আলমডাঙ্গাকে মাদকমুক্ত করতে বিশেষ অবদান রাখায় আলমডাঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্জ আবু জিহাদ খানকে প্রদান করা হয়েছে বিশেষ সন্মাননা ক্রেস্ট। স্বপ্নঘর ফাউন্ডেশন ও উই ফর অল নামের দুটি সামাজিক সংগঠণ যৌথভাবে তাকে এ সন্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করে।
আবু জিহাদ খান আলমডাঙ্গা থানায় যোগদান করেন গত ১২ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে। সেই থেকে আলমডাঙ্গায় সত্যিকার অর্থে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু করা হয়। সে সময় সচেতন আলমডাঙ্গাবাসির হৃদয়ে পুলিশের এ মাদকবিরোধি অভিযান নিয়ে আশা-নিরাশার দোলচাল দেখা দেয়। দীর্ঘদিন ধরে বহাল তবিয়তে শেকড় গজানো এ দুর্দমনীয় অপরাধ দমন নিয়ে অনেককে প্রকাশ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে দেখা যায়।
কিন্তু আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের তাৎক্ষণিক সাফল্য ছিল চোখে পড়ার মত। অচিরেই আলমডাঙ্গাবাসি পুলিশের সর্বাত্মক মাদকবিরোধি অভিযানের সুফল ভোগ করতে শুরু করে। একের পর এক ড্রাগ ডিলার, ড্রাগ রানার গ্রেফতার হতে থাকে। অব্যাহতভাবে উদ্ধার হতে থাকে নানা ধরণের মাদকদ্রব্য। প্রতাবশালী মাদকব্যবসায়িরা আলমডাঙ্গা ছেড়ে অন্যত্র গা-ঢাকা দিতে বাধ্য হয়। সবচে প্রভাবশালি মাদকসম্রাজ্ঞী মিনিপরিবারের অনেকেই আদালতে আত্মসমর্পণ করে।
হারদীর সাধু নিহত হয় বন্দুক যুদ্ধে ও মিনিপরিবারের ওল্টুর গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। এ দুজন নিহতের পর মাদকব্যবসায়িরা এখন যারপরনাই ভীত। আলমডাঙ্গা শহর এখন এক প্রকার বলা চলে মাদকমুক্ত শহর। এ কৃতিত্বের দাবিদার সবচে ওসি আবু জিহাদ খানের। কে না জানে যে – মাদকখাত থেকে থানা পুলিশ স্তর অনুযায়ি উল্লেখযোগ্য মাসোহারা পেয়ে থাকেন। বলা চলে পুলিশের বেতন বহির্ভূত উপার্জনের সবচে বড় খাত মাদক। অথচ আবু জিহাদ খান নির্দ্বিধায় সেই লোভ সংবরণ করেছেন। শুধু নিজে না, তার অধীনস্থদেরও বুঝিয়ে সম্মত করাতে সক্ষম হয়েছেন। তারপর শুরু করেন সর্বাত্মক জিহাদ।
তিনি শুধু আলমডাঙ্গাকে সাময়িকভাবে মাদকমুক্ত করেই হাতপা গুটিয়ে দায়িত্ব থেকে সরে যাননি। তিনি ভালভাবেই জানেন – সাময়িক সুস্থ্যতা আদৌ রোগমুক্তি নয়। সমাজে যতদিন মাদকখোররা বহালতবিয়তে থাকবেন, ততদিন ওই সমাজে মাদকের চাহিদা অব্যাহত থাকবে। চাহিদা আবিষ্কারের জননী। ফলে নতুন নতুন ব্যবসায়ি নতুন নতুন কৌশলে মাদকের ব্যবসায় নামবেন। মাদকসমস্যার দীর্ঘ মেয়াদী উপশমের উপায় ভাবলেন তিনি। পরিকল্পনা করেন শহরের মাদকসেবীদের আটক করে অভিভাবকদের জিম্মায় ছাড়বেন। ছাড়ার সময় নিজ নিজ সন্তানদের চিকিৎসা করে মাদকমুক্ত করবেন মর্মে লিখিত নেন।
এরপর পরিকল্পনা করেন মাদকাসক্তদের কাউন্সেলিংয়ের। আলমডাঙ্গা শহরে মাইকিং করে গত ৭ জুলাই সকল মাদকাসক্তকে থানা প্রাঙ্গণে উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশ মোতাবেক প্রায় ৫০ জন মাদকাসক্ত সকল লজ্জ্বা-ভয় উপেক্ষা করে উপস্থিত হন আলমডাঙ্গা থানা চত্বরে। অফিসার ইনচার্জ আবু জিহাদ খানের সফল ও সাবলিল কাউন্সেলিংয়ের পর মাদকাসক্তরা জীবনে আর মাদক গ্রহণ করবেন না ও আলমডাঙ্গা এলাকাকে মাদকমুক্ত রাখতে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেন। অন্যদিকে, কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে নতুন করে জীবনোপলিব্ধি, নতুন জীবনের সন্ধ্যান পাওয়ায় তারা থানা অফিসার ইনচার্জের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
শুধু তাই না, নতুন করে যাতে মাদকসেবীর সৃষ্টি না হয় সে জন্য করণীয় নির্ধারণ করেন। উদ্যোগ নেন – শুদ্ধ সংস্কৃতিচর্চা ও নিয়মিত ক্রীড়াচর্চার। গত ১৬ জুলাই তিনি আলমডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সহযোগিতায় উপজেলার এরশাদমঞ্চে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক উতসবের আয়োজন করেন। আলমডাঙ্গা উপজেলার প্রত্যেক মাঠে নিয়মিত খেলাধুলা নিশ্চিত করতে তিনি পৌর মেয়র, উপজেলা ও ইউপি চেয়ারম্যান্দের সাথে মতবিনিময় করে চলেছেন। যাতে আলমডাঙ্গাকে মাদকমুক্ত রাখার প্রত্যয় টেকসই হয়।
একজন কর্মকর্তা বিশেষ করে যারা নির্বাহি পদে থাকেন তারা সাধারণত রুটিন ওয়ার্কস সম্পন্ন করেন। তার বাইরে কোন কাজে আগ্রহ দেখান না। কিন্তু যিনি প্রকৃত অর্থেই দেশকে, দেশের মানুষকে ভালবাসেন, তিনি অযাচিতের মত অনেক দায়িত্ব মাথায় তুলে নেন।
এমন একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে সন্মাননা দিয়ে স্বপ্নঘর ফাউন্ডেশন ও উই ফর অল সংগঠণ দুটি সচেতন আলমডাঙ্গাবাসীর সমীহ কেড়েছে।