আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর আয় ও সম্পদ গত ১০ বছরের তুলনায় বেড়েছে কয়েকগুণ। তারা দুইজনই কুষ্টিয়া জেলার বাসিন্দা এবং হেভিওয়েট প্রার্থী।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলা রিটার্নিং কার্যালয় ও সহকারী রিটার্নিং কার্যালয়ে মনোনয়নের সঙ্গে দাখিল করা হলফনামা থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
তবে এ হলফনামা অনুযায়ী তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর নিজ নামে কোনো বাড়ি নেই, আর মাহবুব উল হানিফের স্ত্রীর কোনো সম্পদ নেই।
কুষ্টিয়া-২ (ভেড়ামারা-মিরপুর) আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে হলফনামায় দেওয়া তথ্যানুযায়ী পেশায় রাজনৈতিক কর্মী ও প্রকৌশলী তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তার আয়ের বড় অংশ আসে ব্যবসা, বেতন-ভাতা, ব্যাংকের লভ্যাংশ ও টিভি টকশো থেকে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জমা দেয়া হলফনামায় ইনুর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শম কম্পিউটার্স লিমিটেড থেকে বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে ৭ লাখ ৪৪ হাজার ১২৯ টাকা।
বেতনভাতা থেকে ইনুর আয় ২৩ লাখ ২৭ হাজার ৫৮০ টাকা। টিভি টকশো ও ব্যাংক সুদ থেকে পেয়েছেন ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৯১৪ টাকা। দশম সংসদ জাতীয় নির্বাচনে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গত ৫ বছরে ইনুর আয় অনেকটা বেড়েছে। পাশাপাশি এই নেতা ও তার স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণও বেড়েছে।
বর্তমানে ইনুর নগদ টাকা আছে ৫০ লাখ ৬৬ হাজার ৩৮৬ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমার পরিমাণ ৪৪ লাখ ৫১ হাজার ৪৮০ টাকা। শেয়ার ও পোস্ট অফিস মিলিয়ে আছে ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
তবে নবম সংসদ নির্বাচনে ইনুর নামে নগদ টাকা ছিল ১ লাখ ১১ হাজার ২০০ টাকা ও সর্বশেষ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ অর্থের পরিমাণ ছিল ৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। সে তুলনায় নগদ বেড়েছে প্রায় ৮ গুণ। এছাড়া ইনুর স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ১ কোটি ৮১ লাখ ২ হাজার ৩০৯ টাকা মূল্যের ৩টি গাড়ি।
কিন্তু নিজের নামে তার কোনো বাড়ি বা ফ্লাট নেই। তবে রাজধানীর পূর্বাচলে ১০ কাঠার প্লট আছে। আসবাবপত্র আছে ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকার। এছাড়া তার স্বর্ণ রয়েছে ২৫ ভরি। ইনুর নামে একটি মামলা আছে। এটি পল্টন থানায়, যা চলমান রয়েছে। তার নামে থাকা আরেকটি মামলা নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।
হলফনামায় ইনুর স্ত্রী আফরোজা হক রিনার আয় ও সম্পদ বাড়লেও আয়ের কোনো উৎস দেখানো হয়নি। গত ১০ বছরে ইনুর স্ত্রীর সম্পদ ও অর্থ দুটোই বেড়েছে। আফরোজা হক রিনার নগদ টাকা আছে ৬০ লাখ ৩ হাজার ২৫৮, ব্যাংকে জমা আছে ১৪ লাখ ২৮ হাজার ৬৭৭ টাকা। এছাড়া শেয়ার আছে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার। স্ত্রীর একটি অ্যাপার্টমেন্ট আছে, যার দাম ৭ লাখ ৪৮ হাজার ১৪৫ টাকা। ইনুর স্ত্রীর স্বর্ণ ১০ ভরি, আসবাবপত্র আছে ৬৫ হাজার টাকার। এছাড়া উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া তিন বিঘা ৪ শতাংশ জমির ওপর দোতলা বাড়ি রয়েছে।
নবম সংসদ নির্বাচনে রিনার নামে ব্যাংকে ৮ হাজার ৮১ টাকা ও দশম সংসদ নির্বাচনে ছিল ৮০ হাজার ৪৯৩ টাকা। এছাড়া বন্ড, শেয়ারসহ অন্যান্য দিয়ে অর্থের পরিমাণ নবম ও দশম সংসদ নির্বাচনে ছিল ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
এদিকে কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জমা দেয়া হলফনামার তথ্যে দেখা যায় তার সম্পদের পরিমাণ ৩ গুণ বেড়েছে। সব মিলিয়ে হানিফের সম্পদের পরিমাণ ২৩ কোটি ৫৪ লাখ ৫৬ হাজার ৭৩৮ টাকা। যা দশম সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামায় দেখানো হয় ৮ কোটি ৫০ লাখ ৭৬ হাজার ৯০৪ টাকা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় হানিফের ব্যবসা থেকে আয় দেখানো হয়েছে ২ কোটি ১০ লাখ ৩৩ হাজার ২৯১ টাকা। তবে তিনি কী ব্যবসা করেন তা উল্লেখ করা হয়নি। বাড়ি ও দোকানভাড়া থেকে আয় ৭ লাখ ৭৬ হাজার ১৬০ টাকা। এমপি ভাতা থেকে পান ৬ লাখ ৬০ হাজার ও অন্যান্য খাত থেকে ৮ হাজার ৪৪৯ টাকা।
হানিফের অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ টাকা আছে ৭২ লাখ ৭১ হাজার ১৩৯ টাকা। ব্যাংকে জমা আছে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৬৩ টাকা। বন্ড, শেয়ারসহ অন্যান্য খাতে আছে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৬ হাজার ৪০০ টাকা। হানিফের তিনটি গাড়ি আছে যার মূল্য ১ কোটি ৯২ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে অকৃষি জমি আছে ১০ কোটি ৪১ লাখ ৯৮ হাজার ৪৫৬ টাকার। নয়াপল্টনে একটি বাড়ি আছে যার মূল্য ৮ লাখ টাকা, গাজীপুরে ৩ একর জমি, যার মূল্য ১ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এছাড়া গুলশানে ৫ কাঠা ৯ ছটাক জমি আছে যার মূল্য ৩ কোটি ৩৯ লাখ ১৭ হাজার ১৮০ টাকা। চৌড়হাসে ১২ শতাংশ জমিসহ দালানের মূল্য ১ কোটি ৯৬ লাখ ৬৫ হাজার ৫০০ টাকা।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করা হলফনামায় হানিফের বার্ষিক আয় দেখানো হয় ৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাড়ি, দোকান ভাড়া থেকে আয় ৭ লাখ ২৩ হাজার ৮০০ টাকা। মৎস্য ব্যবসা থেকে আয় ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এছাড়া চাকরি থেকে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা আয় দেখানো হয়। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে হানিফের নামে নগদ টাকা ছিল ৪৩ লাখ ৭৯ হাজার ১৫৪ টাকা।
হানিফের নামে ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অর্থের পরিমাণ ছিল ৮১ হাজার ৪৭৪ টাকা। তবে তার স্ত্রীর নামে দেখানো হয় ২ লাখ ৪৯ হাজার ৫১ টাকা। হানিফের নিজ নামে শেয়ার ছিল ১ কোটি ৩ লাখ ২৫ টাকা ও বন্ড ২০ লাখ টাকা মূল্যের। এছাড়া স্ত্রীর নামে শেয়ার ছিল ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জমা দেয়া হলফনামায় স্ত্রীর নামে সব মিলিয়ে ১ কোটি ৬৪ লাখ ২৫ হাজার ৯১৭ টাকার সম্পদ দেখানো হলেও এবার হলফনামায় হানিফের স্ত্রীর নামে কোনো সম্পদ ও অর্থ দেখানো হয়নি। গত বছর ব্যাংকে দেনা দেখানো হলেও এবার কোনো দেনার কথা হলফনামায় পাওয়া যায়নি।