কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের শেহালাতে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক স্কুল শিক্ষিকা গণধর্ষনের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ৩০ জুন শনিবার রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে দৌলতপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী শেহালা-নাতনা পাড়া মাঠের মধ্যে গোরস্থানের পাশে এই গণধর্ষনের ঘটনা ঘটে। ঐ স্কুল শিক্ষিকা স্থানীয় একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত।
অভিযোগসূত্রে জানা যায়, গত ৩০ জুন ভুক্তভোগি ঐ শিক্ষিকা কুষ্টিয়া প্রাইমারী ট্রেনিং সেন্টার থেকে ডিপিএড কোর্সের সমাপনী শেষে সনদপত্র উত্তোলন করে তার নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন। ঐ শিক্ষিকা পাখি ভ্যানে বাড়ি ফেরার সময় রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে শেহালা গ্রামের গোরস্থানের পাশে পৌছালে শেহালা গ্রামের শফিকুল ইসলাম সুখের ছেলে রনি আহম্মেদ রাজু, ছলিম উদ্দিনের ছেলে ইয়ার আলী ও ফজলু সাহেবের ছেলে কামাল পাশা জোর পূর্বক ঐ শিক্ষিকাকে জোর পূর্বক পাখি ভ্যান থেকে নামিয়ে পাশের মাথাভাঙ্গা নদীর ধারে নির্জন স্থানে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে।
এসময় অভিযুক্তরা ঐ শিক্ষিকাকে মারধর করে ফেলে রেখে যায়। ভুক্তভোগি ঐ শিক্ষিকার অভিযোগ অভিযুক্তরা তাকে ধরে নিয়ে ধর্ষণ করলেও তার সাথে থাকা নগদ ১০ হাজার টাকা স্বর্নের চেইন, মোবাইল ফোন থাকলেও সেগুলো নেইনি অভিযুক্তরা। এসময় এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ঐ শিক্ষিকাকে উদ্ধার করে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে ৪দিন ভর্তি থেকে চিকিৎসা নেওয়ার পর ভুক্তভোগি ঐ শিক্ষিকা বাড়ি ফিরেন। এই ঘটনার পর স্কুল শিক্ষিকা রেকসনা খাতুন বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় মামলা দায়ের করতে গেলেও থানা পুলিশ মামলা না নিয়ে ঐ শিক্ষিকাকে বিভিন্ন হুমকী ধামকী দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে দৌলতপুর থানায় মামলা করতে গিয়ে থানা পুলিশের দ্বারা নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন ঐ ভুক্তভোগী শিক্ষিকা। থানায় পানি পান করতে চাইলে দড়ি দিয়ে বেধে রাখার হুমকী দিয়েছেন দৌলতপুর থানার ওসি তদন্ত জাহাঙ্গীর হোসেন। ভুক্তভোগি শিক্ষিকার অভিযোগ, অভিযুক্তরা এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতে উঠেপড়ে লেগেছে।
তারা প্রকাশ্যে এলাকায় বলে বেড়াচ্ছে এই ঘটনায় থানা পুলিশ অভিযোগ নিবে না কোন বিচারও হবে না। তবে এই ঘটনায় দেওলতপুর থানার ওসি(তদন্ত) আসগর আলীর বিরুদ্ধে ভুক্তভোগি ঐ শিক্ষার্থীকে হুমকী ধামকী ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ উঠেছে। ওসি(তদন্ত) অভিযুক্তদের পক্ষ নিয়ে ঘটনার মোড় ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে বলেও ঐ শিক্ষিকা ও তার পরিবারের। থানায় অভিযোগ দিয়ে ন্যায় বিচার না পাওয়ায় ভুক্তভোগি ঐ শিক্ষিকা আদালতের দ্বারস্ত হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। যাহার নং- জিআর ২৯৩/১৮। আদালত অভিযোগের বিষয়টি আমলে নিয়ে দৌলতপুর থানা পুলিশকে মামলা নিতে নির্দেশনা দেওয়ার পরে দৌলতপুর থানা মামলা নিয়েছে বলে জানান ঐ শিক্ষিকা। বিষযটি নিয়ে দৌলতপুর থানার ওসি শাহ দারা খান জানান, কোর্টের নির্দেশনা পেয়ে দৌলতপুর থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। মামলা নং- ১৭, তারিখ: ১২/০৭/২০১৮ ইং। ইতিমধ্যে ঘটনাটি তদন্তে কাজ করছে পুলিশ। ধর্ষনের অভিযোগের বিষয়ে তিন অভিযুক্তের একজন কামাল পাশার সাথে কথা হলে তিনি জানান, এই বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে চাই না। তবে এই ঘটনার সাথে যুক্ত থাকার বিষয়ে তিনি অস্বীকার করেন।
এদিকে, ঘটনার পরপরই অভিযুক্তরা পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।