মধ্য লন্ডনে শুক্রবার রাতে এক সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত দুইজন নিহত এবং আরো কয়েক জন আহত হয়েছেন। লন্ডন ব্রিজের উত্তরের অংশে একটি হলে চলতে থাকা এক অনুষ্ঠানে হামলার সূত্রপাত হয়।
ছুরি নিয়ে কয়েক জন ব্যক্তির ওপর হামলার পর কিছুক্ষণের মধ্যেই জনগণের সহায়তায় এবং পুলিশের গুলিতে সন্দেহভাজন হামলাকারী নিহত হন।
ছুরিকাঘাতে একজন পুরুষ ও একজন নারী নিহত হয়েছেন, তাদের পরিচয় জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। এই ঘটনায় আরো তিনজন আহত হয়েছে।
নিহত ব্যক্তি ভুয়া বিস্ফোরকের ডিভাইস পড়েছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
টুইটারে পোস্ট করা ভিডিওতে ব্রিজের এক পাশে কয়েকজন পথচারীকে এক ব্যক্তিকে ধরে মাটিতে ফেলে দিতে দেখা যায়। একজন পুলিশ কর্মকর্তা সেখানে এসে ওই পথচারীদের সরে যাওয়ার ইঙ্গিত করেন এবং ওই ব্যক্তিকে গুলি করেন।
পরে এক সংবাদ সম্মেলনে লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ক্রেসিডা ডিক বলেন, লন্ডন ব্রিজে ছুরি হামলায় দুজন নিহত এবং তিনজন আহত হয়েছে। এছাড়া সন্দেভাজনও পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন।
যুক্তরাজ্যের কাউন্টার-টেরোরিজম পুলিশের প্রধান নেইল বসু বলেন, ঘটনা সম্পর্কে এখনও সব বিষয় স্পষ্ট নয়। কে বা কারা কেন এই হামলা চালিয়েছে, তা খুঁজে বের করতে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
দুপুর ২টার ঠিক আগে আগে ব্রিজের কাছে ছুরি হামলার কথা পুলিশকে জানানো হয় বলে জানান তিনি।
পুলিশ নিশ্চিত করেছে তার নাম উসমান খান এবং তার বয়স ছিল ২৮। হামলাকারী সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে এর আগে কারাদণ্ড ভোগ করেছিলেন। পুলিশ তার গতিবিধির ওপর নজর রাখবে – এমন শর্তে একবছর আগে তিনি জেল থেকে ছাড়া পান।
নভেম্বরের শুরুতে যুক্তরাজ্যে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কার মাত্রা কমিয়ে দেয়ার একমাসের মধ্যে এই হামলার ঘটনা ঘটলো।
হামলাকারীর সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে
পুলিশ জানিয়েছে, উসমান খান নামের ওই ব্যক্তিকে ২০১২ সালে সন্ত্রাসের দায়ে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল। জনসুরক্ষার জন্য তাকে অন্ততপক্ষে আট বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল যে, তিনি লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে বোমা হামলার পরিকল্পনা করেছেন। মোট নয়জনের ওই গ্রুপটি আরো কিছু হামলার পরিকল্পনা করেছিল।
২০১৩ সালে আপিল আদালত ওই রায় বাতিল করে তাকে ১৮ বছরের কারাদণ্ড দেয়, যার মধ্যে অন্তত অর্ধেক সময় কারাগারে কাটাতে হবে।
আল-কায়েদার আদর্শে উদ্বুদ্ধ মি. খান এমআই-ফাইভের নজরদারির মধ্যে ছিলেন।
যুক্তরাজ্যের কাউন্টার টেরোরিজম পুলিশের প্রধান নেইল বসু বলছেন, ”২০১৮ সালের ডিসেম্বরে তিনি কারাগার থেকে এই শর্তে ছাড়া পান যে, তার গতিবিধির ওপর পুলিশ নজর রাখবে। কীভাবে তিনি এই হামলা চালালেন, তা নিয়ে এখন তদন্ত শুরু করা হয়েছে।”
স্ট্যাফোর্ডশায়ারে যেখানে মি. খান বসবাস করতেন, সেখানে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।
”ঘটনার সব দিক এখনো পরিষ্কার নয়। এর সঙ্গে কে বা কারা জড়িত রয়েছে, তা খুঁজে বের করতে সব দিক খতিয়ে দেখা হবে,” বলেছেন মি. বসু।
টাইমস পত্রিকা জানিয়েছে, এক বছর আগে যখন তাকে কারাগার থেকে ছাড়া হয়, তখন শর্ত ছিল যে, তার শরীরে একটি ইলেকট্রনিক ট্যাগ লাগানো থাকবে, যার মাধ্যমে তার গতিবিধি নজরদারিতে রাখা হবে।
এর আগে ২০১৭ সালের চৌঠা জুন লন্ডন ব্রিজ ও বারো মার্কেটে হামলা করা হয়েছিল, যাতে অন্তত সাতজন নিহত হয়েছিলেন।
যেভাবে হামলা ঘটে
শুক্রবার লন্ডনের স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৫৮ মিনিটে লন্ডন ব্রিজের উত্তর অংশে, ফিশমোনগার’স হলে হামলার ঘটনাটি ঘটে, যেখানে বন্দীদের পুনর্বাসন সংক্রান্ত একটি সম্মেলন চলছিল, যার আয়োজন করেছিল ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি।
সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তিও অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন।
ছাত্র ও সাবেক কারাবন্দীসহ অনেক মানুষ সেমিনারে অংশ নিয়েছিলেন।
সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ব্রিজের একপাশে কয়েকজন পথচারী মিলে এক ব্যক্তিকে মাটিতে ফেলে দিতে দেখা যায়। একজন পুলিশ কর্মকর্তা এসে ওই পথচারীদের সরে যাওয়ার ইঙ্গিত করেন এবং ওই ব্যক্তিকে গুলি করেন।
ওই ব্যক্তির কর্মকাণ্ডে সন্দেহ হলে কয়েকজন সাধারণ নাগরিক তাকে আটক করে মাটিতে ফেলে দেন। এরপরেই পুলিশ এসে ঘটনাস্থলের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
নিহত ব্যক্তি ভুয়া বিস্ফোরকের ডিভাইস পড়েছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ঘটনার সময় ওই এলাকায় থাকা বিবিসির সাংবাদিক জন ম্যাকমানাস বলেছেন, তিনি ব্রিজের ওপর ধস্তাধস্তি দেখতে পেয়েছেন, কয়েকজন মানুষ একজনকে আটকাচ্ছিল। দ্রুত পুলিশ সেখানে চলে এসে ওই ব্যক্তির দিকে কয়েকটি গুলি ছোড়ে।
স্যোশাল মিডিয়ায় আসা ফুটেজে মাটিতে শুয়ে থাকা ব্যক্তিকেই পুলিশকে গুলি করতে দেখা গেছে। স্যুট ও জ্যাকেট পরা আরেকজনকে ওই ব্যক্তির কাছ থেকে একটি ছুরি উদ্ধার করে দৌড়ে পালাতে দেখা যায়।
ঘটনার সময় লন্ডন ব্রিজে একটি বাসে থাকা একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “হঠাৎই বাস থেমে গেল। হট্টগোল হচ্ছিল। আমি জানালা দিয়ে তাকালাম। দেখলাম তিন পুলিশ কর্মকর্তা এক ব্যক্তির দিকে ছুটে যাচ্ছেন।
“ওই ব্যক্তির হাতে কিছু একটা ছিল বলে মনে হল, আমি শতভাগ নিশ্চিত কিছু ছিল। কিন্তু তারপর এক পুলিশ কর্মকর্তা তাকে গুলি করেন।”
হামলা রুখে দেয়া সাধারণ মানুষের প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিনসহ অনেকে।
Discussion about this post