কুষ্টিয়ায় নবীন-প্রবীণ আনন্দ উৎসব ও প্রীতি ক্রীড়া-সাংস্কৃতিক প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার সকালে মিরপুর উপজেলার মশান বাজার সংলগ্ন দিশা কমিউনিটি হাসপাতাল চত্বরে হারিয়ে যেতে বসা গ্রামীণ খেলাধুলার আয়োজন করা হয়।
এ যেন নবীন ও প্রবীণদের মেলায় পরিণত হয়ে ওঠে পুরো চত্বরটি। হাডুডু খেলা যেন জানেই না বর্তমানের প্রজন্ম নবীনরা। আর অন্যদিকে প্রবীণরা তাদের সেই চিরচেনা প্রিয় খেলা হাডুডু খেলাকে আজ জাগ্রত করে রেখেছে। তাদের সেসময়ের খেলাধুলার পরিবেশ আগের মতোই তাদের অঙ্গভঙ্গি প্রকাশ করে হাডুডু খেলায় নবীনদের পরাজিত করে বিজয়ী হওয়ার গৌরব অর্জন করে প্রবীণেরা।
তেমনি ফুটবল খেলা, লাঠি খেলা, বালিশ বদল, অন্ধের হাড়ি ভাঙ্গা, গরুর গাড়ী প্রতিযোগীতা, রশি টানাটানি, বউ সাজানোসহ অন্তত ২০ ধরনের খেলায় মেতে ওঠে নবীন ও প্রবীনেরা। পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর সহযোগিতায় দিশা স্বেচ্ছাসেবী আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও মানবিক কল্যাণ সংস্থা সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া কর্মসূচি এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম জামাল আহমেদ। এসময় তিনি বলেন, ‘পুরনো সেসব খেলাধুলা, ঐতিহ্য-সংস্কৃতি এখন তো আর চর্চা করা হয় না। পুলকওয়ালা লোকের বড়ই অভাব। ক্রমান্বয়ে মানুষ হয়ে যাচ্ছে যন্ত্র।’ গ্রাম-বাংলার এসব শিল্প-সংস্কৃতি তরুণ এবং আগামী প্রজন্মের কাছে রূপকথার গল্পের মতোই মনে হবে।
বিলুপ্তপ্রায় সংস্কৃতির অস্তিত্ব রক্ষা, সোনালি ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার, শিশু-কিশোরদের মেধার বিকাশ এবং প্রবীণদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টির লক্ষ্যেই ‘দিশা’ এই গ্রামীণ খেলাধুলা প্রতিযোগীতার আয়োজন করেছে। এবং প্রতিবছরই এই উদ্যোগ অব্যাহত রাখতেও আহবান জানান তিনি।
দিশা সংস্থার কার্যনির্বাহী পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন বারুইপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ডা: শফিকুল ইসলাম মন্টু, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক তকরিম উদ্দিন খান, ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার খন্দকার ছানাউল্লাহ প্রমুখ। বিকেলে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা সমাজসেবা অফিসার রোকসানা পারভীন। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আগেকার দিনে বছরের নির্দিষ্ট কিছু সময়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে এবং কাশি-বাঁশি বাজিয়ে জাঁকজমকপূর্ণভাবেই আয়োজন করা হতো জাতীয় খেলা হা-ডু-ডু ও লাঠিখেলার। উত্তেজনাপূর্ণ ও মনোমুগ্ধকর এসব প্রতিযোগিতা উপভোগে ঢল নামতো মানুষের, বসতো বিশাল বিশাল মেলা। এসব এখন অতীত মাত্র। অথচ হারিয়ে যাওয়া এসব খেলাধুলাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগীতা টিকিয়ে রাখতে দিশার এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়।
স্বাগত বক্তব্যে দিশা’র নির্বাহী পরিচালক রবিউল ইসলাম বলেন, দিশা প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে শুরু করে দরিদ্র ও অধিকারবঞ্চিত মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘মানুষের প্রতি ভালোবাসা এবং তাঁদের জন্য কিছু করার প্রত্যয়ে আমরা মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। এই ইউনিয়নে বয়স্কভাতা বঞ্চিতদের তালিকা প্রণয়নের মাধ্যমে দিশার অর্থায়নে এই ইউনিয়নের ৭৫ জন প্রবীণ ব্যক্তিকে বয়স্ক ভাতার কার্ডের মাধ্যমে প্রতি মাসে ৬শ’ টাকা করে আমরা দিয়ে থাকি।
তিনি আরও বলেন, এই এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে কমিউনিটি হাসপাতাল চালু করেছি। আগামীতে পুর্ণাঙ্গরুপে হাসপাতাল তৈরীর জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যাতে করে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারি। এছাড়াও দিশা সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া কর্মসূচীর মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন উৎসব করে থাকি। গ্রাম বাংলার বিলুপ্তপ্রায় খেলাধুলাকে নবরূপে জাগ্রত করার লক্ষেই আজকের এই আয়োজন।
আর এই আয়োজনে দিশা হলেও সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতা করেছে পিকেএসএফ। পরে প্রতিযোগীতায় অংশ নেওয়ার সকলের মাঝে পুরস্কার বিতরণ, প্রবীনদের বিভিন্ন উপহার সামগ্রী তুলে দেন অতিথিবৃন্দ।