ব্যাপক অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও প্রার্থীদের বয়স জালিয়াতির মাধ্যমে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার ২২টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ দেওয়া হলো দপ্তরী কাম প্রহরী। অভিযোগ উঠেছে, প্রতিটি বিদ্যালয়ে দপ্তরী কাম প্রহরী নিয়োগে যে বেশী টাকা দিয়েছে তারই নিয়োগ নিশ্চিত করা হয়েছে। যোগ্যতা বা বয়স, নৈশ প্রহরায় উপযুক্ত কিনা এসব বিষয় দেখেনি নিয়োগ কমিটি।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেছেন, নিয়োগ পরীক্ষার আগেই মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ২২টি বিদ্যালয়েই নিশ্চিত করা হয় দপ্তরী কাম প্রহরী। এমন অভিযোগ এনে আজ ৪,জুলাই বুধবার সকালে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক,জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার,উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর অভিযোগ পত্র প্রদান করেছেন।
সে অনুযায়ী তালিকা প্রস্তুত করে নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদের হাতে তালিকা দেওয়া হয়। মৌখিক পরীক্ষা ও অনান্য কার্যক্রম ছিল শুধুই আইওয়াস। পরীক্ষার শেষে বিকালেই পরীক্ষার ফলাফল ঘোষনার কথা থাকলেও ফলাফল পাল্টে দিয়ে কমিটির পছন্দ ব্যাক্তির নাম লিখে রাত ১১ টার পর ফলাফল ঘোষনা করা হয়েছে। যা অবৈধ এবং অনিয়মতান্ত্রিক। সাইকেল চালনোয় পারদর্শী, নৈশ প্রহরায় উপযুক্ত ও সবল সুঠাম দেহের অধিকারী এ সব নিয়ম মানা হয়নি নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে। ভুক্তভোগীরা সুষ্টু তদন্ত করে অবৈধ এ নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের দাবী জানিয়েছে।
লিখিত অভিযোগে প্রকাশ, গত ২৮ জুন ভেড়ামারা উপজেলা প্রশাসন উপজেলার ২২টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি কাম প্রহরী পদে ২২ জন প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়। পশ্চিম বাহিরচর ১২ মাইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ দেওয়া হয় হোটেল ব্যবসায়ী সোহাগ হোসেনকে। চাকুরী বিধিমালা অনুযায়ী প্রার্থীর বয়স ১৮-৩০ বছর বলা হলেও সোহাগ হোসেন কে ৩৫ বছরে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সোহাগ হোসেন এর জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বার ১৯৮৩০১১৫২৭২০৫০২২। আইডি তে তার জন্ম তারিখ ০৪ মার্চ ১৯৮৩। সে অনুযায়ী তার বর্তমান বয়স ৩৫ বছর। জালিয়াতি করে সে একই আইডি তে জন্ম তারিখের জায়গায় ৪ মার্চ এর স্থলে ১৪ মার্চ এবং ১৯৮৩ এর স্থলে ১৯৮৬ সাল উল্লেখ করে, বয়স কমানোর ব্যার্থ চেষ্টা চালায়। যাচাই বাছাই ও নিয়োগ কমিটি জাল পরিচয়পত্র দেখেও না দেখার ভান করে প্রতারক সোহাগ হোসেন কেই মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দিয়ে দেয় এমন অভিযোগ করেছে, ওই এলাকারই চাকুরী প্রত্যাশি রাজন আলী। নিয়োগ পরীক্ষায় যার রোল নম্বার ছিল ১০৪।
অপর দিকে, জুনিয়াদহ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সান্টু রহমান নামের এক ছেলেকে। যার সার্টিফিকেট এবং বয়সে গড়মিল আছে বলে অভিযোগ করেছে ওই বিদ্যালয়েরই আরেক প্রার্থী, বিপ্লব হোসেন খাঁ। সে জুনিয়াদহ এলাকার মৃত সিরাজ আলীর পুত্র। তার রোল নাম্বার ছিল ৩০। একই অবস্থা স্বরুপের ঘোপ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়েও। এখানে নিয়োগ পেয়েছে ছাব্বির হোসেন। নলুয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ পেয়েছে সোহেল রানা। একই চিত্র বামনপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাহিরচর সোনালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ ২২টি শিক্ষা প্রতিষ্টানেই। যা তদন্ত করলেই প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে এবং যোগ্যতর প্রার্থীরা নিয়োগ পাবে। অভিযোগ উঠেছে, প্রতিটি বিদ্যালয়ে দপ্তরী কাম প্রহরী নিয়োগে যে বেশী টাকা দিয়েছে তারই নিয়োগ নিশ্চিত করা হয়েছে। যোগ্যতা বা বয়স, নৈশ প্রহরায় উপযুক্ত কিনা এসব বিষয় দেখা হয়নি।
উপজেলার ২২টি বিদ্যালয়ে দপ্তরী কাম প্রহরী নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম, দর্নীতি ও স্বজনপ্রতি’র অভিযোগ প্রসঙ্গে ভেড়ামারা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মাসুদ করিমের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোন বক্তব্য দিতে রাজী হন নি।
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মো. জহির রায়হানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মুঠোফোনে জানান,এমন সুনিদৃষ্ট অভিযোগ এলে কঠোর ভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্তা নেয়া হবে।
স্থানীয় এবং ভুক্তভোগীরা অনিয়মে ভরা এ নিয়োগ বাতিল করে পুনরায় যাচাই বাছাই ও নিয়োগ দেওয়ার দাবী জানিয়েছে।