ওরা রাখাল বালক, সারাক্ষন কাজ আর কাজ। কাজের মাঝেই ওদের কখনো সঠিক সময়ে নাওয়া খাওয়া হয়ে ওঠেনা ওদের । বছরের এক দিনও ছুটি মেলেনা ওদের জীবনে । ফজরের আযান শুনে ভোরের আলো ছড়িয়ে পড়ার আগেই রাখালরা বেড়িয়ে পড়ে মাঠে-তেপান্তরে গো-ঘাসের সন্ধানে । সূর্য্যাদ্বয়ের সাথে সাথেই ঘাস নিয়ে ফিরে এসে আবার বাসিপান্তা খেয়ে কখনো বা না খেয়েই ছুটে চলে গরু-মহিষ চড়াতে।
রাখাল বালকদের মাসিক বেতন নয়, এক হাজার থকে ১৫শ টাকা বছর চুক্তিতে কাজ করতে হয় । তাদের চাহিদা খুব বেশী কিছু নয়! শখ আহলাদ বলতে বছরে ২ টি লুঙ্গি, হাট-বাজার থেকে কেনা সস্তা দামের রঙ্গিন একটি জামা আর লাল গামছা পেলেই মাহাখুশি রাখাল বালকেরা । দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়ায় স্কুলের বারান্দায় কখনো আর পা রাখা হয়নি ওদের । তাই শিখা হয়নি অ-আ, ক-খ ……।
সারাক্ষন কাজ আর কাজের ফাঁকে গৃহস্থের বাড়ী থেকে গামছায় বেধে আনা চিড়া-মুড়ি দিয়ে মাঠেই শেষ করে দুপুরের খাবার । খালে কিংবা বিলে গরু-মহিষের সাথেই গামছা পড়ে গোসলের পর্বটাও সেরে নেয় ওরা ।
সারাদিন বিরামহীন ভাবে নিয়োজিত থাকে গরু-মহিষ চড়ানোর কাজে। যেন গরু-মহিষের সাথেই সারাক্ষন ভাব-ভালোবাসা ওদের । কখনো কখনো ক্লান্তীলগ্নে কোন এক বৃক্ষের ছায়ায় বসে আধুনিক, ভাটিয়ালি,লালনগীতিসহ নানা ধরনের গান গেয়ে মনের খোরাক মেঠিয়ে থাকে । দুপুর গড়িয়ে সকালের সর্য্যটা যখন শেষ বিকেলের জানান দিয়ে পশ্চিম আকাশে হারিয়ে যেতে থাকে, ঠিক তখনই রাখাল বালকেরা গরু-মহিষ নিয়ে ফিরতে থাকে গৃহস্থের বাড়ীর দিকে ।
সন্ধ্যায় আরেক দফায় গরু-মহিষকে কাওয়ানোর পর্বটা শেষ করে তবেই যেন স্বস্তিতে হয় ওদের রাতের খাবার । খাবার শেষে মনের আনন্দে গান গাইতে গাইতে ঘুমিয়ে পড়ে আবার পরেন দিন ফজরের আযানের অপেক্ষায় ।
উপরের ছবিটি তোলা হয় ২০১৬ সনের পহেলা মে । সেদিন বগুড়ার গাবতলী উপজলার কলাকোপা মাঠে রাখাল বালককে মহিষ চড়াতে দেখে তাকে জিজ্ঞাসা ছিল আমার, সে মে দিবস চেনে কি? জবাবে রাখাল বালক বলে ছিল, আমাগো ঈদের দিনেও কাজ করতে হয় এর মধ্যে বছরে কত দিবস আসে যায় এর মধ্যেই আমাগো প্রতিদিন মহিষ চড়াতে হয় ।
আজ পহেলা মে দিবস ক’জন ভাববে ওই রাখল বালকদের কথা ?