অফিসারদের ওপর ছড়ি ঘোরাচ্ছেন প্রতিনিধিরা
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা পরিষদের সরকারী ৮ দপ্তরে স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়েছেন। দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের প্যাডে ৭৫, কুষ্টিয়া-১/২৪ স্মারক নম্বরে কুষ্টিয়া-১ দৌলতপুর আসনের সংসদ সদস্য আ. কা. ম. সরওয়ার জাহান বাদশা স্বাক্ষর করে তার মনোনিত ৮জন ব্যক্তিকে সরকারী ৮ দপ্তরের প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়েছেন।
এদের মধ্যে রয়েছেন, দৌলতপুর প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসে মো. তৌহিদুল ইসলাম, দৌলতপুর প্রাণী সম্পদ অফিসে মো. ইসহাক আলী, দৌলতপুর কৃষি অফিসে সর্দার মোফাজ্জেল হক, দৌলতপুর যুব উন্নয়ন অফিসে আব্দুল কাদের, দৌলতপুর মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে মো. হাসিনুর রহমান, দৌলতপুর প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে মো. হায়দার আলী, দৌলতপুর সমাজসেবা অফিসে মো. টিপু নেওয়াজ ও দৌলতপুর মৎস্য অফিসে জিয়ারুল ইসলাম।
প্রতিনিধি নিয়োগের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে ‘দৌলতপুর উপজেলাধীন যে সকল সরকারী কার্যালয় আছে সেগুলোর মিটিং বা অফিসিয়াল কোন কাজে অনেক সময় আমার গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য উপস্থিত থাকতে পারিনা। তাই উক্ত কার্যালয়গুলোতে আমার প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হলো। আমার অনুপস্থিতিতে উক্ত প্রতিনিধিবর্গ আপনার বিভিন্ন কার্যালয়ের মিটিং এবং অফিসিয়াল যোগাযোগ রক্ষা করবে’। এদিকে দায়িত্ব পাওয়ার পর এমপি’র নিয়োগপ্রাপ্ত প্রতিনিধিরা উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন অফিসে গিয়ে অফিসারদের ওপর ছড়ি ঘোরাতে শুরু করেছেন।
এনিয়ে মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে দৌলতপুর প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসে এমপি’র নিয়োগপ্রাপ্ত প্রতিনিধি হায়দার আলীর সাথে ফিলিপনগর ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুল হক কবিরাজের হাতাহাতি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পরে স্থানীয়দের উপস্থিতিতে উভয়কে ঘটনাস্থল থেকে অন্যত্র ডেকে নিয়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়। এরআগের দিন সোমবার সকালে দৌলতখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিবর রহমান ও সদ্য অবসরে যাওয়া ডিজিএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইলিয়াস হোসেন দৌলতপুর মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে শিক্ষা সংক্রান্ত দাপ্তরিক কাজে গেলে এমপি’র প্রতিনিধি হায়দার আলী ও হাসিনুর রহমান ওই দুই শিক্ষককে শিক্ষা অফিসারের সামনে বসা চেয়ার থেকে উঠিয়ে দেন। এসময় তারা দাম্ভিকতার সাথে বলেন, ‘আপনারা জানেন না আমরা এমপি’র প্রতিনিধি, আমাদের চেয়ার না দিয়ে আপনারা চেয়ারে বসে আছেন, আমাদের চেয়ার ছেড়ে দেন’। সেসময় প্রধান শিক্ষকদ্বয় নিজেদের অপমান বোধ করে চেয়ার ছেড়ে অফিস ত্যাগ করেন। এমনিভাবে প্রতিটি দপ্তরেই সার্বক্ষনিক এমপি’র প্রতিনিধিরা ঘোরাঘুরি করছেন আর সরকারী অফিসারদের ওপর ছড়ি ঘোরাচ্ছেন। আর যেকোন বিষয়ে অফিসারদের কাজে খবরদারি করছেন। গতকাল বুধবার দুপুরে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সরকারী কর্মকর্তা জানান, সরকারী কাজে এমপি মহোদয়ের প্রতিনিধিরা যেভাবে নাক গলাচ্ছেন তাতে করে সরকারী কাজ কর্ম ছেড়ে প্রতিনিধিদের হাতে দায়িত্ব দিয়ে আমাদের অফিস ছেড়ে চলে যেতে হবে।
তবে নিয়োগপ্রাপ্ত এমপি’র প্রতিনিধিদের অনেকেই বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে পূর্ব থেকেই জড়িত। কেউ মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভূক্তির নাম করে শত শত ব্যক্তিদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। আবার কেউ থানায় দালালি করে সামাজিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন একাধিকবার এমন ব্যক্তিও রয়েছেন এমপি’র প্রতিনিধির তালিকায়।
এমপি’র প্রতিনিধি নিয়োগের বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তার বলেন, প্রতিনিধি নিয়োগের বিষয়টি সরকারী কোন নীতিমালা আছে কিনা তা আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি নিয়ে এমপি স্যারের সাথে আলাপ করবো।