কুষ্টিয়া মিরপুর উপজেলার ছাতিয়ান ইউনিয়নের সারঠিয়া গ্রামের কাতার প্রবাসী আঙ্গুরের স্ত্রী বিজলী খাতুন(২০) এর রহস্যজনক মৃত্যু হয় গত শুক্রবার। এই ঘটনায় নিহত বিজলীর মা ফুলজান ও ভাই লালচান দাবি করেন, বিজলীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
নিহত বিজলীর মা জানান, আমি গরীব অসহায় মানুষ আলামপুর রাজাপুর ভূমিহীন হওয়ায় সরকারী খালের জায়গায় বসবাস করি। আমার মেয়ে মারা যাবার পর আমার স্বামী আজিজুলকে আমার মেয়ের শ্বশুর দুলাল, দেবর রতন সহ তাদের লোকজন বাড়িতে আটকে রেখেছে। বিজলী যেদিন মারা যায় ওইদিন বিজলীর মোবাইল ফোন দিয়ে প্রতিবেশী একজন জানায় বিজলী অসুস্থ আপনারা তারাতারি চলে আসেন। আমি ও আমার স্বামী আমার মেয়ের শ্বশুর বাড়ি যায়। আমি আমার মেয়েকে দেখতে চাইলে তারা দেখতে দেইনা। জোরপূর্বক বিজলীর লাশ দেখতে পাই। সে সময় বিজলীর গলাই একটি মাত্র দাগ দেখতে পাই। যা দেখে মনে হয়না সে গলাই দড়ি নিয়েছে। আমার মেয়েকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমার স্বামী আজিজুলকে আটকে রেখে তারা সাদা কাগজে জোর করে স্বাক্ষর নিয়ে তাদের বাড়িতে জোরপূর্বক আটকে রেখেছে। আমাদের বাড়তে খবর দিয়েছে বিজলীর ব্যবহৃত জিনিস পত্র নিয়ে আসার জন্য। আমার জামাই আঙ্গুর কাতারে যাওয়ার সময় মোটা অঙ্কের ঋণ তুলে টাকা দিয়েছিলাম। নিহত বিজলীর স্বামী মোবাইল ফোনে বিজলীকে মানসিক অত্যাচার করতো তার রেকডিং রয়েছে ০১৭৬৮-২৫৯৭৬০ নাম্বারে বিজলীর ফোনে।
নিহত বিজলীর ভাই লালচান বলেন আমার বোনকে হত্যা করা হয়েছে পরিকল্পিতভাবে আমরা এর বিচার চাই। নিহত বিজলীর দুই ফুফু মাজেদা ও গোলাপি জানান, নিহত বিজলীর দেবর রতন বিজলীকে উত্যক্ত করতো। তাকে পাট কাটতে, পটল তুলতে জোর করে মাঠে নিয়ে যেত। মরার ৩ দিন আগে রতনের সমস্ত অপকর্মের ঘটনা আমাদের কে জানিয়েছিল। বিজলীর শ্বশুর দুলাল ও তার লোকজন বিজলীর লাশটাও আমাদের দেখতে দেইনি।
তিনি আরো জানান, লাশের কাছে আমাদের যেতে দেইনি। আমাদের সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়। বিজলীর শ্বশুর দুলাল, শাশুড়ি বেগম ও দেবর রতন আমাদের মেয়েকে নির্মম নির্যাতন করে মেরে ফেলে গলাই দড়ির নাটক সাজিয়েছে। আবার তারা আমার ভাইকে ৩ দিন ধরে আটকে রেখেছে ও মামলা না করার জন্য জোরপূর্বক সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছে।
এই ঘটনার ব্যাপারে এজাজ মেম্বারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এই অসহায় পরিবারটি বিজলী হত্যার বিচারের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছে।
এ ব্যাপারে নিহত বিজলীর শ্বশুর দুলাল ও দেবর রতনের সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তারা জানান, বিজলীর বাবাকে আটক করে রাখা হয়নি তিনি স্ব-ইচ্ছায় রয়েছেন।
এলাকাবাসী তীব্র ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, এরা বিজলীকে মেরে নাটক সাজিয়েছে গলাই দড়ির, আবার তার বাবাকে জোরপূর্বক আটকে রেখেছে। আমরা বিজলী হত্যার সুষ্ঠ বিচার চাই। এ ব্যাপারে তারা কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের কাছে বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, আলামপুর খালপাড়া এলাকার আজিজুলের কন্যা বিজলী খাতুনের সাথে মিরপুর সারঠিয়া গ্রামের দুলালের পুত্র আঙ্গুরের ৩ বছর পূর্বে পরিবারের সম্মতিতে বিবাহ হয়। বিয়ের পরের বছরেই আঙ্গুর কাতারে পাড়ি জমায়। শ্বশুর বাড়িতে নিহত বিজলী শ্বশুর, শাশুড়ি ও দেবরের সাথে থাকত। গত শুক্রবার বিজলীর রহস্যজনক ভাবে লাশ পাওয়া যায়।
নিহত বিজলীর ফুফাতো বোন জানায়, শ্বশুর বাড়ি থেকে খবর আসে বিজলীকে হাসপাতালে নিতে হবে। পরে বিজলীর বাবা গেলে তাকে আটকে রেখে খারাপ ব্যবহার করে নিহত বিজলীর শ্বশুর শ্বাশুড়ি ও দেবর।
নিহত বিজলীর মামি আকলিমা খাতুন জানান, বিজলীর শ্বশুর, শ্বাশুড়ি ও দেবর বিজলীর কাছে যৌতুক দাবী করে শারীরিক ও মানুষিক ভাবে অত্যাচার করতো।
তিনি আরো জানান, বেশ কয়েকদিন পূর্বে বিজলী জানায় তার স্বামী বাড়ি না থাকায় তার মেজ দেবর ও ছোট দেবর রতন নানা ভাবে উত্যক্ত করতো। বিজলী তার বাবার বাড়ি যেতে চাইলে যেতে দিত না বিজলীর শ্বশুর শ্বাশুড়ি ও দেবর।