Thursday, April 25, 2024
প্রচ্ছদবিশ্বএশিয়াভুয়া ছবি দিয়ে রোহিঙ্গাবিরোধী প্রচারণায় ধরা খেলো মিয়ানমার সেনাবাহিনী

ভুয়া ছবি দিয়ে রোহিঙ্গাবিরোধী প্রচারণায় ধরা খেলো মিয়ানমার সেনাবাহিনী

Published on

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে প্রকাশিত একটি বইয়ে ভুয়া তথ্য ও ছবি দিয়ে বিভ্রান্তিকর অবস্থা সৃষ্টি করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।

বইয়ের একটি ছবিতে দেখা গেছে, এক ব্যক্তি জমি নিড়ানি নিয়ে দুই লাশের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আর নিচে ক্যাপশনে লিখা আছে- ‘স্থানীয়দের নির্মমভাবে হত্যা করেছে বাঙালিরা’।

বইটিতে ১৯৪০ এর দশকে মিয়ানমারে দাঙ্গার অধ্যায়ে ওই ছবিটি প্রকাশ করা হয়েছে। বার্মিজ ভাষায় ছবির বিবরণে বলা হয়েছে, মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গারা বৌদ্ধদের হত্যা করেছে। রোহিঙ্গাদের অবৈধ অভিবাসী হিসেবে তুলে ধরতে বইয়ে তাদের ‘বাঙালি’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।

কিন্তু রয়টার্স ছবিটি পরীক্ষা করে দেখেছে যে, সেটি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তোলা হয়েছিল, যখন লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি বাহিনী।

গত জুলাইয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ‘ডিপার্টমেন্ট অব পাবলিক রিলেশনস অ্যান্ড সাইকোলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার’ থেকে বইটি প্রকাশ করা হয়। ওই বইয়ে এরকম তিনটি ভুয়া ছবি পাওয়া গেছে যেগুলোকে রাখাইন অঞ্চলের আর্কাইভ ছবি বলে দাবি করা হয়েছে।

তবে রয়টার্সের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ওই তিনটি ছবির মধ্যে দুটি বাংলাদেশ থেকে এবং একটি তানজানিয়া থেকে নেয়া হয়েছে। একটি ছবির মিথ্যা ক্যাপশনে বলা হয়-‘বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে প্রবেশ করছে রোহিঙ্গা’, যেটি আসলে রুয়ান্ডার গৃহযুদ্ধের সময়কার একটি ছবি।

এদিকে এসব ছবির সত্যতা নিশ্চিত করতে মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জ হতয়ে বা সেনাবাহিনীর মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে মিয়ানমারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব উ মিও মিন্ট মং মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেছেন, তিনি বইটি পড়ে দেখেননি।

‘মিয়ানমারের রাজনীতি ও তাতমাদো: প্রথম পর্ব’ নামে ১১৭ পৃষ্ঠার ওই বইয়ে গত বছরের আগস্টের সামরিক অভিযান নিয়ে সেনাবাহিনীর ভাষ্য তুলে ধরা হয়েছে। জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর হিসেবে, সেনাবাহিনীর ওই অভিযানে ব্যাপক হত্যা, ধর্ষণ আর জ্বালাও পোড়াওয়ের মধ্যে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। তাতমাদো মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অফিসিয়াল নাম।

বইটিতে প্রকাশিত বেশিরভাগ তথ্যের উৎস হিসেবে সেনাবাহিনীর ‘ট্রু নিউজ’ ইউনিটের কথা বলা হয়েছে। গত বছর সংকট শুরু থেকেই ওই ইউনিট সেনাবাহিনীর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মূলত ফেসবুক ব্যবহার করে ঘটনাপ্রবাহের ‘সংবাদ’ দিয়ে আসছে।

মিয়ানমারের বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াঙ্গুনের সব বইয়ের দোকানেই পাওয়া যাচ্ছে এই বইটি। শহরের অন্যতম বড় বইয়ের দোকান ইনওয়ার একজন কর্মী জানান, তারা ৫০ কপির অর্ডার দিয়েছিলেন, সেগুলো বিক্রি হয়ে গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মী বলেন, আপাতত নতুন করে এই বই আনার কোনও পরিকল্পনা তাদের নেই, কারণ খুব বেশি মানুষ ওই বই নিয়ে আগ্রহ দেখায়নি।

সেনাবাহিনীর তাদের এই নতুন বইয়ে কোনও নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে সহিংসতার জন্য উল্টো ‘বাঙালি সন্ত্রাসীদের’ ওপর দায় চাপিয়েছে।

সেনাবাহিনীর এই বইয়ে রোহিঙ্গাদের শেকড়ের ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে, যাদেরকে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী হিসেবে বর্ণনা করে থাকে।

বইয়ের সূচনায় লেখক লে. কর্নেল কিয়াও কিয়াও উু লিখেন, ‘বাঙালিদের ইতিহাস উদঘাটনের’ লক্ষ্যে ‘ডকুমেন্টরি ফটো’ ব্যবহার করে বর্ণনা তৈরি করা হয়েছে।

রয়টার্স জানাচ্ছে, ওই বইয়ে ৮০টি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ঐতিহাসিক ছবি হিসেবে আটটি ছবিকে ব্যবহার করা হয়েছে। যেগুলোর মধ্যে তিনটিই ভুয়া বলে রয়টার্সের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। তবে বাকি পাঁচ ছবির সত্য-মিথ্যা যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স।

সর্বশেষ

কুষ্টিয়ায় আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল সমর্থকদের সংঘর্ষে আহত ৭

কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল খেলা নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডার পর সংঘর্ষে জড়িয়ে অন্তত সাতজন...

কুষ্টিয়ায় শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানি, বরখাস্ত প্রধান শিক্ষককে পুলিশে সোপর্দ

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে পঞ্চম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানির মামলায় বরখাস্ত প্রধান শিক্ষককে বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর)...

কুষ্টিয়ায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২

কুষ্টিয়ায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় একটি শিশুসহ দু’জনের মৃত্যু হয়েছে।   বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে...

পাসপোর্ট সংশোধনে সরকারের নতুন নির্দেশনা

এনআইডির তথ্য অনুযায়ী পাসপোর্ট রি-ইস্যুর নির্দেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পাসপোর্ট...

আরও পড়ুন

‘পালানোর চেষ্টা করলে করোনা রোগীকে গুলি করে হত্যার অনুমতি’

বুধবার দু'জন আক্রান্ত ব্যক্তি হাসপাতাল থেকে পালানোর পরে জেলা কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে পুলিশকে চরম বল...

ডাস্টবিন নাই, পরিচ্ছন্নতা কর্মী নাই, তারপরেও কীভাবে এমন পরিচ্ছন্ন দেশ হয়ে উঠলো জাপান

সারা দিনের সব ক্লাস শেষে শিক্ষার্থীরা তাদের স্কুল ব্যাগ নিয়ে অপেক্ষা করছে যে কখন...

২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার কারণে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কার...