ক্রিকেট ইতিহাসে হাবিবুল বাসার সুমন, বিজয়ের পর এবার দেশব্যাপী আলোচনায় এসেছে কুষ্টিয়ার কৃতি সন্তান মোহাম্মদ মিথুন। অনেকেই এই ক্রিকেটার মিথুনকে নিয়ে বাংলাদেশ দলের প্রথম সারির ব্যাটসম্যানদের সাথে মিলিয়ে ক্রিকেটে নতুন সম্ভাবনা দিক তুলে ধরে নানা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে।
মিথুন কুষ্টিয়া শহরের থানা পাড়ার সুনামধন্য কাঠব্যবসায়ী শওকত আলীর ছেলে। মা জাহানারা বেগম একজন গৃহিণী। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে মিথুনই ছোট। ক্রিকেটের প্রতি উৎসাহ যোগাতে ফুটবলার বড় ভাই মিলন ও পরিবারের সদস্যরা ১৩ বছর বয়সে মিথুনকে বিকেএসপি’তে ভর্তি করে দেন। সেখান থেকে বেরিয়ে প্রথমে গাজী ট্যাংক দলের হয়ে খেলার পর কিছুটা আলোচনায় আসে মিথুন। পরে ঢাকা আবহানীতে খেলার সুযোগ পায়ে যান। সেখানে দুবছর খেলার পর জাতীয় দলে ডাক পেয়ে যান এই ক্রিকেটার মিথুন। ২৮ বছর বয়সী মিথুনের স্ত্রী নিগাড় ও এক মাত্র ছেলে দুই বছরের আরোশ।
ছোট বেলা থেকে ক্রিকেট পাগল মিথুনকে বরাবরই উৎসাহ যুগিয়েছে তার বড় ভাই একজন ক্রীড়াবিদ মিলন। যাকে কুষ্টিয়ার অনেকেই ফুটবলার মিলন হিসেবেই চেনেন।
জানাগেছে, কুষ্টিয়ার এই কৃতি খেলোয়াড় মিথুন গত কয়েক বছর ধরে ঘরোয়া ক্রিকেট আসরে খেলেছেন । কিন্তু সম্প্রতি জাতীয় দলে যে ফরম্যাটেই সুযোগ পেয়ে সেখানে কিছুটা ব্যর্থ থাকায় পিছিয়ে পড়তে হয়েছে তাকে । যে কারনে দলের বাইরে পাঠিয়ে দেয়া হয় মিথুনকে। জায়গা হয় ‘এ’ দলে। একটা অভিযোগও উঠে তাকে কখনোই একটি পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলার সুযোগ দেয়া হয়নি বলে।
গত আগস্টে আয়ারল্যান্ড সফরে ভাল পারফর্ম করে এশিয়া কাপে জায়গা করে নেন মিথুন। সাব্বির, সৌম্যরা বাদ পড়ার পর মিথুন, শান্তর দলে জায়গা পাওয়াতে খুব একটা সমালোচনা না হলেও কিছুটা কানাঘুঁষা ছিল। আর এশিয়া কাপের মঞ্চটা মিথুনের কাছে বিশেষ এই কারণে যে, এখানে ভালো করতে না পারলে সহসা সুযোগ মিলবে না জাতীয় দলে। একথা মিথুন ও খুব ভালো করেই জানতেন।
এশিয়া কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ দল মাঠে নেমে শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে হতাশ ক্রিকেট প্রেমী কোটি কোটি দর্শকদের হতশার জায়গা থেকে টেনে তুলে শেষ মেষ জয় এনে দেয়ার নায়কদের এক জন কুষ্টিয়ান মোহাম্মদ মিথুন।
খেলার শুরুতেই যখন প্রথম ওভারেই নেই লিটন, সাকিব। দলের রান তখন মাত্র ৩। ঠিক সে সময় কব্জিতে আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়েন দলের সেরা ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। এমন পরিস্থিতিতে বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানদেরও চোয়াল বেয়ে ঘাম ঝরতে থাকে । কিন্তু এদিন মোটেও আড়ষ্ট ছিল না মিথুনের ব্যাট। ভাগ্যদেবীও এদিন করুণার আঁচল ফেলেছিল জাতীয় দলে নড়বড়ে মিথুনের মাথায়। মাত্র ১ রানে লাসিথ মালিঙ্গার বলে শর্ট মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান। এর পর মুশফিকুর রহমানের সাথে জুটিতে হাফ সেঞ্চুরিসহ নিজের খাতায় ৬৩ রান যোগ করে দলকে একটি লক্ষে পৌছে দেন মিথুন।
যদিও চাপ টা ছিল মিথুনের জন্য পাহাড়সম। অনভিজ্ঞ ক্রিকেটারের জন্য তো সমুদ্র পাড়ি দেয়ার মতো। সেখান থেকেই তিনি চাপকে কাটিয়ে দলকে অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের মত টেনে তোলেন। তবে নিজেকে সামলে নিতে খুব বেশি সময় নেননি মিথুন । মুশফিকের সঙ্গে গড়ে তোলেন ১৩১ রানের পার্টনারশিপ। নিজে খেলেন ৬৮ বলে ৬৩ রানের লড়াকু ইনিংস। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১৩৭ রানের বিশাল জয়ের পর ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলা মুশফিক এবং তামিমের বিরত্বগাঁথায় অনেকেটা ঢাকা পড়ে গেছে মিথুনের অবদান! মুশি-তামিম, দুই প্রদীপের নিচে অন্ধকারে কিছুটা মিশে গেছেন মিথুন। তবে ক্রিকেট প্রেমীদের আলোচনা থেকে একেবারে বাদ পরেননি মিথুন।
বাংলাদেশ টিম এখন পুরোপুরি নির্ভরশীল ‘পঞ্চ পাণ্ডবের’ ওপর। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও ইনজুরি নিয়েই পাণ্ডবরাই লড়েছেন। যেখানে সৌম্য, লিটন, এনামুল, সাব্বির, মোসাদ্দেকরা একের পর এক সিরিজে ব্যর্থ হচ্ছেন সেখানে নতুনদের নিয়ে নতুন করে আশা দেখাতে পারে মিথুনের এই লড়াই। মিথুন যেন আরো ভালো খেলা উপহার দিয়ে দেশের সুনাম বয়ে আনতে পারে সে জন্য কুষ্টিয়াবাসীসহ সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করেছে মিথুনের পিতা শওকত আলী জাহানারাবেগম ও বড় ভাই মিলন আলী।