ছাত্রীর সঙ্গে আপত্তিকর প্রেমালাপের অভিযোগের দায়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমানকে শোকজ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে ওই শিক্ষককে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রীয় মিলনায়তনের (টিএসসিসি) পরিচালকের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছে।
শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম আব্দুল লতিফ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশ থেকে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
অফিস আদেশে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান ও এক নারী শিক্ষার্থীর মধ্যে কথোপকথনের একাধিক অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে তা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয়। অধ্যাপক মিজানুর রহমান ও নারী শিক্ষার্থীর মধ্যে ফাঁস হওয়া অডিও ক্লিপে যেভাবে অশ্লীল ও আপত্তিকর কথাবার্তা হয়েছে তাতে শিক্ষক সমাজসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যকার সম্পর্কের পবিত্রতা ক্ষুন্ন হয়েছে।
এদিকে, ঘটনা তদন্তে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. হালিমা খাতুনকে আহ্বায়ক এবং দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরিন ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক সাইফুল ইসলামকে কমিটির সদস্য করা হয়েছে।
এদিকে, প্রযুক্তি ব্যবহার করে কণ্ঠ নকল করে সামাজিকভাবে হেয় ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিযোগ এনে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন অভিযুক্ত অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। শুক্রবার ( ৩ জুলাই) সন্ধ্যায় ঝিনাইদহ সদর থানায় তিনি এ ডায়েরি করেন। জিডি নম্বর ১৪৬।
জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, বিগত তিন-চারদিন ধরে অজ্ঞাতনামা কিছু স্বার্থান্বেষী মহল সুপরিকল্পিতভাবে ফেসবুক ব্যবহার করে আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করছে। অডিও সম্পাদনা প্রযুক্তি ব্যবহার করে হুবহু আমার কণ্ঠস্বর নকল করে একটি আপত্তিকর কথোপকথনের অডিও ক্লিপ ফেক আইডি থেকে ছড়িয়ে দিয়ে আমার সম্মান ধূলিসাৎ করেছে। তাদের এহেন কর্মকাণ্ডে নিরাপত্তা নিয়ে আমি শঙ্কিত।
জিডিতে তিনি আরও উল্লেখ করেন, তারা শুধু আমার সম্মান নষ্ট করেনি, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাব মর্যাদা, সর্বোপরি শিক্ষক সমাজের মর্যাদাকে ভূলুণ্ঠিত করেছে। আমার বিরুদ্ধে যেসব ফেক আইডি ব্যবহৃত হচ্ছে তা উদ্ধারপূর্বক যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করছি।
জিডির বিষয়ে ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘এটা আমার কণ্ঠ নয়। এই অডিওর সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমার পেশাগত ও সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন করার জন্য একটি কুচক্রী মহল আমার কণ্ঠ এডিট করে এই ঘৃণ্য কাজ করেছে। এ বিষয়ে আমি ঝিনাইদহ থানায় একটি জিডি করেছি।’
উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন উর রশিদ আসকারী বলেন, আমরা তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। আগামী সাত দিনের মধ্যে তাকে জবাব দিতে বলা হয়েছে। তিনি জবাব দিলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব এবং ঐ ছাত্রীকেও তদন্ত কমিটি অনুসন্ধান করবে।
জানা যায়, গত মঙ্গলবার ওই শিক্ষকের সঙ্গে এক নারীর ‘অনৈতিক’ প্রেমালাপের দুটি অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়। পরে অডিও দুটি ফেসবুকে ভাইরাল হলে তা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয়। পরে বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) এক অফিস আদেশে ওই শিক্ষককে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়। মঙ্গলবার রাতে বেশ কয়েকটি ফেসবুক পেজ ও আইডিতে ১৪ মিনিট ২০ সেকেন্ডের একটি কথোপকথন ছড়িয়ে পড়ে। এতে অধ্যাপক মিজানের সঙ্গে এক নারীর অন্তরঙ্গ কথোপকথন শোনা যায়। এরপর শুক্রবার আবারও ফেসবুকে বিভিন্ন আইডি থেকে ৯ মিনিট ৯ সেকেন্ডের আরও একটি কথোপকথন ছড়িয়ে পড়ে। এতে অধ্যাপক মিজান এক নারীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাস চালু হলে স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে তার বাসায় ডাকেন। রাতযাপনেরও প্রস্তাব দেন। ওই নারী এতে সম্মতি জানায়।