বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর এক বন্ধুর মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার গাড়িচালকের চাকরি পান মাহাবুবুর রশিদ। কিছুদিন পর ব্যক্তিগত দেহরক্ষীর দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে। ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার পর যখন গুলিবর্ষণ করা হচ্ছিল, তখন শেখ হাসিনাকে আড়াল করে রেখেছিলেন তিনি। পিঠে গুলি লাগার পরও শেখ হাসিনাকে গাড়িতে তুলে দিয়েছিল তিনি।
ছেলের এমন আত্মত্যাগে গর্ববোধ করেন বাবা হারুন অর-রশিদ ও মা হাসিনা বেগম। তাঁদের এখন একটাই চাওয়া, ছেলের খুনিসহ সেদিনের হত্যাকাণ্ডে জড়িত ঘাতকদের বিচার। মরার আগে আসামিদের ফাঁসি দেখে যেতে চান তাঁরা।
কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার ফুলবাড়ী গ্রামে মাহবুবের পিতৃভিটায় গিয়ে দেখা যায়, মাহবুবের মা হাসিনা বেগম (৬৫) বয়সের ভারে তার শারীরিক অবস্থা দিন দিন খারাপ হতে চলেছে।
২০১৪ সালে সরকার কর্তৃক দেয়া ৫ লক্ষ টাকার সঞ্চয় পত্রের মাসিক লাভের টাকায় দিন চালায় তার বাবা-মা।
তিনি বলেন, ‘এই মাস (আগষ্ট) আসলিই সামবাদিকরা (সাংবাদিক) আইসে আরো জ্বালা বাড়াই (বাড়িয়ে) দেয়। কেউ কি আমার ছেলেকে আইনে দিতি পারবি। সারা বছর আমার কেউ তালাশ নেয় না, আমি কিরম আছি। যা যাওয়ার তো আমারই গ্যাছে আপনারা কি ফিইরি দিতি পারবেন।’ মাহবুবের অসু¯’ মায়ের খেদোক্তির উত্তর কারোরই জানা নেই।
হামলার কিছুদিন আগে মাহবুবকে একটি ঘড়ি উপহার দিয়েছিলেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। কয়েকদিন ব্যবহার করে স্মৃতিস্বরূপ মায়ের কছে রেখে দেন তার শহীদ সন্তান। আগষ্টের ২১ আসলেই মা ঘড়িটি বুকে চেপে কেঁদে ওঠেন আর মাঝে মাঝে মূর্ছা যান।
মাহাবুবের বাবা হারুন-অর-রশিদ বলেন, সংসারের সবকিছুতেই ছেলের স্পর্শ খুঁজে ফেরেন মাহাবুবুরের মা। ছেলের স্মরণে বাড়িতে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছেন তিনি।
হারুন-অর-রশিদ বলেন, আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই, বিচার হলে আমি মরেও শাান্তি পেতাম। এছাড়া তিনি মাহাবুবের নামে ১টি রাস্তা ও কবরস্থান এর চারপাশ প্রাচীরের দাবী করেন।
মাহবুবের স্ত্রী শামীমা আক্তার আছমা ও তার দুই ছেলে আশিক ও রবিন ঢাকাতে থাকে। প্রথম প্রথম মাহবুবের মা-বাবার সাথে যোগাযোগ রাখলেও এখন আর যোগাযোগ রাখেন না। আশিক বুয়েট থেকে পাশ করেছে ও রবিন ঢাকাতে মেডিক্যালে পড়াশোনা করে।
মাহবুবের পরিবারের হালচিত্রের কথা সর্ম্পকে আওয়ামী লীগের জেলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সদর উদ্দিন খান বলেন, ‘২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত মাহাবুব আমাদের গর্ব। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রথম থেকে মাহবুবের বাবা-মা, স্ত্রীসহ পরিবারকে দায়িত্ব নিয়ে বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করে আসছেন। তার ছোট ভাইকে উপজেলা পরিষদে চাকরি দেওয়া হয়েছে, বোনকে দেয়া হয়েছে জেলা প্রশাসক এর দপ্তরে চাকরি। আমি ব্যক্তিগত ভাবে ও আমরা দলের পক্ষ থেকে তার পরিবার সাহায্য করে যাচ্ছি।তাছাড়া এ ধারা চলমান থাকবে। তার নামে একটি রাস্তা করার প্রক্রিয়া চলছে। ২১ আগষ্ট উপলক্ষ্যে দলের পক্ষ থেকে উপজেলার বাসস্ট্যান্ডে আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিল এবং কাঙ্গালী ভোজের আয়োজন করা হয়েছে।’
এ ব্যাপারে নব যোগদানকৃত উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সাঈদ মোমেন মজুমজার বলেন, ‘২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলায় নিজের জীবন দিয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে রক্ষা করে যে অবদান রেখেছে আমরা তা শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করি। আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি।জেলা প্রশাসক স্যারের সাথে ও উপজেলা চেয়ারম্যান এর সাথে পরামর্শ করে তার পরিবারের জন্য সরকারি ভাবে যতটুকু সহযোগিতা করার করব এবং সাহায্য সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।’