ছবির এই মানুষটির নাম আব্দুস সাত্তার (৫৬)। তিনি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা কটন ইউনিট অফিসার।
আব্দুস সাত্তার নামের এই কর্মকর্তা ২০০৬ সালে যখন এ উপজেলায় যোগদান করেন,তখন তাঁর দপ্তরের জন্য একটি মোটর সাইকেল বরাদ্দের আদেশ হয়েছিল। কিন্তু আদেশে মোটর সাইকেলটি ব্যবহারের জন্য তেলের বরাদ্দ না থাকায় অফিসে তাঁর ব্যবহারের জন্য মোটর সাইকেলটি আর তিনি উত্তোলন করেননি। কারন তিনি মনে করেন তেলের বরাদ্দ ছাড়া অফিসিয়াল কাজে মোটর সাইকেল ব্যবহার করলে হয় ব্যাক্তিগতভাবে বেতনের টাকা থেকে, নইলে অসাধু উপায়ে তাঁকে তেলের বিল পরিশোধ করতে হবে।
তাই তিনি জং ধরা, মরচে পড়া ভালো ব্রেক ধরেনা,বেলও ঠিকমতো বাজেনা, দিনরাত খোলা ময়দানে ফেলে রাখলেও চোর চুরির কথা ভাবেনা এমন একটি সাইকেলে চড়ে চষে বেড়ান মিরপুর উপজেলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত।
অতি সাধারন বেশভুষায় চলাচলে অভ্যস্ত আব্দুস সাত্তার কর্মপাগল একজন কর্মকর্তা। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি না কাটিয়ে তিনি তুলা চাষের উন্নয়নে ছুটে চলেন উপজেলার এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত।
একযুগ ধরে তিনি এ উপজেলায় কর্মরত থাকলেও তাঁর সততা নিয়ে কাউকে অঙ্গুলী উত্তোলনের খবর মেলেনি।
মানুষটির ব্যাতিক্রম প্রতিভাও অনেককে মুগ্ধ করে। আব্দুস সাত্তার দেশের ৬৪ জেলা ও ৪৯০টি উপজেলার নাম একনাগাড়ে মুখস্থ বলতে পারেন।
২০১৩ সালে মিরপুর উপজেলার ৪০ তুলা চাষীর জন্য সরকারী ট্রেনিংয়ে হয়েছিল। ওই ট্রেনিংয়ে কৃষকদের বরাদ্দ ছিল ১৪০ টাকা। অথচ তাদের দেয়া হয়েছিল মাত্র ২০ টাকার নাস্তা। এ নিয়ে ট্রেনিংয়ে উপস্থিত তুলা চাষীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। বিক্ষুব্ধ তুলা চাষীদের যৌক্তিক দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন আব্দুস সাত্তার। এতে অসন্তুষ্ট হন সেখানে উপস্থিত আব্দুস সাত্তারের উধ্বতন এক কর্মকর্তা।
পরে ওই কর্মকর্তা আব্দুস সাত্তারের বিরুদ্ধে মোবাইল বন্ধ থাকার অভিযোগ দেখিয়ে তাকে শোকজ করে ২০১৩ সালে তাঁর বার্ষিক বর্ধিত বেতন (ইনক্রিমেন্ট) বন্ধ করে দেন।
গত ৬ বছর ধরে আব্দুস সাত্তার সোকজের লিখিত জবাব দেয়া সত্বেও তা প্রত্যাহার করা হয়নি।
উল্লেখ্য, মিরপুর উপজেলায় কয়েকযুগ ধরে বিষবৃক্ষ তামাক চাষে একচ্ছত্র আধিপত্য থাকায় অন্যান্য ফসলের উল্লেখযোগ্য আবাদ হয়না। সেখানে তুলার আবাদ ভাবাই যায় না। ২০০৬ সালে আব্দুস সাত্তার এ উপজেলায় যোগদান করেন। তখন এই উপজেলায় তুলা চাষ ছিল খুবই অজনপ্রিয় একটি আবাদের নাম। তখন এ উপজেলায় মাত্র ৩০ বিঘা জমিতে তুলার চাষ হত।
মাত্র ১২ বছরে আব্দুস সাত্তারের অনেকটা একক প্রচেষ্টায় তিনি তুলা চাষকে নিয়ে গেছেন অনন্য মাত্রায়। বর্তমানে এ উপজেলায় সাড়ে ৯ শত বিঘা জমিতে তুলার চাষ হচ্ছে। একই সাথে তুলার আবাদ এখন এ উপজেলার জনপ্রিয় আবাদে পরিণত হয়েছে।