা। কারো মাথায় বাহারি ক্যাপ, কারও হাতে ঢোল ও তবলা। চারিদিকে উৎসবের আমেজ। কারণ ভালোবাসা, আবেগ ও অনুভূতির ১৭৫ একরের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪১তম জন্মদিন আজ শুক্রবার (২২ নভেম্বর)। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মদিন উপলক্ষে নবরুপে সেজেছে পুরো ক্যাম্পাস, সেই সঙ্গে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরাও।
বছরের এই দিনটির অপেক্ষায় থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ হাজার শিক্ষার্থী। সেই সঙ্গে অপেক্ষায় থাকে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। দিনের শুরুতেই শিক্ষার্থীরা রুচিসম্মত পোশাক পরে নিজ বিভাগে উপস্থিত। গন্তব্য বিভাগের হয়ে আনন্দ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ। বাংলা, আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট, ভূগোল ও পরিবশে বিদ্যা বিভাগসহ সকল বিভাগ, আবাসিক হল, প্রশাসন, প্রকৌশল অফিস নিজস্ব ব্যানারে আনন্দ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে।
শোভাযাত্রায় ঢোল ও তবলার তালে চলে জন্মদিনের স্লোগান। শোভাযাত্রাটি ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে প্রশাসন ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে কাটা হয় ৪১ পাউন্ডের একটি কেক। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন উপাচার্য অধ্যাপক হারুন উর রশিদ আসকারী, উপ উপাচার্য অধ্যাপক শাহিনুর রহমান এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সেলিম তোহা।
এ সময় ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম আব্দুল লতিফ, ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টর অধ্যাপক পরেশ চন্দ্র বর্ম্মণ, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক সরওয়ার মুর্শেদ, বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সাইদুর রহমান, খালেদা জিয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক রেবা মন্ডল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতিত্ব করেন ৪১তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদ্যাপন উপ-কমিটির আহ্বায়ক ও ছাত্র-উপদেষ্টা এবং প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্ম্মণ।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-উর-রশিদ আসকারী বলেন, বিশ্ববিদ্যালটিকে আন্তর্জাতিক মানের হিসেবে দেখতে চাই। যা আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সমাবর্তনের সময় ঘোষণা দিয়েছিলাম। সেই প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। আশা করছি, বিশ্ববিদ্যালয়টি শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষা ও গবেষণায় আন্তর্জাতিক মাত্রা পাবে।
তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়টিকে সম্পূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে মেগা প্রকল্প গৃহিত হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ৮৫ শতাংশ আবাসন সংকট সমাধান হবে। ফলে আমাদের পরিবহন ও বাজেট ঘটতির উপর চাপ কমবে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আজিজুল হক তানজীম বলেন, অল্পদিনেই বুকের একপাশে একটি নাম জায়গা করে নিয়েছে। সেই নাম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। তাই এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে গাইবো, নাচবো আর আনন্দ করবো।
একই রকম অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী নাসরিন বলেন, ক্যাম্পাস জীবন যে কত মধুর তা বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়লে বুঝতাম না। মাতৃভূমিকে যেমন মা বলা হয় তেমনি ১৭৫ একরের এই ক্যাম্পাসটিও আমার মায়ের মতো।