কুষ্টিয়া সদর উপজেলার সদর থানার ত্রিমোহনী বারখাদা জননী ডায়াগনস্টিক এন্ড মেডিকেল সার্ভিসেসে সিজার করতে গিয়ে নাড়ী কেটে ফেলায় মহিলার মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা যায়, গতকাল কুষ্টিয়া জুগিয়া এলাকার হতদরিদ্র ইছা ওরফে ইসরাইলের স্ত্রী সিমা খাতুন (২৫) এর প্রসব বেদনা উঠলে সকাল ১০টার সময় কুষ্টিয়া ত্রিমোহনী বারখাদা এলাকার জননী ডায়াগনস্টিক এন্ড মেডিকেল সার্ভিসেস সেন্টারে ভর্তি করা হয়।
পরে বিকেলে সিজারিয়ান অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সিজারিয়ান অপারেশন করেন ডাক্তার মোতাহার। বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটে অপারেশ থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয় সিমা কে। এরপর ৪টা ২৫ মিনিটে ওটি থেকে ছেলে বাচ্চা নিয়ে আসে সেবিকা। ৫টা বেজে যাওয়ার পরও সিমাকে ওটি থেকে বের করা না হলে পরিবারের লোকজন বারবার সেবিকা ও ডাক্তারদের জিজ্ঞাসা করলেও কোন উত্তর দেয়নি তারা।
সন্ধ্যা ৬ টার দিকে হঠাৎ একটি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে এসে সিমা খাতুনের পরিবারের লোকজনের সাথে কথা না বলেই সিমা খাতুনকে এ্যাম্বুলেন্সে করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়।
সিমা খাতুনের পরিবারের লোকজন বলেন, দেরি দেখে আমরা বার বার নার্স ও ষ্টাফদের রোগীর অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা আমাদের জানায় না। কয়েকবার অপারেশন থিয়েটারের সামনে গেলে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়। সন্ধ্যা ৬টার দিকে হটাৎ কাউকে কিছু না জানিয়ে একটি এ্যাম্বুলেন্স এসে কাকে যেন নিয়ে যায়। এ্যাম্বুলেন্স ছেড়ে যাওয়ার পরে আমরা জানতে পারি সিমাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমরা তড়িঘরি করি যাওয়ার চেষ্টা করলেও আমাদের রেখেই জননী ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লোকজন সিমা কে নিয়ে চলে যায়। হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারি কর্তব্যরত চিকিৎসক সিমা খাতুনকে মৃত ঘোষনা করেছেন। সে হাসপাতালে যাওয়ার পূর্বেই মারা যায় বলে ডাক্তার জানান। সিমা খাতুনের ইতিপূর্বে ২টি মেয়ে সন্তান রয়েছে। সিমা খাতুনের মৃত্যুর খবর পেয়ে জননী ডায়াগনষ্টিক এন্ড মেডিকেল সেন্টারের মালিক ডাঃ ইকবাল হাসান সহ তার লোকজন পালিয়ে যায়।
সরেজমিনে জননী ডায়াগনষ্টিক ও মেডিকেল সেন্টারে গিয়ে একজন রিসিপশনে একজন আয়া ছাড়া আর কেউ নেই। সেখানে কোন ডাক্তার বা প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সেবিকার দেখা মেলেনি।
আয়ার সাথে কথা বললে তারা বলেন, হাসপাতালের নার্সরা দুপুরে ছুটিতে গিয়েছে এবং ডাক্তারগণ বাইরে রয়েছেন। আয়া রুবি জানান, এই প্রতিষ্ঠানের মালিক ডাঃ ইকবাল হাসান। আজ রোগী মারা যাওয়ার পর যে ৫জন রোগি ভর্তি ছিল তারাও চলে যায়।
ওই মহিলার স্বামী ইসমাঈল হোসেন জানান, গত বৃহাস্পিতবার আমার স্ত্রী সিমা খাতুনের সিজার করা জন্য জননী ডায়াগনস্টিক এন্ড মেডিকেল সার্ভিসেস নিয়ে আসি। এখানে আমার স্ত্রীকে পরীক্ষা করে জানতে পারি তাকে এখনি সিজার করতে হবে। এ সময় নার্স বর্ষা ও ডাক্তার আমার স্ত্রীকে সিজার করে। এরপর স্ত্রী সিমা সিজার শেষে ডাক্তার ও নার্স এসে বলে আপনার একটা ছেলে সন্তান হয়েছে। তার কিছুক্ষণ পরে ডাক্তার ও ক্লিনিকের সবাই কানাঘুষো করছে পরে এ সময় অতিরিক্ত রক্তকরণে সিমা খাতুনে মৃত্যু কোলে ঢুলে পড়ে এবং ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তড়িঘরি করে প্রাইভেট গাড়ী এনে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়। পরে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসা জানায় আমার স্ত্রী মারা গেছে। ওরা আমার স্ত্রীকে মেরে ফেলেছে। আমি ওদের কঠিন শাস্তি চায়।
আরও জানা যায়, এই ক্লিনিকের রেজিস্ট্রেশন নবায়ন হয়নি। এক কথিত প্যাথলজিশিয়ান ও একজন মেডিকেল এ্যাসিসটেন্ট ডাক্তার দ্বারা চলছে এই ক্লিনিক। তারা অহরহ বিভিন্ন অপারেশন করে আসছে। এই ক্লিনিকে অপারেশনের জন্য আধুনিক কোন যন্ত্রপাতি নাই এবং কোন অভিজ্ঞ ডাক্তার ও নার্স নেই বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, দালাল ও গ্রাম্য কোয়ার্ক ডাক্তাররা কমিশনের বিনিময়ে গ্রামের সহজ সরল অসহায় দারিদ্র রোগীদের কম খরচে চিসিৎসার প্রলোভন দেখিয়ে এই ক্লিনিকে পাঠায়।
জানা যায়, জননী ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে যিনি সনো করেন তিনি অভিজ্ঞ নন। ডাঃ ইকবাল হাসান এখানকার ডাক্তার হলেও তিনি অধিকাংশ সময় বাইরে থাকেন। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গতকাল রাতে লাশ দাফনের প্রস্তুতি চলছিল। সিমা খাতুনের মৃত্যুতে এলাকাবাসী বিচারের দাবীতে ফুসে উঠেছে।
এই বিষয়ে জননী ডায়াগনষ্টিক ও মেডিকেল সেন্টারের মালিক ডাঃ ইকবাল হাসানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সিজার করার সময় হটাৎ রোগীর শ্বাসকষ্ট হলে তাকে দ্রুত কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর সিমা খাতুন মারা যান।
এই ক্লিনিকের কথিত বর্ষা নার্স কথিত প্যাথলজিশিয়ান ও মালিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই বেরিয়ে আসবে মৃত্যুর আসল রহস্য। এলাকাবাসী এই ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কুষ্টিয়া সিভিল সার্জনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।