দেড় ঘন্টা সড়ক অবরোধ, শান্তিপূর্ণ সমাধানের আশা
বুধবার সকাল ১০টা। শিরিনা আক্তার তার দেড় বছরের শিশুকে কোলে করে নিয়ে হাটছেন রাস্তায়। রাস্তার দু’ধারে প্রায় পাঁচ শতাধিক সিএনজি। তার গন্তব্য কুষ্টিয়া জেনারেল হসপিটাল। একমাত্র শিশুটি অসুস্থ্য। ডাক্তার দেখাতে হবে। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা থেকে অটোরিক্সায় চড়ে যাচ্ছিলেন তিনি। পথিমধ্যে কুষ্টিয়া-মেহেরপুর আঞ্চলিক সড়কের ভাঙ্গা বটতলা এলাকায় এসে থেমে যায় অটোরিক্সা। সামনে রাস্তা অবরোধ করে রেখেছে সিএনজি চালক ও মালিকেরা। কোন যাত্রীবাহি যানবাহন চলতে দেওয়া হচ্ছে না। এজন্য প্রায় ১ কিলোমিটার হাঁটতে হয়েছে তাকে। শুধু তাই নয়, আব্দুর রহিম দৌলতপুর উপজেলার খলিসাকুন্ডি থেকে যাচ্ছেন বুকের ব্যথার জন্য হসপিটালে তার স্ত্রীকে সাথে নিয়ে। বাসের যাত্রী ছিলেন তারা। দুজনেই পায়ে হেটে যাচ্ছেন। সকালে স্কুলগামী, চাকুরীজীবি, ব্যবসায়ীসহ সাধারণ যাত্রীরা বাস ও যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল না করায় ফাঁকা মাঠের মধ্যে পড়ে চরম বিপাকে। কুষ্টিয়া শহরে সিএনজি চলাচলে বাধা দেওয়ায় বুধবার সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত জেলা সিএনজি মালিক ও চালক সমিতির সভাপতি সামসুল আরেফিন অমূল্যের নেতৃত্বে কুষ্টিয়া-মেহেরপুর আঞ্চলিক সড়কে সকল প্রকার যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় সিএনজি চালক ও মালিকেরা। এদিকে রাস্তা অবরোধ করে রাখায় বিপাকে পড়ে এসব যাত্রীরা। সিএনজি মালিক ও চালকদের দাবী, আমরা যারা সিএনজি চালায় তারা সকলেই গরীব মানুষ। পেটের দায়ে এর গাড়ী চালায়। একদিন সিএনজির চাকা না ঘুরলে আমাদের সংসারের চাকা থেমে যায়। বাস মালিক সমিতিরা আমাদের রাস্তায় চলাচলে বাধা দিচ্ছে। কুষ্টিয়া শহরে আমাদের ঢুকতে দিচ্ছে না। তাই আমরা এ সড়ক অবরোধ করছি। সিএনজি মালিক সামসুল জানান, আমরা বৈধভাবে সিএনজি চালাতে চাই। বাস মালিকরা এভাবে বন্ধ করে দিলে না খেয়ে মারা যাবো। আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ সিএনজিই লোন নিয়ে কেনা। আর যদি সরকার আমাদের দুঃখ না বোঝে তাহলে আমাদের সিএনজি সব অর্ধেক দাম দিয়ে নিয়ে নিক। তাও তো শান্তনা পাবো। অবরোধে আটকা পড়া কয়েকজন বাস চালক জানান, কোন ঘোষনা না দিয়েই সিএনজি মালিক-চালকরা বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। এতে আমরাসহ বাসের যাত্রীরা বিপাকে পড়েছে। এদিকে খবর পেয়ে মিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক কামারুল আরেফিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এসময় তিনি সিএনজি চালক ও মালিকদের সাথে কথা বলে তাদের সমস্যার কথা শোনেন এবং সমাধানের আশ^াস দেন। এতে ৫মিনিটেই রাস্তা থেকে অবরোধ তুলে নেয় সিএনজি মালিক ও চালকরা। কামারুল আরেফিন জানান, আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে সিএনজি মালিক ও চালকদের সমস্যার কথা শুনে তাদের সমাধানের আশ^াস দিয়েছি। এতে তারা শান্তিপূর্নভাবেই অবরোধ তুলে নেয় এবং যান চলাচল স্বাভাবিক করে। এসময় উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া জেলা সিএনজি মালিক সমিতির আমলা শাখার সভাপতি খন্দকার আব্দুল রহিম, সহ-সভাপতি আব্দুল খালেক, জেলা কমিটির লাইন সম্পাদক আব্দুল হান্নান, সদস্য রবিউল হক, আমলা শাখার সাধারন সম্পাদক খন্দকার আব্দুল খালেক, সাংগঠনিক সম্পাদক আমজাদ হোসেন, সিএনজি চালক রকিবুল ইসলাম রতন, সিএনজি মালিক আনিচ তালুকদার, নাদিম, সুজাত, বাবু, মিজানুর রহমান মিজান, আশরাফুল ইসলাম, এনামূল হক, হোসেন রানা, সেলিম হোসেন, মাসুদ রানা, লিটন হোসেন। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন মিরপুর উপজেলা সিএনজি চালক ও মালিক সমিতির সভাপতি শামিম আহম্মেদসহ নেতৃবৃন্দরা। এসময় জেলার প্রায় পাঁচ শতাধিক সিএনজি চালক ও মালিকরা উপস্থিত ছিলেন।