রাজধানীর জনপ্রিয় বিপণি বিতান বসুন্ধরা সিটি শপিং করূপ্লক্সের নিচতলায় সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এক তরুণের লাশ পাওয়া গেছে; সাত তলা থেকে পড়ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশের ধারণা।
অমিত নামের ২০ বছর বয়সী ওই তরুণ মিটফোর্ড এলাকার একটি ওষুধের দোকানের কর্মচারী। পুরান ঢাকার বাবুবাজারে তাদের বাসা।
পুলিশের তেজগাঁও জোনের সহকারী কমিশনার আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন বলেন, বসুন্ধরা সিটির নিচতলায় পূর্ব দিকের চলন্ত সিঁড়ির কাছে খোলা জায়গায় অমিতের লাশ পাওয়া যায়। আর তার মোবাইল ফোন, স্যান্ডেল ও চশমা পাওয়া গেছে সাত তলায়।
গতকাল মঙ্গলবার এই বিপণি বিতানে সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় সপ্তম তলা পর্যন্ত সব দোকান-পাট ছিল বন্ধ। তবে অষ্টম তলার সিনেপ্লেক্স বরাবরের মতই খোলা ছিল। ফলে অষ্টম তলা ছাড়া অন্য কোথাও লোকজন ছিল না। সহকারী কমিশনার তৈয়ব বলেন, “মোবাইল, স্যান্ডেল, চশমা সাত তলায় পড়ে থাকায় ধারণা হয়, সেখান থেকে পড়েই অমিতের মৃত্যু হয়েছে। ওই মোবাইল ফোনে তার বাবার নম্বর পেয়ে যোগাযোগ করার পর তিনি ছুটে এসে ছেলের লাশ শনাক্ত করেন।”
বসুন্ধরা সিটির নিরাপত্তা প্রধান শাহাবুদ্দিন চাকলাদার বলেন, বেলা ১১টার কিছু পরে উপর থেকে ভারী কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ পেয়ে নিচতলায় দায়িত্বরত নিরাপত্তা কর্মী এগিয়ে যান এবং এক যুবককে পড়ে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে দেখি কোনো নড়াচড়া নেই, নিস্তেজ পড়ে আছে। তার মাথার দিক থেকে রক্ত বের হচ্ছিল। পরে খবর পেয়ে পুলিশ আসে।” শাহাবুদ্দিন বলেন, যেখানে অমিত পড়ে ছিলেন, ঠিক ওই বরাবর সপ্তম তলায় রেলিংয়ের কাছে মেঝের ওপর মোবাইল আর চশমা ছিল পাশাপাশি রাখা। একটি স্যান্ডেল সোজা, অন্যটি উল্টো হয়ে ছিল। কিন্তু বন্ধ মার্কেটের সাত তলায় অমিত কেন গেলেন- সে প্রশ্ন উঠেছে।
অমিতকে হত্যা করা হয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন পরিবারের সদস্যরা। অমিতের বাবা পুলিশকে বলেছেন, প্রতিদিনের মত সকাল বেলায় দুপুরের খাবার সঙ্গে নিয়ে অমিত দোকানের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়। দোকানে না গিয়ে অমিত বসুন্ধরা সিটিতে কেন গেলেন- সেটাই তার প্রশ্ন।
সহকারী কমিশনার তৈয়ব বলেন, “অমিতের বাবা আমাদের বলেছেন, তার ছেলে আত্মহত্যা করতে পারে না। কেউ তার ছেলেকে এখানে এনে ফেলে দিয়ে হত্যা করেছে।” অমিত সাততলায় গিয়ে আত্মহত্যা করেছেন, না কেউ তাকে ফেলে দিয়েছে, নাকি কেউ হত্যার পর তার স্যান্ডেল, মোবাইল, চশমা সেখানে রেখে এসেছে- এসব বিষয় মাথায় রেখেই তদন্ত করা হবে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
প্রশ্নের জবাবে বসুন্ধরা সিটির নিরাপত্তা প্রধান শাহাবুদ্দিন বলেন, সিনেপ্লেক্সের দর্শকদের জন্য নিচতলার গেইট খোলা হয় সকাল সাড়ে ৯টায়। প্রথম শো শুরু হয় সকাল সাড়ে ১০টায়। “সিনেমা দেখার জন্য সে বসুন্ধরা সিটিতে ঢুকে থাকতে পারে। সিনেমা হল আট তলায় হলেও সেখান থেকে সাত তলায় যাওয়ার ক্ষেত্রে তেমন কোনো বাধা নেই। চলন্ত সিঁড়ির সামনে শুধু একটা দড়ি দিয়ে আটকানো থাকে। সেই দড়ি গলিয়ে কারো চোখে না পড়েই সাততলায় যাওয়া যায়।”
আরেক প্রশ্নে শাহাবুদ্দিন বলেন, প্রতিটি ফ্লোরেই তাদের নিরাপত্তাকর্মী থাকেন। তবে তারা এক জায়গায় বসে না থেকে ঘুরে ঘুরে দেখেন। ফলে তাদের চোখ এড়িয়ে সপ্তম তলায় নামা কঠিন নয়।
ময়নাতদন্তের জন্য অমিতের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা তৈয়ব বলেন, “বসুন্ধরা সিটি কর্তৃপক্ষের কাছে সিসিটিভি ফুটেজ চাওয়া হয়েছে। ভিডিও পেলেই সব স্পষ্ট হবে।”