ইবি ছাত্রলীগ নেতা লালনের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে পালানোর সময় ইলিয়াস জোয়ার্দ্দারসহ তিনজন আটক : অভিযোগের তীর সাবেক প্রক্টর মাহবুবর রহমানের বিরুদ্ধে।
কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মিজানুর রহমান লালনের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে সে সময় লালন বাড়িতে ছিলেন না। এলাকাবাসীর ধাওয়ার মুখে পালানোর সময় ইবির কর্মচারি ইলিয়াস জোয়ার্দ্দারসহ তিনজনকে আটক করেছে মিরপুর উপজেলার আমলা ক্যাম্প পুলিশ। তাদের তিনজনের সাথে গাড়ির চালককেও আটক করা হয়। লালনের বাড়ি মেহেরপুর জেলার গাংনীর পুরাতন মটমুড়া গ্রামে।
লালন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র। ইবি ছাত্রলীগের সাবেক ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক। ইবির সাবেক প্রক্টর মাহবুবর রহমানের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে সম্প্রতি আন্দোলন চলছে। সেই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে লালন। আদালতে লালনের বিরুদ্ধে মানহানির মামলাও করেছে মাহবুবর রহমান। এ নিয়ে ক্যাম্পাসে আন্দোলন চলছে। এর মধ্যে তার বাড়িতে গিয়ে হুমকির ঘটনা ঘটলো।
মিজানুর রহমান লালনের অভিযোগ ইবির সাবেক প্রক্টর মাহবুবর রহমান মাস্তান পাঠিয়ে তার ও তার পরিবারের লোকজনের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। এ ধারাবাহিকতায় আমার গ্রামের বাড়ির মেহেরপুর জেলার গাংনীর মটমুড়া গ্রামের গিয়ে ইলিয়াস জোয়ার্দ্দারসহ সন্ত্রাসীরা হুমকি দেয়। এলাকাবাসী তাড়া করলে তারা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে পুলিশ মিরপুরের আমলা থেকে সন্ত্রাসীদের আটক করে। তাদেরকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে ইবি প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা।’
স্থানীয়রা জানান, মাগরিবের নামাজের পর একটি কালো রংয়ের হাইচ মাইক্রোবাস নিয়ে ছাত্রলীগ নেতা মিজানুর রহমানের বাড়িতে যায় সাবেক প্রক্টর মাহবুবর রহমানের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত ইবির কর্মচারি ইলিয়াস জোয়ার্দ্দার, উজ্জল, সবুজসহ ১০ থেকে ১২জন। এ সময় তারা লালনের বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিয়ে বলে ইবির ভিসি ও সাবেক প্রক্টরের সাথে দ্বন্দ্ব করছে। তাদের ক্ষমতা কত লালন কি জানে। বেশি বাড়াবাড়ি করলে সে মার্ডার হয়ে যেতে পারে।
লালনের বড় দুলাভাই শহিদুল ইসলাম বলেন, সন্ধ্যার পর ১০ থেকে ১২জন বাড়ির ওপর যাই। তারা অস্ত্র প্রদর্শন করে বাড়ির লোকজনকে শাসিয়ে বলে লালনের এত বড় সাহস যে সে সাবেক প্রক্টর মাহবুবর রহমান ও ভিসির (রাশিদ আশকারি) বিরুদ্ধে লাগতে যাই। সে কিভাবে ইবি গিয়ে রাজনীতি করে আমরা দেখে নেব। তাকে সাবধান করে দেন সে যেন ভাল হয়ে যায়। লাগতে আসলে লাশ হয়ে যাবে। এ সময় বাড়ির লোকজন আতঙ্কিত হয়ে যায়। এ সময় এলাকাবাসী ও পরিবারের লোকজনের সন্দেহ হলে তারা পরিচয় জানতে চাই, থানায় ফোন দেয়ার কথা বললে তারা সটকে পড়ে। এ সময় তারা মিরপুর হয়ে পালানোর চেষ্টা করে। মাইক্রোসহ আমলা বাজার থেকে তিনজনকে আটক করে ক্যাম্প পুলিশ। তাদেরকে ক্যাম্পে রাখা হয়।
এদিকে লালনের বাড়িতে গিয়ে হত্যার হুমকি দেয়ায় ইবি ছাত্রলীগের ৫ শতাধিক কর্মি মিছিল ও সমাবেশ করেছে। তারা এ ঘটনার জন্য মাহবুবর রহমানকে দায়ী করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করেন। একই সাথে আটকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নেয়া হলে ক্যাম্পাস অচলের হুমকি দেন।
লালন বলেন, ইবির প্রক্টরের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত ইলিয়াস। সে চিহিৃত ক্যাডার। তার বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ রয়েছে। শুধুমাত্র সাবেক প্রক্টরের লোক হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না। সে আমাকে ফেসবুকে বিভিন্ন সময় হুমকি দিয়ে আসছিল। আজ (শুক্রবার) আমাকে হত্যার উদ্দেশে গ্রামের বাড়ি যায়। আমি বাড়ি না থাকায় প্রাণে বেঁচে যায়। সাবেক প্রক্টরের নির্দেশে তারা আমাকে হত্যা করতে যায় বলে ধারনা করছি। সঠিক তদন্ত শেষে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করছি।
অন্যদিকে, লালনের পরিবারকে হুমকি দেয়ার খবরে ক্যাম্পাসে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করে শাখা ছাত্রলীগের একটি পক্ষ। রাত ৯টার দিকে বিভিন্ন আবাসিক হল থেকে জিয়া হল মোড়ে সংগঠিত হয়ে মিছিল বের করে তারা। মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটকে মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালের সামনে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়।
সমাবেশে নেতাকর্মীরা লালনের পরিবারকে হুমকি দেয়ার ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। সেই সঙ্গে এ ঘটনার সাথে জড়িত কর্মচারীসহ সকলের শাস্তি দাবি করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর ড. মাহবুবর রহমানের নির্দেশে এ হুমকি দেয়া হয়েছে বলে সমাবেশে বক্তারা দাবি করেন। এসময় ড. মাহবুবের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেয় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা।
বিষয়টি জানতে কুষ্টিয়ার মিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল কালামের সরকারি মোবাইল নম্বরে বারবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে ফোন বন্ধ করে দেন।’
পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, তিন সন্দেহভাজনকে আটক করেছে। তাদের জিজ্ঞাবাসাদ চলছে। এখনও কোনো মামলা হয়নি। এর বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না।’
তবে অভিযোগের বিষয়ে ইবির সাবেক প্রক্টর মাহবুবর রহমানের কাছে জানতে চাইলে সব অস্বীকার করে বলেন, এসব ঘটনার সাথে আমার কোন যোগসূত্র নেই। বৃহস্পতিবার থেকে তার সাথে (ইলিয়াস জোয়ার্দ্দার) কোন যোগাযোগ নেই, কথাও হয়নি।’