ছবির মানুষটির নাম মিজানুর রহমান মিজান (৬৩)। পুলিশের মাধ্যমে উদ্ধার হওয়া লাশ পরিববহন করে ডোমঘরে নিয়ে যাওয়া থেকে আবার ডোমঘর থেকে স্বজনদের বাড়ীতে পৌছে দেয়া ছাড়াও লাশের পরিচয় অজ্ঞাত হলে বেওয়ারীশ হিসাবে দাফনে কবরস্থান পর্যন্ত লাশ বহনে কাজ করে সে। বলা যায় লাশ পরিবহনই এখন তার পেশা।
মিজানের পিতার নাম মৃত দলিল উদ্দীন। বাড়ী ছিল কুষ্টিয়ার হাউজিং এ ব্লকে। বর্তমানে সে গত ৩০ বছর ধরে ২য় স্ত্রীর সাথে মিরপুর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের চুনিয়াপাড়া গ্রামে শ্বশুরবাড়ীতে বসবাস করছেন। শ্বশুরের নাম মৃত হামেদ মোল্লা।
এস এস সি পর্যন্ত লেখাপড়া জানা মিজান এক সময় আর্মড পুলিশে চাকুরী করতেন। ১৯৯১ সালে তার চাকুরী চলে যায়। চাকুরী চলে যাবার দুর্বিসহ সময়ে কুষ্টিয়ার হাউজিংয়ের বাড়ী বিক্রি করতে হয় তাকে। শুধু তাই নয় ১ম স্ত্রীও মিনাজ নামের একমাত্র সন্তানকে নিয়ে বাপের বাড়ী চলে যায়। জীবন জীবিকার প্রয়োজনে সে সময় ভ্যান চালানো শুরু করেন মিজান।
১৯৯৪/৯৫ সালে ভ্যান চালক হিসাবে মিরপুর থানা থেকে একটি লাশ ডোমঘরে নিয়ে যাবার মধ্যদিয়ে মিজানের এ পেশার শুরু হয়। সেই থেকে মিজান মিরপুর থানার লাশ পরিবহনে কাজ করছেন।গত ২৪/২৫ বছর ধরে তিনি ৩ শতাধিক লাশ বহন করেছেন। লাশ পরিবহন ছাড়াও সে ভ্যান চালনা করে থাকেন।
লাশ পরিবহনে ভয় লাগেনা? এমন প্রশ্নে মিজান জানান, প্রথম প্রথম ভয় লাগতো। এখন আর ভয় লাগেনা। তিনি আরো জানান, এখন ভয় লাগে ভ্যানে যখন জীবিত মানুষ বহন করি তখন।
মৃত মানুষকে নিয়ে তার কোন ভয় করেনা। প্রতিটি লাশ পরিবহনে ৭ শত টাকা থেকে শুরু করে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া পেয়েছেন বলেও জানান তিনি। ভাড়া নির্ভর করে লাশের স্বজনদের আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী। তবে লাশের পরিচয় অজ্ঞাত হলে থানা থেকে ভাড়া পরিশোধ করে।
মিজানের ১ম পক্ষের স্ত্রীর ঘরে মাহবুব মিনাজ নামের এক পুত্র সন্তান আছে। বর্তমানে মিনাজ যশোর রুপদিয়া বাজারে একটি টেলিফোনের দোকান দিয়ে ব্যবসা করে প্রতিষ্ঠিত। তবে পিতা মিজানের খোঁজ রাখেনা সে। অন্যদিকে মিজানের দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে রয়েছে এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তান।