যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলায় মিলন হোসেন (২৬) নামের ছাত্রলীগের এক কর্মীকে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে ঝিকরগাছা পৌরসভার কৃষ্ণনগর পূজামণ্ডপের পাশে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।
মিলন পৌর এলাকার কাটাখাল গ্রামের আলম হোসেনের ছেলে। তিনি শহীদ মশিয়ূর রহমান ডিগ্রি কলেজ থেকে স্নাতক পাস করেন।
মিলনের ভাই মাহমুদ পারভেজ বলেন, ঠিক কী কারণে তাঁর ভাইকে হত্যা করা হয়েছে, তাঁরা তা জানেন না। তবে দলীয় কোন্দলের জের ধরে তাঁকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।
এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ছাত্রলীগের একাংশের নেতা-কর্মীরা বেলা তিনটা থেকে বিকেল সোয়া পাঁচটা পর্যন্ত যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এ সময় সড়কটির দুই দিকে পণ্য ও যাত্রীবাহী কয়েক শ যানবাহন আটকা পড়ে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিজয় দিবস উপলক্ষে উপজেলা পরিষদ চত্বরে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এই অনুষ্ঠান থেকে বের হয়ে দুপুরে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন মিলন। কৃষ্ণনগর এলাকায় পূজামণ্ডপের পাশে পৌঁছালে দুর্বৃত্তরা তাঁকে ধরে পেটে ছুরি মেরে পালিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন তাঁকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পৌনে তিনটার দিকে তিনি মারা যান।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মূসা মাহমুদ বলেন, স্থানীয় রাজু সরদারেরনেতৃত্বে দুটি মোটরসাইকেলে পাঁচজন সন্ত্রাসী মিলনকে ছুরি মেরে হত্যা করে। মিলন ছাত্রলীগের সক্রিয় রাজনীতি করতেন। আগামী কমিটিতে সভাপতি পদে তাঁর নাম প্রস্তাব করা ছিল। তাঁর হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি করেন তিনি।
তবে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এহসানুল হাবিব বলেন, মিলন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। তিনি মূসা মাহমুদের সঙ্গে রাজনীতি করতেন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলা ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ রয়েছে। এর একটি পক্ষ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মূসা মাহমুদের অনুসারী। নিহত মিলন তাঁর পক্ষের রাজনীতি করতেন। অপর পক্ষ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলামের অনুসারী। রাজু সরদার রাজনীতি করেন মনিরুল ইসলামের পক্ষের। উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এহসানুল হাবিবও এই পক্ষের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলামের মুঠোফোনে কয়েকবার ফোন করে বন্ধ পাওয়া গেছে।
জানতে চাইলে ঝিকরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সালেহ মোহাম্মদ মাসুদ করিম বলেন, রাজু সরদারের বিরুদ্ধে প্রায় ২০টি মামলা রয়েছে। তিনি পলাতক। তাঁকে ধরার চেষ্টা চলছে। ময়নাতদন্তের জন্য মিলনের লাশ যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য রাজু সরদারের মুঠোফোনে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।