Thursday, March 28, 2024
প্রচ্ছদবাংলাদেশঅপরাধবুয়েট ছাত্র কুষ্টিয়ার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ, আটক- ২

বুয়েট ছাত্র কুষ্টিয়ার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ, আটক- ২

Published on

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল রোববার দিবাগত রাত তিনটার দিকে বুয়েটের শের-ই–বাংলা হলের নিচতলা থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হলের শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন।

মারা যাওয়া আবরার ফাহাদ বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁর বাড়ি কুষ্টিয়া শহরে।

হলের শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, গতকাল রাত আটটার দিকে আবরার–ফাহাদসহ দ্বিতীয় বর্ষের ৭-৮ জন শিক্ষার্থীকে শের–ই–বাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে পাঠান তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ৭-৮ জন নেতা। তাঁরা আবরার ফাহাদের মুঠোফোন চেক করে শিবির-সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ খোঁজেন। একপর্যায়ে ক্রিকেট খেলার স্টাম্প দিয়ে তাঁকে পেটাতে শুরু করেন তাঁরা। পরে চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী ওই কক্ষে গিয়ে আবরারকে আরেক দফায় পেটান। এতে তাঁর মৃত্যু হলে রাতে সহপাঠীদের ডেকে লাশ সিঁড়ির নিচে রাখতে বলা হয়।

ঘটনার সময় ২০১১ নম্বর কক্ষে উপস্থিত বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আশিকুল ইসলাম ওরফে বিটু। তিনি দাবি করেন, ‘রাত আটটার দিকে আবরার ফাহাদকে ২০১১ নম্বর কক্ষে ডাকা হয়। আমি মাঝে মাঝে ওই কক্ষে বন্ধুর কাছে যাই৷ গতকাল রাতে গিয়ে দেখতে পাই, সেখানে আবরার ফাহাদের ফেসবুক আইডি ও মেসেঞ্জার চেক করা হচ্ছে। তাঁর বিরুদ্ধে শিবির-সংশ্লিষ্টতার কিছু প্রমাণও পাওয়া যায়। রাত পৌনে নয়টার দিকে আমি কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসি। পরে সেখানে কী হয়েছে, আমি জানি না। নিজের কক্ষে গিয়ে পড়াশোনা ও আড্ডা দিয়ে রাত একটার দিকে ওই কক্ষে রেখে আসা নিজের ল্যাপটপ ও বই আনতে গেলে আবরারকে পড়ে থাকতে দেখি। তখন সেখানে আর কেউ ছিল না।’

হল শাখা ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, আবরারকে জেরা ও পেটানোর সময় ওই কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপসম্পাদক ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র অমিত সাহা, উপদপ্তর সম্পাদক ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র মুজতাবা রাফিদ, সমাজসেবাবিষয়ক উপসম্পাদক ও বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ইফতি মোশারফ ওরফে সকালসহ তৃতীয় বর্ষের আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী ছিলেন। ওই কক্ষে এসে দ্বিতীয় দফায় আবরারকে পেটান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক ও নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একই বর্ষের মেফতাহুল ইসলাম জিয়নসহ কয়েকজন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, পেটানোর পর আবরারের মৃত্যু হলে রাতে তাঁর সহপাঠীদের ডেকে লাশ নিচতলার সিঁড়ির সামনে রাখা হয়।

হলের দারোয়ান মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, ‘সিঁড়ির পাশের সিসিটিভি ফুটেজটি নষ্ট। কোনো আওয়াজ বা হইচই শুনিনি। এই অংশের সিসিটিভি কয়েক দিন থেকে এলোমেলো।’

ভোর সাড়ে পাঁচটার সময় শের–ই–বাংলা হলে গিয়ে দেখা যায় হল ক্যানটিনে আবরারের লাশ রাখা। আবরারের সহপাঠীদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলেও তাঁরা কিছু বলতে রাজি হননি। কিছুক্ষণ পর হলের সিসিটিভি ফুটেজ শিক্ষার্থীদের সামনে দেখানো হলেও রাত ২টা ৬ মিনিটের পর সিসিটিভি ফুটেজে কী রয়েছে, তা দেখানো হয়নি। যে কক্ষে (২০১১ নম্বর) আবরারকে পেটানো হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে, সেখানে গিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি।

ভোরে ঘটনাস্থলে আসেন নিহত আবরারের মামাতো ভাই একটি দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিক আবু তালহা রাসেল ৷ তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আবরারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা একদমই সত্য নয়। তাঁর গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নে। আওয়ামী লীগের পাঁচজন সমর্থক থাকলে তাঁর বাবা বরকতউল্লাহ তাঁদের একজন। আমরা এই হত্যার বিচার চাই৷’

ঘটনার বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ জাফর ইকবাল খান বলেন, ‘রাত পৌনে তিনটার দিকে খবর পাই যে এক শিক্ষার্থী হলের সামনে পড়ে আছে। কেন সে বাইরে গিয়েছিল, কী হয়েছিল, তা এখনও জানা যায়নি। তাৎক্ষণিকভাবে বুয়েটের চিকিৎসক দিয়ে তাকে পরীক্ষা করা হয়। ওই চিকিৎসক জানান সে বেঁচে নেই। পরে পুলিশকে খবর দিই। পুলিশ এসে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।’

তবে ঘটনাস্থলে আসা পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলের অনুসারীরাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বুয়েটের চিকিৎসক মাশরুক এলাহী বলেন, ‘খবর পেয়ে তিনটার সময় ঘটনাস্থলে আসি। একতলা ও দোতলার মাঝামাঝি জায়গাতে আবরারকে পড়ে থাকতে দেখি। পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে বুঝতে পারি ছেলেটি বেঁচে নেই।’ কী কারণে আবরারের মৃত্যু হয়েছে? জানতে চাইলে চিকিৎসক এলাহী বলেন, ‘আঘাতজনিত কারণে সে মারা গেছে। সেই সম্ভাবনাই বেশি।’

চকবাজার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) দেলোয়ার হোসেন বলেন, রাত পৌনে তিনটার দিকে তাঁরা খবর পান শের-ই–বাংলা হলের বাইরে নিচতলায় একি ছেলে পড়ে আছে। হল কর্তৃপক্ষই পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে তিনটার দিকে ঘটনাস্থলে যান তাঁরা। ছেলেটির পরনে ছিল ট্রাউজার ও শার্ট।

আঘাতের চিহ্নের কথা উল্লেখ করে দেলোয়ার হোসেন বলেন, আঘাত কোনো অস্ত্রের নয়। কোনো কিছু দিয়ে বাড়ি দেওয়া হয়েছে। লাশের ময়নাতদন্ত হবে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের (২১) হত্যার ঘটনায় রাসেল ও ফুয়াদ নামে দু’জনকে আটক করছে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁদের আটক করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল। অন্যদিকে মুস্তাকিম ফুয়াদ বুয়েট ছাত্রলীগের সহসভাপতি।

আজ সোমবার সকালে তাদের আটক করা হয়। আটক রাসেল ও ফুয়াদ বুয়েটের শিক্ষার্থী।

চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাব হোসেন দুজনকে আটকের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

রহস্যজনক মৃত্যুর আগে ভারতকে সমুদ্র বন্দর, পানি ও গ্যাস দেয়ার চুক্তির বিরোধিতা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ। শনিবার বিকাল সাড়ে ৫ টায় তিনি তার ফেসবুকে এই স্ট্যাটাসটি দেন। এরপর রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার।

আবরারে সহপাঠীরা জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আবরার সক্রিয় ছিলেন। লেখালেখি করতেন। এ কারণে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা।

আবরার সর্বশেষ ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘‘১.৪৭ এ দেশভাগের পর দেশের পশ্চিমাংশে কোন সমুদ্রবন্দর ছিল না। তৎকালীন সরকার ৬ মাসের জন্য কলকাতা বন্দর ব্যবহারের জন্য ভারতের কাছে অনুরোধ করল। কিন্তু দাদারা নিজেদের রাস্তা নিজেদের মাপার পরামর্শ দিছিলো। বাধ্য হয়ে দুর্ভিক্ষ দমনে উদ্বোধনের আগেই মংলা বন্দর খুলে দেওয়া হয়েছিল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ ইন্ডিয়াকে সে মংলা বন্দর ব্যবহারের জন্য হাত পাততে হচ্ছে।

২.কাবেরি নদীর পানি ছাড়াছাড়ি নিয়ে কানাড়ি আর তামিলদের কামড়াকামড়ি কয়েকবছর আগে শিরোনাম হয়েছিল। যে দেশের এক রাজ্যই অন্যকে পানি দিতে চাই না সেখানে আমরা বিনিময় ছাড়া দিনে দেড়লাখ কিউবিক মিটার পানি দিব।

৩.কয়েকবছর আগে নিজেদের সম্পদ রক্ষার দোহাই দিয়ে উত্তরভারত কয়লা-পাথর রপ্তানি বন্ধ করেছে অথচ আমরা তাদের গ্যাস দিব। যেখানে গ্যাসের অভাবে নিজেদের কারখানা বন্ধ করা লাগে সেখানে নিজের সম্পদ দিয়ে বন্ধুর বাতি জ্বালাব।

হয়তো এসুখের খোঁজেই কবি লিখেছেন-

“পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি

এ জীবন মন সকলি দাও,

তার মত সুখ কোথাও কি আছেআপনার কথা ভুলিয়া যাও।”

সর্বশেষ

কুষ্টিয়ায় আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল সমর্থকদের সংঘর্ষে আহত ৭

কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল খেলা নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডার পর সংঘর্ষে জড়িয়ে অন্তত সাতজন...

কুষ্টিয়ায় শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানি, বরখাস্ত প্রধান শিক্ষককে পুলিশে সোপর্দ

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে পঞ্চম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানির মামলায় বরখাস্ত প্রধান শিক্ষককে বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর)...

কুষ্টিয়ায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২

কুষ্টিয়ায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় একটি শিশুসহ দু’জনের মৃত্যু হয়েছে।   বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে...

পাসপোর্ট সংশোধনে সরকারের নতুন নির্দেশনা

এনআইডির তথ্য অনুযায়ী পাসপোর্ট রি-ইস্যুর নির্দেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পাসপোর্ট...

আরও পড়ুন

কুষ্টিয়ায় শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানি, বরখাস্ত প্রধান শিক্ষককে পুলিশে সোপর্দ

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে পঞ্চম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানির মামলায় বরখাস্ত প্রধান শিক্ষককে বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর)...

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাইলিংয়ের সময় ক্রেন ছিড়ে নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) নির্মাণাধীন দ্বিতীয় প্রশাসন ভবনের পাশে পাইলিংয়ের সময় মাথার আঘাত পেয়ে দুর্ঘটনাবশত...

ব্রাজিলের পতাকা টাঙাতে গিয়ে কুষ্টিয়ার মাদ্রাসা ছাত্রের মৃত্যু

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে সুপারি গাছে ব্রাজিলের পতাকা টাঙাতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে মিঠু শেখ (১৪) নামে...