কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের অনুরোধে শিক্ষার্থীর দুই মাসের বাসা ভাড়া মওকুফ করছে এক বাড়ীর মালিক।
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার পরে কুষ্টিয়ায় মেসে থাকা শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়ে। অনেকেই মেস ছেড়ে গ্রামের বাড়ীতে আবার কেউ কেউ মেসে অবস্থান করলেও তাদের উপর নেমে আসে মেস ভাড়ার খড়গ। এমন অবস্থায় জেলার সকল মেসের মালিক ভাড়া আদায়ের জন্য শিক্ষার্থীদের চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। এছাড়া বেশ কিছু মেসে থাকা শিক্ষার্থীদের ভাড়া দিতে না পারায় মেস থেকে বের করে দেওয়াসহ যেসব শিক্ষার্থীরা গ্রামের বাড়ীতে গেছে তাদের ব্যবহৃত তৈজসপত্র ছুড়ে ফেলার অভিযোগও পাওয়া গেছে। তবে শিক্ষার্থীসহ সচেতনমহল মেস ভাড়া মওকুফের দাবী জানিয়ে আসলেও কোন সুরাহা হয়নি।
অবশ্য সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের মেস ভাড়া আপাতত না নেওয়ার দাবী তুললে জেলা প্রশাসন বিষয়টি নজরে এনে মেস মালিকদের শিক্ষার্থীদের প্রতি মানবতা দেখানোর অনুরোধ জানান।
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক সুত্রে জানা গেছে, জেলা শহরে অনেকে আছেন যারা ভাড়া বাসায় থেকে টিউশনি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। তাদেরই একজন ডিসি অফিসের কন্ট্রোলরুমে ফোন করে জানান, দুই মাস ভাড়া দিতে না পারায় তাকে বাসা থেকে জোরপূর্বক এখন বের করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। টিউশনি বন্ধ থাকায় তার কাছে কোনো টাকা পয়সা নেই৷ এই মুহুর্তে তার পক্ষে ভাড়া পরিশোধ করা সম্ভবও নয়। এমনকি পরিচিত কোনো দোকানদারের কাছে থেকে চাল-ডাল বাকীতে এনে রাতের খাবারের ব্যবস্থা করেছে৷
দুঃখজনক বিষয়টি কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসককে জানানোর পরপরই জরুরী ত্রাণ সহায়তা সহ জেলা প্রশাসনের দুইজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়৷ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হয়ে জেলা প্রশাসনের বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ সাদাত ও সবুজ হাসান কুষ্টিয় জেলা প্রশাসকের পক্ষে বাসার মালিককে বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে ভাড়ার বিষয়ে মানবিক হওয়ার অনুরোধ জানায়৷
সম্মানিত বাসার মালিক ম্যাজিস্ট্রেটদ্বয়ের অনুরোধ বিবেচনায় নিয়ে সাথে সাথেই অসহায় ভাড়াটিয়া ব্যক্তির বাসার ভাড়া আগামী দুই মাস পর্যন্ত মওকুফ করে দেন। সেই সাথে উক্ত অসহায় ব্যক্তির যে কোনো প্রয়োজনে বাসার মালিক পাশে থাকবে বলে কথা দেন৷
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সবুজ হাসান জানান, অধিকাংশ শিক্ষার্থী গ্রামের দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা এবং মফস্বল এলাকার। এছাড়াও অনেক শিক্ষার্থী নিজেরা টিউশনি করে নিজের পড়ালেখা চালান। এই মহামারী সময়ে তাদের নিজেদের আয় বন্ধ হয়ে গেছে, পরিবার নিয়ে অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। দেশের চলতি লকডাউনের সময়ে শিক্ষার্থীরা তাদের মেস ছেড়ে দিয়ে নিজেদের ব্যবহৃত জিনিস এবং বইপত্র অন্য কোথাও সরিয়ে নিতে ও পারছে না। এই অনাকাঙ্ক্ষিত করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টায় সব কিছু বন্ধ থাকায় আয়ের কোন উৎস নেই । এমতাবস্থায় তাদের পক্ষে মেস ভাড়া পরিশোধ করা কঠিন হয়ে উঠেছে। বিষয়টি মানবিক দেখে জেলা প্রশাসন এসব মেস-মালিক ও বাড়ীর মালিকদের প্রতি মানবিক হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, শুক্রবার রাতে বাসা ভাড়া দিতে না পারায় বাসা থেকে জোরপূর্বক বের করে দেওয়া হচ্ছিলো এমন বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে তাৎক্ষনিক সেই বাড়ীতে উপস্থিত হয়ে বাসার মালিককে মানবিক হওয়ার অনুরোধ জানাতেই দুই মাসের ভাড়া মওকুফ করে দেন। এছাড়াও অসহায় সেই ভাড়াটিয়াকে এক সপ্তাহের খাদ্য সহায়তা প্রদান করে তার পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।
এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদ্বয় উক্ত ভাড়াটিয়াকে প্রায় এক সপ্তাহের খাদ্য সহায়তা প্রদানপূর্বক ভবিষ্যতে যে কোনো জরুরী পরিস্থিতিতে পাশে থাকবে বলে আশ্বস্ত করেন।