যাত্রাপালার এক সময়ের প্রতাপশালী খলনায়ক তকরিম উদ্দিন খাঁন (৭০)। জন্মস্থান কুষ্টিয়া মিরপুর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের গৌড়দহ গ্রামে।
তকরিম খাঁন কুষ্টিয়া মুসলিম হাইস্কুল থেকে ১৯৬২ এসএসসি পাশ করে কুষ্টিয়া সরকারী কলেজে ভর্তি হন। কলেজে পড়ার সময়ই কুষ্টিয়া শহরতলীর মোহিনী মিলে চাকুরী করা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মহিউদ্দিন’র (প্রয়াত) অনুপ্রেরনায় সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নাম লেখান। পরবর্তীতে ১৯৭০ সালে যশোর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে পাওয়ার টেকনোলজি বিষয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রী সম্পন্ন করে চাকুরী ক্ষেত্রের অবারিত সুযোগকে কাজে না লাগিয়ে সাংস্কৃতির টানে যোগ দেন যাত্রাপালা জগতে।
১৯৭২ সালে তকরিম খাঁন, কুষ্টিয়া শহরতলী শালদহের আলাউদ্দিন ও অধ্যাপক আব্দুর রশীদ ৩ জন মিলে প্রতিষ্ঠা করেন “গীতাঞ্জলী অপেরা”। এই যাত্রাদলে তকরিম খাঁন পরিচালক ও প্রধান খলনায়কের চরিত্রে একটানা অভিনয় করে সারাদেশে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন। একযুগ সাফল্যের সাথে যাত্রাদলটি চলার পর আর্থিক অনিয়মসহ বেশকিছু কারনে বন্ধ হয়ে যায় গীতাঞ্জলী অপেরা। সেখান থেকে ১৯৮৩-৮৫ সাল পর্যন্ত তকরিম খাঁন ব্রাম্মনবাড়িয়ার জসিম উদ্দিন ভুঁইয়ার “বলাকা” অপেরায় পরিচালক ও খলনায়ক হিসাবে কাজ করেন। বলাকা অপেরা ছেড়ে একই পদে কুষ্টিয়ার মোহাম্মদ আজাদের “দি গীতাঞ্জলী” অপেরায় যোগ দেন।
১৯৮৮/৮৯ সালে তকরিম খাঁন নিজ মালিকানা স্বত্ব নিয়ে আবারো গীতাঞ্জলী অপেরা পূনঃ প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু অপসংস্কৃতির আগ্রাসনে ১ বছর চলার পর গীতাঞ্জলী অপেরাও বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ২৫ বছর যাত্রাপালার সাথে যুক্ত দাপুটে অভিনেতা তকরিম উদ্দিন খাঁন অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করেছেন। যার মধ্যে নাচমহল ছবিতে দবির খাঁ, কে দেবে জবাব ছবিতে আলী শাহ, কোহিনুর ছবিতে গোলাম কাদের, রক্ত দিয়ে কিনলাম ছবিতে মাসুদ খান চরিত্রে তকরিম খানের অনবদ্য অভিনয় আজও সেই সময়ের যাত্রাপালার দর্শকদের মনকে ব্যাপকভাবে নাড়া দেয়।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্রহাতে যুদ্ধ করে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম থাকলেও ভাতা পাবার তালিকায় এখনো নাম ওঠেনি তকরিম খাঁনের। একই সাথে ১৯৭৩ সালে পৈত্রিক জমিতে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন গৌড়দহ বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই স্কুলের সহকারী শিক্ষক হিসাবে শিক্ষকতা করে ২০০৪ সালে তিনি অবসর গ্রহন করেছেন।
১৯৯২ সালে কুষ্টিয়া-মেহেরপুর সড়কের মিরপুর উপজেলাস্থ্য মশান বাজারের অনতিদুরে প্রতিষ্ঠিত বলিদাপাড়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিও এই তকরিম উদ্দিন খান।