ডাঃ মোঃ হোসেন ইমাম : আমাদের শরীরের পুরো শক্ত কাঠামো খনিজ পদার্থের দ্বারা গঠিত। এই শক্ত কাঠামোর পতিটি ইউনিট হল হাড়। মানুষের শরীরের কাঠামো ২০৬ টি হাড়ের মাধ্যমে তৈরি। হাড় গঠনের জন্য প্রয়োজন হলো প্রধানত ক্যালসিয়াম ও ফসফেট। হাড়, জোড়া ও মাংসপেশি ইত্যাদি মিলে পূর্ণাঙ্গ মানব দেহ গঠিত হয়। হার ও জোড়াগুলো একটি নির্দিষ্ট দিকে ও নির্দিষ্ট নিয়মে নড়াচড়া করতে পারে। এই নির্দিষ্ট নিয়মে নড়াচড়া করতে পারে। এই নির্দিষ্ট নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটলেই হাড় ভেঙে যেতে পারে।
কেন হাড় ভাঙে?
সাধারণত বড় ধরনের আঘাতের কারণে হাড় ভেঙে যেতে পারে। যেমন গাছ থেকে পড়ে যাওয়া এটা সাধারণত ছোট ডানপিটে ছেলেদের ক্ষেত্রেই বেশি দেখা যায়। আর আমের মৌসুমে এমনটি খুবই স্বাভাবিক। মগডালে পাকা আম পাড়তে গিয়ে অনেকেই হাত পায়ের হাড় ভেঙে ফেলে। আছাড় খেয়ে পড়ে গেলে রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটলে মারামারি করার কারণে হাড় ভেঙে যেতে পারে। হাড়ের মধ্যে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কমে গেলে হাড়ের মধ্যে ফসফেট এর পরিমাণ কমে গেলে, কিছু কিছু রোগ যেমন অস্টিওপরোসিস, বোন ক্যান্সার ইত্যাদি কারণে হাড় ভেঙে যেতে পারে।
প্রকারভেদঃ
সাধারণত দুইভাবে হাড় ভাঙতে পারে। যথা- ক্লোজড ফ্রাকচার: এক্ষেত্রে হাড় ভেঙে গেলেও তা চামড়া ভেদ করে উঠতে পারে না, অর্থাৎ কোন রক্ত বের হয় না। ওপেন ফ্রাকচার: এক্ষেত্রে আক্রান্ত হাড়টি ভেঙে গিয়ে তা চামড়া ভেদ করে বেরিয়ে আসে অর্থাৎ এখানে রক্ত বের হওয়া অনিবার্য।
হাড় ভাঙলে যে উপসর্গ দেখা যাবে তা হলঃ
ভাঙা স্থানে ব্যথা হয়, আক্রান্ত স্থানটি ফুলে যায়, আক্রান্ত স্থানটি লাল হয়ে যায়, অঙ্গটির স্বাভাবিক অবস্থা নষ্ট হয়ে যায়, আক্রান্ত স্থানটি ধরলে রোগী খুব ব্যথা অনুভব করে, হাত বা পা ভাঙলে অনেক সময় অংশের নিচে নাড়ির সস্পন্দন বন্ধ হয়ে যায়, ভাঙা অংশটি নাড়ালে এক ধরনের শব্দ অনুভূত হয়, আক্রান্ত স্থানটি থেকে রক্ত বের হওয়া, এমনকি রক্ত বের হওয়ার জন্য রোগী শকে চলে যেতে পারে।
হাড়ভাঙ্গার পর সাথে সাথে কি করবেন?
যদি ক্লোজ ফ্রাকচার হয়, অর্থাৎ রক্ত যদি বের না হয় তবে কিছু ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে RICEN থেরাপি বহুল প্রচলিত। তা হলো R=Rest. আক্রান্ত স্থানটিকে বিশ্রামে রাখতে হবে। I=Ice therapy বা বরফ লাগাতে হবে। C=Crepe bandage দিয়ে নড়াচড়া বন্ধ করানো। E=Elevation অর্থাৎ আক্রান্ত অঙ্গটি একটু উঁচুতে রাখতে হবে। যাতে অঙ্গটি হৃদপিণ্ড থেকে উপরে থাকে। N=NS AID দিতে হবে অর্থাৎ বেদনানাশক ওষুধ দিতে হবে। এরপর কাছাকাছি কোন ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে বা নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজন হলে অর্থপেডিক ডাক্তার এর কাছে পাঠাবেন। তিনি রোগীর অবস্থা অনুযায়ী প্লাস্টার করবেন বা প্রয়োজনীয় ঔষধ দিবেন।
Open Fracture এর ক্ষেত্রে রোগীর রক্ত বন্ধ করার জন্যঃ
ভাঙা অংশের ওপরের দিক একটি রশি দিয়ে বেঁধে দিতে হবে এবং ভাঙ্গা অংশ সুন্দরভাবে আবৃত করে বেঁধে দিতে হবে। ভাঙ্গা স্থানে ঠান্ডা বা বরফ দেয়া যেতে পারে। তবে যত শীঘ্রই সম্ভব অর্থপেডিক ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। তিনিই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। এক্ষেত্রে সাধারণত অপারেশন করার দরকার হয়। ব্যথানাশক ওষুধের পাশাপাশি এন্টিবায়োটিক অর্থাৎ জীবাণুনাশক ওষুধও প্রয়োজন।
অপারেশন করার পর বা প্লাস্টার করার পর কি করবেন?
প্লাস্টার করার পর আক্রান্ত অঙ্গ সাধারন্ত ফুলে যায়। এই ফোলা কমানোর জন্য অঙ্গ কে একটু উঁচুতে রাখতে হবে। প্লাস্টার করা অংশের ও ওপরের জোড়া ও নিচের জোড়াকে রোগী নিজে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নড়াবেন বা প্রয়োজনীয় ব্যায়াম করবেন। এতে ফোলা কমে যাবে এবং রক্ত চলাচল বেড়ে যাবে। হাত বা পায়ের যে কোনো হাড় ভেঙে গেলে এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়া খুবই জরুরী। তা নাহলে ভাঙা অংশের কাছাকাছি জোড়া শক্ত হতে পারে।
প্লাস্টার খোলার পর কি করবেন?
প্লাস্টার খোলার পর প্রথম দেখতে হবে ভাঙ্গা হাড় ঠিকমতো জোড়া লেগেছে কিনা। জোড়া না লাগলে সংশ্লিষ্ট ডাক্তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। জোড়া লাগলো দেখতে হবে কোন মাংসপেশি শুকিয়েছে কিনা। শুকিয়ে গেলে ওই মাংসপেশির জন্য নির্ধারিত ব্যায়াম করতে হবে। কোন জোড়া শক্ত হলে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যায়াম ও ফিজিওথেরাপি গ্রহণ করতে হবে। এজন্য একজন ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। নতুবা রোগী পঙ্গু হয়ে যেতে পারে। তাহলে দেখা যাচ্ছে হাড় ভাঙ্গার পর থেকে রোগীর প্রতি বিশেষ যত্নবান হতে হবে। তাই আসুন হাড় ভাঙ্গার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করি এবং রোগীকে পঙ্গুত্ব থেকে রক্ষা করি।