অ্যাশেজ সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে ফিক্সিংয়ের চেষ্টা চলেছে। শুধু তা-ই নয়, দীর্ঘমেয়াদি অনুসন্ধান শেষে সংবাদমাধ্যম দুই বাজিকরের নামও প্রকাশ করেছে—ভারতীয় ব্যবসায়ী সোবার্স জোবান ও তাঁর অংশীদার প্রিয়াঙ্ক সাক্সেনা। ‘সান’-এর ছদ্মবেশী প্রতিবেদককে এই দুই বাজিকর বলেছেন, তাঁদের ফিক্সিং আওতার মধ্যে রয়েছে বিগব্যাশ, আইপিএল এমনকি বিপিএলও! বিপিএলে স্পট ফিক্সিং করতে কত টাকা লাগবে, সেটিও বলেছেন জোবান।
দুবাইয়ের কেমপিনিস্কি হোটেলে রাতপ্রতি ৫০০ পাউন্ড মূল্যের স্যুইটে বসে এই বোমা ফাটান দুই বাজিকর। তাঁদের এই ফিক্সিং কারসাজির নেপথ্যে রয়েছেন এক অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার এবং দেশটির এক ক্রিকেট সংগঠক। এ দুই ব্যক্তির নাম প্রকাশ করা হয়নি। তবে এ দুজনের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে বিগব্যাশে তাঁরা ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দিয়ে থাকেন।
‘সান’-এর সেই ছদ্মবেশী প্রতিবেদককে বিপিএলে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দেন প্রিয়াঙ্ক সাক্সেনা। গত মঙ্গলবার শেষ হয়েছে বিপিএলের এবারের আসর। প্রিয়াঙ্ক সেই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আপনি বাংলাদেশে আগ্রহী? সবকিছু পাবেন। চারটি সেশনই। হার এবং জিত।’ প্রিয়াঙ্ক সম্ভবত ‘সবকিছু’ বলতে ম্যাচের সব তথ্য বোঝাতে চেয়েছেন। ‘চারটি সেশন’ হয়তো—প্রতিদিন দুটি করে ম্যাচে দুবার করে ব্যাটিং-বোলিং মিলিয়ে মোট চার সেশন। আর ‘হার-জিত’—সম্ভবত ম্যাচের ফল পাতানো!
সেই প্রতিবেদককে প্রিয়াঙ্ক আরও বলেন, বিপিএলে ফিক্সিং করতে খরচ হবে ‘১ লাখ ৭৫ হাজার পাউন্ড। এই সন্ধ্যার মধ্যে আমাকে একটু খোঁজখবর নিতে দিন। আমি সবকিছু সুন্দর করে পাতিয়ে ফেলব।’
জোবান জানান, ফিক্সিং করার জন্য খেলোয়াড়েরা হুন্ডির মাধ্যমে নগদ অর্থ পেয়ে থাকেন। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বড় অঙ্কের অর্থ থাকলে সন্দেহের আওতায় পড়তে হবে, এই ঝুঁকি থেকে বাঁচতেই হুন্ডির মাধ্যমে টাকা লেনদেন হয়ে থাকে। ব্যাপারটা বোঝাতে গিয়ে জোবান কেপ টাউনের দুই মধ্যস্থতাকারীর উদাহরণ টানেন যাঁরা এক দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটারকে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা দিয়ে থাকেন। তবে সেই ক্রিকেটারের নাম প্রকাশ করা হয়নি।
জোবান আরও জানান, আইপিএলে ম্যাচ পাতানো থেকে খেলোয়াড়েরা ৬০ লাখ পাউন্ডের মতো আয় করতে পারেন। আর অবৈধ বাজি থেকে বুকিদের আয় তার প্রায় ছয় গুণ! বিগব্যাশ নিয়ে সেই প্রতিবেদককে জোবান বলেন, ‘আপনি কী চান? বিগব্যাশে জাদু দেখতে চান? বিগব্যাশে আমরা পারি, হার এবং জিত এবং কিছু ম্যাচ। আমাদের হাতে খবর আছে, কিছু নিশ্চিত খবর। সেটা ‘এক্স’ এবং আরেকজনের মাধ্যমে।’ এই ‘এক্স’ হলেন সেই অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার এবং ‘আরেকজন’—সেই ক্রিকেট সংগঠক।
জোবানের জবানির কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য, তা অবশ্য প্রশ্নের। পার্থ টেস্টে ম্যাচ পাতানো চেষ্টার অভিযোগ তদন্তের পর ইতিমধ্যেই নাকচ করে দিয়েছে আইসিসি।
তবে জোবান আরও দুটি চমকপ্রদ তথ্য দিয়েছেন, দিল্লির স্থানীয় ক্রিকেট দলে তিনি নাকি বিরাট কোহলির সঙ্গে খেলেছেন! আইপিএলে ম্যাচ চলাকালে তিনি ওভার শুরুর আগে খেলোয়াড়দের ‘সিগন্যাল’-ও পাঠান। এদিকে জোবানের বাবা দিল্লিতে একটি ক্রিকেট কোচিং সেন্টারের মালিক বালজিৎ সিং জোবান বলেছেন, ‘সে খারাপ কিছু করে থাকলে ঝুলিয়ে দাও। তাকে জিজ্ঞেস করেছি কিন্তু বলেছে খারাপ কিছু করেনি। সে এখন পূর্ণবয়স্ক, আমি পরামর্শ দিতে পারি না।’ সূত্র: দ্য সান, ফক্স।