মাথার ওপর ঋণের বোঝা ৭ হাজার কোটি টাকা আখের স্বল্পতা-অদক্ষ জনবলে উৎপাদন ব্যাহত।
দেশের চিনিকলগুলোর ব্যাংকের ঋণ সুদে-আসলে ৭ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থায় অর্থাভাবে চিনিকলগুলোর সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। এছাড়া আখের স্বল্পতা, পুরনো মেশিনারিজ ও অদক্ষ জনবলের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে মিলগুলোতে লোকসান হচ্ছে।
শিল্প মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) চেয়ারম্যান অজিত কুমার পাল।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি আমির হোসেন আমু। বৈঠকে কমিটির সদস্য শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, একেএম ফজলুল হক, হাবিবুর রহমান মোল্লা ও কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কমিটি বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, কমিটিকে বিএসএফআইসির চেয়ারম্যান জানান, ব্যাংক ঋণের সুদ মওকুফ করার ব্যবস্থা ও ট্রেডগ্যাপের কারণে ১ হাজার ২৭০ কোটি টাকা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে পাওনা রয়েছে। যে টাকা পাওয়া গেলে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। তিনি আরও জানান, নিয়োগ বন্ধ থাকায় চিনিকলগুলো পদশূন্য হয়ে যাচ্ছে। কৃষককে সময়মতো মূল্য পরিশোধ না করায় আখ উৎপাদনে মনোযোগী হচ্ছেন না তারা। আর উৎপাদন করলেও গুড় উৎপাদনকারীদের কাছে বিক্রি করছেন। ফলে চিনি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে আলোচনাকালে কমিটির সভাপতি আমির হোসেন আমু বলেন, দেশের চিনির চাহিদা ১৬ লাখ টন। ১ লাখ ৪০ হাজার টন সুগার করপোরেশন উৎপাদন করে। অবশিষ্ট প্রাইভেট সেক্টর উৎপাদন করে। প্রাইভেট সেক্টরের কারণে সুগার করপোরেশনের মিলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানকে মাথাভারি না করে শুধু টেকনিক্যাল লোক নিয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। তিনি অর্থাভাব কাটাতে ঠাকুরগাঁও ও কুষ্টিয়ায় সুগার মিলের জমিতে দুইটি বিদ্যুৎ প্লান্ট নির্মাণের সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দেন।
বৈঠকে শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার চিনি শিল্পে অসৎ সব কর্মকর্তা কর্মচারীর অপসারণের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, বিনা কাজে ওভারটাইম দেওয়া বন্ধ করতে হবে। ইউরোপ-আমেরিকার অনেক ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি ঋণ সহকারে চিনি শিল্পে বিনিয়োগ করতে চায়। তারা সুগার মিলে নতুন যন্ত্রপাতি স্থাপন ও দুই শতাংশ সুদে ঋণ দিতে আগ্রহী। এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, বেসরকারি সুগারমিলগুলো লাভ করতে পারলে সরকারি প্রতিষ্ঠান পারবে না কেন? সরকারি মিলগুলোকে লাভজনক করতে হবে। এজন্য সচিব থেকে শুরু করে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কাজ করতে হবে।
কমিটি সূত্র জানায়, বৈঠকে বিএসএফআইসি ছাড়াও পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরের কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় অধিদপ্তরের কাজের পরিধি আরও বাড়াতে ও গতিশীল করার সুপারিশ করা হয়। এছাড়া বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন (বিএসইসি) থেকে উৎপাদিত পণ্য সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বলা হয়।