কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকা থেকে খননযন্ত্রের মাধ্যমে মাটি কেটে বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় প্রভাবশালীরা ইজারা ছাড়াই সম্পূর্ণ অবৈধভাবে গত বেশ কিছুদিন ধরে এই মাটি কাটার মচ্ছব চালিয়ে আসছেন।
এ ঘটনায় এলাকার লোকজন প্রতিবাদ করতে গেলে তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেয়া হচ্ছে। খবর পেয়েও এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন অজ্ঞাত কারণে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
জানা গেছে, উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নের বাহিরমাদী গ্রামের স্থানীয় আ.লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম ও ফারুক ডাক্তারের নেতৃত্বে একটি প্রভাবশালী চক্র সেখানকার সদর ঘাট এলাকায় বিশ্ববাঁধের নিচে পদ্মা নদীর সমতল ভূমি থেকে প্রায় এক মাস ধরে অব্যাহতভাবে মাটি কাটছেন।
সরকারি ইজারা ছাড়াই তারা ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে খননযন্ত্র ব্যবহার করে পদ্মার তীরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে মাটি কেটে বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করছেন। দিনরাত সমানে চালানো হচ্ছে মাটি কাটা ও সরবরাহের এই কর্মযজ্ঞ।
এলাকাবাসী জানান, প্রতিদিন প্রায় অর্ধশত ভারী ড্রাম ট্রাক ও শতাধিক অবৈধ স্টিয়ারিং গাড়িতে মাটি বোঝাই করে এ উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। পদ্মা থেকে গায়ের জোরে মাটি কেটে বিক্রি করে ওই প্রভাবশালী চক্রটি প্রতিদিন বিপুল টাকা কামিয়ে নিচ্ছেন।
এদিকে ভারী ড্রাম ট্রাকে মাটি ভর্তি করে নিয়মিত যাওয়া আসার কারণে উপজেলার হোসেনাবাদ থেকে বাহিরমাদী নতুন রাস্তা ভেঙে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
এ ছাড়া রাস্তার ছোট বড় কালভার্টগুলোও দেবে যাচ্ছে। সমপ্রতি এলাকাবাসী ড্রাম ট্রাকের প্রবেশ রোধ এবং মাটি কাটা বন্ধ করতে জোটবদ্ধ হয়ে এগিয়ে গেলে মাটি কাটার সাথে যুক্ত ওই শক্তিশালী চক্রের নিয়োজিত দুর্ধর্ষ বাহিনীর সদস্যরা এলাকাবাসীকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেন।
এভাবে নদীর ওপরের সমতল জমি কেটে পুকুরে পরিণত করায় আসছে বর্ষা মওসুমে ফের নতুন করে ওই এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিতে পারে বলে স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন। এদিকে পদ্মার বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে বিক্রির ঘটনা অবগত করা হলেও উপজেলা প্রশাসন অজ্ঞাত কারণে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
প্রশাসনের নীরবতায় প্রভাবশালী চক্রটি আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। প্রশাসন আর প্রভাবশালী চক্র অনেকটা মিলেমিশে একাকার হয়ে যাওয়ায় এলাকার লোকজন ভয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না। এ নিয়ে কেউ টুঁ শব্দ করলে তাকে হুমকি ধামকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নদী ধ্বংস করে মাটি কাটা চক্রের মূল হোতা জাহাঙ্গীর আলমের কাছে জোর করে মাটি কাটার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি নিজের জমি থেকে মাটি কাটছেন বলে দাবি করেন।
তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, নদী কিংবা সরকারি জমি থেকে নয়, আমার নিজের জমির মাটি কাটা হচ্ছে। তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ, জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে পদ্মার মাটিই কেটে সাবাড় করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে দৌলতপুর উপজেলার চরাঞ্চলের সাংবাদিক সাইদুর রহমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তারের সাথে গত শনিবার দুপুরে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে ইউএনও তাকে জানিয়েছেন, যদি এলাকাবাসী অভিযোগ করেন তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কিন্তু ১৯ মে রোববার পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি, অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট এলাকার একজন সংবাদকর্মীর দেয়া তথ্যও গুরুত্ব পায়নি ইউএনওর কাছে।
চেষ্টা করেও এ প্রসঙ্গে ইউএনও শারমিন আক্তারের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রভাবশালীদের কবল থেকে নদী রক্ষায় দ্রুত মাটি কাটা বন্ধ ও জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।