কুষ্টিয়ায় এক ছাত্রলীগ নেতার বাড়িতে যুবলীগ নেতার স্ত্রী বিয়ের দাবিতে অবস্থান করাকে কেন্দ্র করে কুষ্টিয়া জুড়েই তোলপাড় চলছে। ওই ছাত্রলীগ নেতা কুষ্টিয়া খোকসা উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সায়েম হোসেন সুজন।
বাংলা ভাষায় একটি কথা আছে “পিরিতে মজিলে মন কেবা মুচি কেবা ডোম”। এই রকমই একটি ঘটনা ঘটেছে খোকসায়। বিয়ের দাবিতে খোকসা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতির বাড়িতে অবস্থান নিয়েছে জুয়েনা আক্তার লিমা নামের এক নারী। গতকাল সন্ধ্যায় খোকসা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সায়েম আহম্মেদ সুজনের শহরের চুনিয়াাপাড়ার বাড়িতে বিয়ের দাবি নিয়ে উপস্থিত হন জুয়েনা আক্তার লিমা নামের ঐ নারী।
ঘটনাটি খোকসাসহ সারা জেলায় তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। স্থানীয়রা জানান, ঘটনাটি ধামা চাপা দিতে সুজনের পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে তালা লাগিয়ে পালিয়েছে। ফলে লিমা বাড়িতে ঢুকতে না পেরে বাড়ির গেটের তালা ভেঙে সুজনের ঘরের বারান্দায় অবস্থান করছে। জুয়েনা আক্তার লিমা সাবেক উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আবু ওবাইদা শাফির সাবেক স্ত্রী।
জুয়েনা আক্তার লিমা জানান, খোকসা উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক আবু ওবায়দা শাফির সাথে ১২ বছর আগে জুয়েনা আক্তার লিমার বিয়ে হয়। লিমার বাবার বাড়ি ঢাকার কেরানীগঞ্জে, তার বাবার নাম দেলোয়ার হোসেন। তাদের ঘরে ১০ বছরের একটি পুত্রসন্তান রয়েছে। গত দেড় বছর আগে শাফি জেলে থাকা অবস্থায় সায়েম হোসেন সুজনের সাথে শাফির স্ত্রী লিমার পরিচয় ও পরকিয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্প্রতি তাঁদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের কিছু ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে শাফি এবং লিমার দাম্পত্য সম্পর্কে চির ধরে। এরই সূত্র ধরে গতমাসে শাফি তার স্ত্রী লিমাকে তালাক দেয়।
তালাকের পর লিমা ঢাকার কেরানীগঞ্জে বাবার বাড়িতে চলে যান, এবং সুজনকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু সুজন নানা তালবাহানা করতে থাকে। গত সপ্তাহে সুজন বিয়ে করতে পারবে না বলে লিমাকে পরিষ্কার জানিয়ে দেন। কোন উপায়ন্ত না দেখে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় লিমা চুনিয়াপাড়াস্থ সুজনের বাড়ীতে গিয়ে উঠেন। কিন্তু এর আগেই সুজনের পরিবারের সদস্যরা বাড়ীতে তালা দিয়ে চলে যান। তাই বাধ্য হয়ে তালা ভেঙ্গে ঘরের ভিতর প্রবেশ করতে বাধ্য হন লিমা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় লিমা বিয়ের দাবীতে সুজনের বাড়ীর ঘরের বারান্দায় বসে আছেন।
জুয়েনা আক্তার নিমা জানান, সুজনের সাথে তার প্রায় ২বছর ধরে সম্পর্কে চলে আসছে। এই সম্পর্কের কারণেই একযুগের সম্পর্ক ছিন্ন করে সুজনের সাথে সংসারে করবো বলো চলে এসেছি, সুজনও আমাকে এই রকম প্রতিশ্র“তিই দিয়েছিলো। তিনি আরো বলেন, আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অনেকবার ধর্ষণ করা হয়েছে। এখন সুজন বিয়ে করতে রাজি হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়েই বিয়ের দাবীতে তার বাড়িতে অবস্থান করছি। যতদিন দাবী আদায় না হবে ততদিন এই অবস্থান কর্মসুচী চলবে বলেও জানান ঐ নারী।
এদিকে ছাত্রলীগ সভাপতি সুজনের বাড়ীতে লিমার অবস্থানকে কেন্দ্র করে উপজেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে ও স্থানীয় জনগনের মাঝে এক চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সুজনের কতিথ প্রেমিকা লিমা সুজনের চুনিয়াপাড়ার বাড়ীতেই অবস্থান করছিলো।
এদিকে খোকসা থানায় অভিযোগ দিতে গেলেও থানা পুলিশ তাকে কোন সহযোগিতা বা অভিযোগ গ্রহণ করেননি বলে অভিযোগ করেছেন ঐ গৃহবধু।
খোকসা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজমুল হুদা জানান, এ ব্যাপারে থানায় কেউ অভিযোগ দিতে আসেননি। ওসি জানান ‘আসলে একজনের স্ত্রী অন্যজনের বাড়িতে কেন অনশন করবেন?’ তার আগের স্বামীর সাথে ডিভোর্সের কথা বললে ওসি এর কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। তবে তিনি বলেন অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঐ গৃহবধু সুজনের বাড়িতে অবস্থান করার সময় খোকসা থানার এসআই সিরাজুল ইসলাম ও আবুল বাশারের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। সেখানে ঐ এসআইদ্বয় গৃহবধুর সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ করছেন ঐ গৃহবধূ।
সায়েম হোসেন সুজনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।