সীমান্তের ‘চোরাপকেট’ দিয়ে দেদারসে পাচার হয়ে আসছে ভারতীয় নিম্নমানের চাপাতি। এসব চা-পাতিতে সয়লাব সীমান্তবর্তী হাটবাজারগুলো। বিশেষ করে যশোরের ঝিকরগাছা, চৌগাছা, শার্শা, বাঁগআচড়া, মনিরামপুর, খুলনা, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া ও কেশবপুরের হাটবাজারে এসব চা-পাতি দিয়ে বানানো চা গুনগত মান নির্ণয় ছাড়াই বিক্রি হচ্ছে হরহামেশা। এর ফলে জনস্বাস্থ্যের জন্য যা হুমকি স্বরুপ বলে মন্তব্য করেন স্বাস্থ্য বিশেজ্ঞরা।
জানা গেছে, পাচার হয়ে আসা ভারতীয় নিম্নমানের এসব চা-পাতি কম মূল্যে দেশের হাট-বাজার, শহর-বন্দর-গ্রামে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এ ব্যাপারে প্রশাসন কিংবা সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের কোনও মাথা ব্যাথা নেই। ব্যবসায়ীদের মতে, দেশের চা শিল্পকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করার পাশাপাশি নিম্নমানের এই চাপাতি ঢুকিয়ে দিয়ে চা পানে অভ্যস্তদের সাথে বড় ধরনের প্রতারণা করা হচ্ছে।
চা ব্যবসার সাথে দীর্ঘকাল ধরে জড়িত ব্যবসায়ীদের একটি সূত্র দাবি করেছেন, বাংলাদেশ ‘টি বোর্ড’র উদাসীনতা ও খামখেয়ালীপনা সিদ্ধান্তের কারণে ভারতীয় চায়ের অবৈধ অনুপ্রবেশ ঘটছে। তাদের মতে, এদেশের ‘রপ্তানীমুখী’ চা শিল্পকে ধ্বংস করার ‘নীলনকশা’র পাশাপাশি নিম্নমানের ভারতীয় চা পান করার ফলে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ছে। অথচ পণ্যের গুণগতমান নির্ণয়কারী সরকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউট (বিএসটিআই) কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে কোনও মাথা ব্যথা নেই।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, সীমান্তের চোরাপকেটগুলো দিয়ে প্রতিনিয়ত ভারতীয় এই নিম্নমানের চাপাতি পাচার হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে যশোরের ঝিকরগাছা, চৌগাছা, শার্শা, বাঁগআচড়া, মনিরামপুর, খুলনা, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া ও কেশবপুরের হাট-বাজারে। এ কাজে নারী চোরাচালানীদের বেশি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এসব নারীরা বেনাপোল থেকে ছেড়ে আসা কমিউটার ট্রেন ও বিভিন্ন পরিবহনে খোলা ও অরক্ষিত অবস্থায় নিম্নমানের চাপাতি এনে সীমান্তবর্তী জেলাগুলো ছোট-বড় সব বাজারে পৌঁছে দিচ্ছে। এদিকে দেশীয় চায়ের গুনগতমান ঠিক থাকলেও ভারতীয় নিম্নমানের চায়ের অবৈধ অনুপ্রবেশের কারণে দেশিয় চায়ের বাজার মার খাচ্ছে। দেশীয় চা প্রতি কেজি ২৫০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। অথচ পাচার হয়ে আসা এসব ভারতীয় চা প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ বিষয়ে কথা হয় ঝিকরগাছা উপজেলার বল্লা বাজারের চা দোকানি শাহাজান কবিরের সাথে। তিনি জানান, অতি লাভের আশায় অনেক দোকানি ভারতীয় নিন্মমানের চাপাতি দিয়ে চা বানান। এ ব্যাপারে ঝিকরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার শরিফুল ইসলাম জানান, যেহেতু পাচার হয়ে আসা এসব চাপাতি নিন্মমানের। তাই এইসব চাটপাতি দিয়ে বানানো চা পানে মানুষের স্বাস্থ্যহানীসহ বড় ধরনের রোগব্যাধী হতে পারে।
ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জানান, বিষয়টি আগামী মাসিক আইন শৃঙ্খলা সভায় উপস্থাপন করা হবে এবং সংশ্লিষ্ঠ উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কম্পানির সুবেদার মেজরসহ সংশ্লিষ্টদের পাচার বন্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হবে।