দেশের বিভিন্নস্থানে টানা কয়েক দিনের বৃষ্টি ও উজানে পানি বাড়ায় দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ৫টি জেলায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে পদ্মা অববাহিকার রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়া, পাবনা ও নাটোর অঞ্চলে ফের বন্যা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতের উত্তর প্রদেশ ও বিহার রাজ্যে প্রবল বর্ষণের কারণে বন্যা দেখা দেওয়ায় গঙ্গায় ফারাক্কা বাঁধের ১১৯টি গেইটের সবগুলোই খুলে দিয়েছে ভারত। এতে হু হু করে পানি ঢুকছে বাঁধের এ পাশে বাংলাদেশ অঞ্চলে। একে তো টানা বর্ষণের ফলে বৃষ্টির পানি, এর উপর ফারাক্কা খুলে দেওয়ায় অসময়ে দেখা দিয়েছে বন্যা।
যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রকৌশলীরা বলছেন, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে নদীর পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতির কারণ ফারাক্কা বাঁধ নয়। অতিবর্ষণেেই স্বল্পকালীন বন্যা দেখা দিয়েছে, বৃষ্টি কমলে পানি নেমে যাবে।
ভারি বৃষ্টিপাতের জেরে সৃষ্ট বন্যা থেকে বিহারের রাজধানী পাটনাসহ আরো ১২ জেলাকে রক্ষার জন্য গত সোমবার ফারাক্কা বাঁধের ১০৯টি গেটের সবই খুলে দিয়েছে ভারত। ফলে গঙ্গা (পদ্মা) ছাড়াও পানি বেড়েছে মহানন্দা ও কালিন্দী নদীতে। এতে মুর্শিদাবাদের একাংশ সহ বাংলাদেশে বন্যাআশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এরই মধ্যে সুরমা ও কুশিয়ারা ছাড়া দেশের প্রায় সব প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় পদ্মা নদীর রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ও শরীয়তপুরের সুরেশ্বর পয়েন্টে বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছিল।
আর কুষ্টিয়ার কামারখালী পয়েন্টে গড়াই বইছিল বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে। পানি বৃদ্ধির হার অব্যাহত থাকলে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও ভাগ্যকূল পয়েন্টে পদ্মার পানি অ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকার নদীগুলোর পানি বৃদ্ধির এই প্রবণতা আগামী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে পাউবো।
সেপ্টেম্বরের শুরুতে অসময়ে এই বন্যার প্রধান কারণ হিসেবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিশেষজ্ঞরা অতি বৃষ্টিকে দায়ি করছেন। তারা বলছেন, ফারাক্কা বাঁধ খুলে দেওয়ার প্রভাবে উদ্ভুত এই বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। টানা কয়েক দিনের বৃষ্টি এবং উজানে পানি বাড়ায় দেশের পশ্চিমাঞ্চলে, বিশেষ করে পদ্মা অববাহিকার রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়া ও নাটোর অঞ্চলে স্বল্পকালীন বন্যা হতে পারে বলে আগেই আভাস দিয়েছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ড বিশেষজ্ঞরা।
এ প্রসঙ্গে পাউবো’র বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, এই মৌসুমে ভারত অংশের ফারাক্কা বাঁধের গেইটগুলো খোলাই থাকে। তাই চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে ভারতীয় ফারাক্কা বাঁধ খুলে দেওয়া তেমন কোনো প্রভাব নেই। বাঁধের একাংশ ওইখানে আগে থেকেই খোলা ছিল। এখন আমাদের দেশে যে পানিটা আসছে সেটা টানা ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে। বৃষ্টিপাত কমে গেলে আমাদের মধ্যাঞ্চল হয়ে পানিটা নেমে যাবে। ফলে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।
তিনি বলেন, ভারী বৃষ্টির কারণে গত জুলাই মাসের বন্যাও হয়েছিল। মৌসুমী বৃষ্টিপাতের কারণে এখন একই ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এই বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। বৃষ্টি কমলেই পানি নেমে যাবে বন্যা থাকবে না।
এদিকে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ‘প্রচারিত ও প্রকাশিত বিভ্রান্তি’ দূর করতে সোমবার একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে । এতে বলা হয়, ভারত কর্তৃক ফারাক্কা বাঁধ খুলে দেওয়া এবং সেজন্য বন্যার আশঙ্কা রয়েছে- এমন একটি সংবাদ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে। প্রকৃত তথ্য হচ্ছে, প্রতি বছরই জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ফারাক্কা বাঁধের গেইটগুলো খোলা থাকে। এটি নিয়মিত ব্যবস্থাপনারই অংশ।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গত কয়েকদিন ধরে গঙ্গা, পদ্মা অববাহিকার উভয় অংশে ‘নিম্নচাপজনিত অতিবৃষ্টির’ ফলে নতুন করে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সে কারণেই উজানে ভারতের বিভিন্ন জেলায় ও ভাটিতে বাংলাদেশে বন্যার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানানো হয় ।