Thursday, March 28, 2024
প্রচ্ছদখুলনা বিভাগকুষ্টিয়াদেশ সেরা কুষ্টিয়ার ডিজিটাল সেবার মান নিয়ে ক্ষুব্ধ ভুক্তভোগীরা

দেশ সেরা কুষ্টিয়ার ডিজিটাল সেবার মান নিয়ে ক্ষুব্ধ ভুক্তভোগীরা

Published on

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির আধুনিক বিশ্বয়নের সাথে তাল মিলিয়ে দেশের অবস্থানকে সমুন্নত করতে সরকার দেশব্যাপী আইটি খাতে নানা প্রকল্প বাস্তবায়নে বিপুল অর্থব্যয়ে বিশাল কর্মযজ্ঞ গ্রহণ করেছে। প্রয়োজনীয় আইটি উপকরন যোগানসহ পর্যাপ্ত সরকারী প্রনোদনা থাকা সত্ত্বে ডিজিটালাইজড জেলা হিসেবে দেশসেরা পুরষ্কারে ভূষিত কুষ্টিয়া জেলায় এসেবা খাতের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতার কারণে এসবের সুবিধা না পাওয়ার অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। জেলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলছেন অভিযোগ সঠিক নয়, তবুও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন।

সচেতন নাগরিক কমিটি সনাক কুষ্টিয়ার নির্বাহী সদস্য মিজানুর রহমান লাকি বলেন, ভিশন-২০২১’কে সামনে রেখে আধুনিক নাগরিক জীবনের শতাধিক সেবা খাতে স্বচ্ছতা, সহজ, স্বল্প সময় ও স্বল্পমূল্যের বিনিময়ে নিশ্চিত ডিজিটাল সেবার লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু প্রায় এক দশক পূর্বে। সিংহ ভাগ সময় অতিক্রান্ত হলেও নতুন পদ্ধতির এই নাগরিক সেবাখাত নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সেবাপ্রার্থী ভুক্তভোগীদের মাঝে।

এখাত নিয়ে সরকারী ভাবে বিপুল অর্থব্যয়সহ নানা বর্ণাঢ্য আয়োজনে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে জানান দিলেও হাতে কলমে এই খাতে সেবার মান অন্ত:সার শুন্য বলে অভিযোগ উঠেছে। অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও দক্ষ মনিটরিংয়ের অভাবে জেলার অবাধ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রবহমান কার্যক্রম এখন ভঙ্গুর বলে মনে করেন জেলার ওয়াকিবহাল মহল।

কুষ্টিয়ার দেওয়ানী আদালতের আইনজীবীর মুহুরি শামসুল ইসলাম বলেন, যে রেকর্ড বিভাগের নাগরিক সেবা নিয়ে তারা বড় বড় কথা বলেন, সেই রেকর্ড বিভাগের কাজ করতে গিয়ে হয়রানির একশেষ। ডিজিটালের আগে ভুমি সংক্রান্ত তথ্যের জন্য আবেদন করলে ৫ থেকে ৭দিনের মধ্যে পাওয়া যেত। আর এখন আবেদন জমা দিলে ১০দিন পর ডেলিভারি দেয়ার কথা বললেও তা হাতে পেতে সময় লাগছে ২০ দিন বা একমাস বা তারও বেশী। দেরিতে এসব নাথি হাতে পাওয়ায় মামলা সংশ্লিষ্ট পক্ষগণেরও হয়রনি হতে হচ্ছে।

শহরের থানাপাড়া এলাকার বাসিন্দা রিপন বলেন, জমি সংক্রান্ত একটি মামলায় এ বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে নির্ধারিত শুনানীতে জমির পর্চা প্রয়োজন হওয়ায় জানুয়ারী মাসের প্রথম সপ্তাহে আবেদন করলে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সরবরাহ করার কথা থাকলেও সেই পর্চা ডেলিভারী পেয়েছি তিন মাস ৪দিন পর। এই ভোগান্তির কারন জানতে চাইলে সংশ্লিষ্টরা নানা অজুহাতে খোড়া যুক্তি তুলে ধরেন।

সদর উপজেলার বিত্তিপাড়া গ্রামে মতিয়ার রহমান জমির পর্চা চেয়ে আবেদন করেছিলেন ১৫ ফেব্রুয়ারী,২০১৮তে অতচ ১৬মার্চ,২০১৮ পর্যন্তও তিনি তার পর্চাটি হাতে না পেয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে তার ডেলিভারী স্লিপটি প্রতিবেদকে হাতে ধরিয়ে দিয়ে রেকর্ড বিভাগে গিয়ে খোঁজ নিতে বলেন।

তিনি বলেন, সরকার এই ডিজিটাল খাতে ব্যয় করছে আবার নাগরিক সেবা দেয়ার নামে প্রশাসন থেকে যেভাবে টাকা নিচ্ছেন আমরা সেভাবে সেবাটা পাচ্ছিনা। ডিজিটাল মানে যত দ্রুত সম্ভব জনগণের দোরগোড়ে সেবা নিশ্চিত করা। কালক্ষেপনের কারন জিজ্ঞাসা করলে নানা ধরণের কজ দেখায়। আজ নেট নেই, কাল সার্ভার খারাপ, পরশু অপারেটর আসেনি ইত্যাদি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি জাতীয় গণমাধ্যমের ভেড়ামারা উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত এক গণমাধ্যমকর্মী বলেন, ভেড়ামারা উপজেলায় স্থায়ীভাবে একজন সহকারী প্রোগ্রামার থাকলেও উপজেলা পোর্টালে ফায়ার সার্ভিস, নির্বাচন কমিশন, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, পরিসংখ্যানসহ অসংখ্য সরকারী দপ্তরের সাথে যোগাযোগ বা তথ্য উপাত্ত পাওয়ার মতো কোন আইকনই নাই। এ্ই উপজেলার কোন বিষয়ের উপর প্রতিবেদন রিপোর্ট করতে হলে সরেজমিনে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে গিয়ে ম্যানুয়ালী সংগ্রহ করতে হয়। কখনও কখনও এভাবেও প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া দুষ্কর হয়ে যায়।

এদিকে, কুষ্টিয়া জেলার নাগরিক জীবনে ডিজিটাল সেবায় গৃহীত প্রকল্প তৃণমূল পর্যায়ে বাস্তবায়নের প্রারম্ভিককালে যে আগ্রহ, উৎসাহ-উদ্দিপনায় বিশাল ইউডিসি(উদ্যোক্তা) কর্মী বাহিনী কাজ করতে শুরু করেছিলো এখন আর সেই ছন্দময় গতিতে তারা কাজ করতে পারছেন না বলে জানালেন তারা। তারা বলছেন, ইতোমধ্যে দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হলেও নেই তাদের কাজের স্বীকৃতি, নিশ্চয়তা ও পারিশ্রমিক। সরকারী ভাবে নিয়োজিত দক্ষ টেকনিশিয়ান না থাকা এবং সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন তদারকি কর্মকর্তাগণের দক্ষ পর্যবেক্ষনে রয়েছে ব্যাপক ঘাটতি।

এর ফলে মাসের পর মাস বা বছরের পর বছর গেলেও জেলাসহ উপজেলা পোর্টালগুলিতে সংযুক্ত তথ্য উপাত্তে রয়েছে ব্যাপক গড়মিল। এভাবেই বলছিলেন কুষ্টিয়া জেলা ও খুলনা বিভাগীয় উদ্যোক্তা ফোরামের সভাপতি আরিফুল ইসলাম। তিনি আরও জানান, কুষ্টিয়ার ছয়টি উপজেলার সকল ইউনিয়নের তৃণমূল পর্যায়ে কর্মরত উদ্যোক্তারা এই পরিস্থিতি উত্তোরনে সংশ্লিষ্ট সকল মহলকেই দায়িত্বশীল দৃষ্টি দেয়ার দাবি করেছেন।

জেলায় বিভিন্ন সরকারী দপ্তরে দায়িত্বরত কর্মকর্তাগণ কাগজে-কলমে বিদ্যমান ডিজিটাল কর্মকান্ডের নানা ইতিবাচক অর্জন তুলে ধরলেও প্রকৃত চিত্র আড়াল করার সুযোগ নেই জানিয়ে দক্ষ টেকনিয়ান বা প্রোগ্রামার না থাকাটাকে বিচ্যুতির প্রধান কারণ উল্লেখ করেন দৌলতপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ তৌফিকুর রহমান ।

তবে ডিজিটাল কুষ্টিয়ার সেবাখাতের বিচ্যুতি, অসম্পূর্ণতা, ভোগান্তি, সংশ্লিষ্টদের অনিহা, অদক্ষতাসহ অনিয়মের কারণে সেবা প্রার্থীদের ভোগান্তি বা অসন্তোষ আছে বলে মনে করেন না শিক্ষা ও আইসিটি সেক্টরে দায়িত্বরত কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো: আসলাম হোসেন বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সুত্রঃ আমার সংবাদ । নজরুল ইসলাম মুকুল, কুষ্টিয়া

সর্বশেষ

কুষ্টিয়ায় আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল সমর্থকদের সংঘর্ষে আহত ৭

কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল খেলা নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডার পর সংঘর্ষে জড়িয়ে অন্তত সাতজন...

কুষ্টিয়ায় শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানি, বরখাস্ত প্রধান শিক্ষককে পুলিশে সোপর্দ

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে পঞ্চম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানির মামলায় বরখাস্ত প্রধান শিক্ষককে বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর)...

কুষ্টিয়ায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২

কুষ্টিয়ায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় একটি শিশুসহ দু’জনের মৃত্যু হয়েছে।   বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে...

পাসপোর্ট সংশোধনে সরকারের নতুন নির্দেশনা

এনআইডির তথ্য অনুযায়ী পাসপোর্ট রি-ইস্যুর নির্দেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পাসপোর্ট...

আরও পড়ুন

কুষ্টিয়ায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে হোটেলে, কলেজছাত্রীর মৃত্যুর পর যুবক আটক

কুষ্টিয়ায় একটি আবাসিক হোটেলে শয্যা বিশ্বাস (১৮) নামে এক কলেজছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায়...

ব্রাজিলের পতাকা টাঙাতে গিয়ে কুষ্টিয়ার মাদ্রাসা ছাত্রের মৃত্যু

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে সুপারি গাছে ব্রাজিলের পতাকা টাঙাতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে মিঠু শেখ (১৪) নামে...

যশোর বোর্ডে পাসের হার ৯৫% | কুষ্টিয়ায় শীর্ষে জিলা স্কুল, জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৪৩ জন

মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলে এ বছর যশোর শিক্ষা বোর্ডে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।...