ভেড়ামারার ক্ষেমিরদিয়াড় মওলার বিলে আবু মুসার রয়েছে ২৪ বিঘা জমি। এর মধ্যে ২১ বিঘাই অন্যের জমি বর্গা নিয়ে তিনি চাষাবাদ করেন। সব জমিতেই লাগিয়েছেন আঁখ। স্বপ্নের সেই আঁখ এখন পানির নীচে। পদ্মার শাখা হিসনা নদীতে মাছ চাষীদের দেওয়া ২৬ টি বাঁধের কারণে শুধু মুসার স্বপ্ন নয়, ডুবে গেছে শত শত কৃষকের স্বপ্ন। মওলার বিল এবং আওরের বিলের ৩০০০ বিঘা জমিতে ঋন করে চাষ করা আঁখ এবং ধান এখন পানির নীচে। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের দাবী জানিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা কুষ্টিয়া সুগার মিলের মাধ্যমে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন জানিয়েছে।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার বুক চিড়ে বয়ে গেছে হিসনা নদী। ভেড়ামারা সহ এতদাঞ্চলের বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন হয়ে এ নদীতে গিয়ে পড়ে। অসাধু একটি চক্র মাছ চাষ করার জন্য হিসনা নদীতে ভেড়ামারা শহর থেকে মিরপুরের সাগরখালী সাইফুন পর্যন্ত প্রায় ২৬টি বাঁধ দিয়ে পানি আটকিয়ে দিয়েছে। যে কারনে পানি নিষ্কাশন হচ্ছেনা । ফলে পানি ফুলে ফেঁপে ডুবে গেছে ভেড়ামারার ক্ষেমিরদিয়াড় এবং আওরের বিলের প্রায় ৩ হাজার বিঘা জমির ফসল।
নতুন হাট এলাকার চাষী মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন, মওলার বিলে তার রয়েছে ৪০ বিঘা জমি। কয়েক বছর আগেও মওলার বিলে ২টা ধান এবং চৈতালি সহ ৩টি ফসল উৎপাদন করেছেন। কিন্তু আসাধু মাছ চাষ দের বাঁধ দেওয়ার কারনে মওলার বিল এবং আওরের বিল ডুবে গেছে। এখন শুধু ১টি মাত্র ফসল হচ্ছে। কুষ্টিয়া সুগার মিল থেকে মোটা অংকের টাকা ঋন নিয়ে এ বছর জমিতে আঁখ লাগিয়েছি। কিন্তু ভেড়ামারা থেকে মিরপুরের সাগরখালী সাইফুন পর্যন্ত ২৬ টি বাঁধের কারনে ডুবতে বসেছে আঁখ। ইতোমধ্যে আঁখ এখন বুক সমান পানিতে।
নতুন হাট এলাকার কৃষক হাসানুজ্জামান বারীর রয়েছে ১২ বিঘা আঁখ। তিনি জানান, প্রায় ৩ মাস আঁখের জমিতে পানি। ফলে পচে গেছে আঁখের কুষি। পানি যদি নিষ্কাশন না হয় তাহলে আঁখের কোয়া ভেঙ্গে পড়তে থাকবে। এতাদাঞ্চলের শত শত কৃষক’র স্বপ্ন ভেঙ্গে যাবে। সরকারের কাছ থেকে নেওয়া ঋনও তারা পরিশোধ করতে পারবে না। কৃষক জুয়েল আলী জানিয়েছেন, এবছর আগাম বর্ষা হওয়ায় ইতোমধ্যে মওলার বিল এবং আওরের বিলের ধানের বীজ তলা, ধান এবং আঁখ ডুবে কৃষকরা কোটি কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। মওলার বিলে পানির নীচে রয়েছে জুয়েল আলীর ৪ বিঘা, ওমর আলীর ৫ বিঘা, ইদ্রিস আলীর ৯ বিঘা, আমির হোসেন’র ৬ বিঘা, আসাদ আলীর ৬ বিঘা, হাসানুজ্জামান বারীর ১২ বিঘা, সাহাবুল’র ১১ বিঘা, আব্দুল লতিফ’র ১০ বিঘা, আসমত আলী’র ৮ বিঘা সহ শত শত কৃষকের প্রায় ৩ হাজার জমির উঠতি ফসল এখন পানির পানি।
নতুনহাট আঁখ সেন্টারের সি আই বাবলু জানিয়েছেন, মওলার বিল এবং আওরের বিলের প্রায় ৩ হাজার বিঘা জমির উঠতি ফসল এখন পানির নীচে। এ বিলের প্রায় জমিতেই কৃষকরা সুগার মিলের কাছ থেকে ঋন নিয়ে আঁখ লাগিয়েছে। কিন্তু সাগরখালী পর্যন্ত ২৬টি বাঁধ দেওয়ায় হিসনা নদীর পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। ফলে ডুবে গেছে মওলা ও আওরের বিল। তিনি জানান, দামুকদিয়া, গোলাপনগর, নতুন হাট, ক্ষেমিরদিয়াড় ও পরানখালী ৫টি আঁখ সেন্টারের শতশত কৃষকদের মাঝে প্রায় ২ কোটি টাকা ঋন দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, পানি নিষ্কাশনের দাবী জানিয়ে কৃষকরা একটি লিখিত অভিযোগ কুষ্টিয়া সুগার মিলের মাধ্যমে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক বরাবর পাঠানো হয়েছে।