Thursday, March 28, 2024
প্রচ্ছদআইন আদালতকুষ্টিয়ায় ভার্চুয়াল কোর্টে জামিন শুনানি শুরু

কুষ্টিয়ায় ভার্চুয়াল কোর্টে জামিন শুনানি শুরু

Published on

আজ বুধবার (১৩ মে) থেকে কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালত ও চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট কোর্টে শুরু হচ্ছে ভার্চুয়াল জামিন শুনানী।

এ বিষয়ে মঙ্গলবার (১২ মে) কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ এর কার্যালয় থেকে পক্ষগণ ও আইনজীবীদেরকে শারীরিক উপস্থিতি ব্যতিরেকে বিচার কার্য পরিচালনার লক্ষ্যে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে শুনানী অংশগ্রহনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৩ ও ১৪ ই মে ভার্চুয়াল শুনানীর জন্য ৭৯ টি বিবিধ মামলার কজলিষ্ট সরবরাহ করা হয়েছে।

এছাড়াও কুষ্টিয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, বিশেষ জজ আদালত ও চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট কোর্টে আদালতে নির্ধারিত ই-মেইলের মাধ্যমে জামিন আবেদন করা যাবে। ভার্চুয়াল জামিন শুনানীর সরকারি নির্দেশনা জারীর পর থেকে জেলা জজশীপ ও আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দের সাথে কয়েকদফা বৈঠকে কার্যপদ্ধতী ঠিক করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে আদালতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে বিচারকাজ চালানোর বিষয়ে অধ্যাদেশ জারির পরদিন নিম্ন আদালতের ভার্চুয়াল কোর্টে শুধু জামিন শুনানি করতে নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন।

রোববার (১০ মে) এ বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো.আলী আকবর।

প্রধান বিচারপতির আদেশক্রমে এ নির্দেশনা জারি করা হয়।  

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায এবং এর ব্যাপক বিস্তার রোধকল্পে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে আগামী ১৬ মে পর্যন্ত সব আদালতে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

‘উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ছুটির সময়ে বাংলাদেশের প্রত্যেক জেলার জেলা ও দায়রা জজ, মহানগর এলাকার মহানগর দায়রা জজ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক, বিশেষ জজ আদালতের বিচারক, সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক, জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারককে এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিজে অথবা তার নিয়ন্ত্রণাধীন এক বা একাধিক ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা ‘আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ ২০২০ এবং উচ্চ আদালতের জারিকৃত বিশেষ প্রাকটিস নির্দেশনা’ অনুসরণ করে শুধু জামিন সংক্রান্ত বিষয়গুলো তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার উদ্দেশ্যে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।

গত ২৬ এপ্রিল বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতে সাধারণ ছুটিতে আদালত বন্ধ রেখে ভার্চুয়াল কোর্ট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়।

এজন্য সুপ্রিমকোর্টের রুলস কমিটি পুনরায় গঠন এবং ভার্চুয়াল কোর্ট চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত প্রতিবন্ধকতা দূর করতে পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
 
ওইদিন প্রথমবারের ভিডিও কনফারেন্সে প্রধান বিচারপতির সভাপতিত্বে ফুলকোর্ট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কনফারেন্সে সংযুক্ত ছিলেন সুপ্রিমকোর্টের উভয় বিভাগের ৮৮ জন বিচারপতি।  
 
এ অবস্থায় গত ৭ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভপতিত্বে গণভবনে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ ২০২০’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।

দু’দিন পর ৯ মে ভার্চুয়াল কোর্ট সম্পর্কিত অধ্যাদেশ জারি করা হয়। অধ্যাদেশে বলা হয়, সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ বা ক্ষেত্রমত হাইকোর্ট বিভাগ, সময় সময়, প্র্যাকটিস নির্দেশনা (বিশেষ বা সাধারণ) জারি করতে পারবে।

অধ্যাদেশে আরও বলা হয়, ফৌজদারি কার্যবিধি বা দেওয়ানি কার্যবিধি বা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে ভিন্নতর যাই থাকুক না কেন, যে কোনো আদালত এই অধ্যাদেশের ধারা ৫ এর অধীন জারি করা প্র্যাকটিস নির্দেশনা (বিশেষ বা সাধারণ) সাপেক্ষে, অডিও-ভিডিও বা অন্য কোনো ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে বিচারপ্রার্থী পক্ষরা বা তাদের আইনজীবী বা সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যক্তি বা সাক্ষীদের ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করে যে কোনো মামলার বিচার বা বিচারিক অনুসন্ধান বা দরখাস্ত বা আপিল শুনানি বা সাক্ষ্য গ্রহণ বা যুক্ততর্ক গ্রহণ বা আদেশ বা রায় দিতে পারবে।

অডিও-ভিডিও বা অন্য কোনো ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে বিচারপ্রার্থী পক্ষ বা তাদের আইনজীবী বা সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যক্তি বা সাক্ষীদের ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করা ছাড়া অন্যান্য বিষয়ের ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধি বা ক্ষেত্রমতে দেওয়ানি কার্যবিধি অনুসরণ করতে হবে।

কোনো ব্যক্তির ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করা হলে ফৌজদারি কার্যবিধি বা দেওয়ানি কার্যবিধি বা অন্য কোনো আইনের অধীন আদালতে তার সশরীরে উপস্থিতির বাধ্যবাধকতা শর্ত পূরণ হয়েছে বলে গণ্য হবে।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শুনানি আদালত চলাকালে অনুষ্ঠিত হবে। শুনানি গ্রহণ, শুনানির তারিখ ও সময় অনলাইন প্লাটফর্মে ব্যবহৃত হবে ও কজলিস্টের পোর্টালে থাকবে, যা মোবাইল ও ই-মেইলের মাধ্যমে উভয়পক্ষের কৌশলীকে অবহিত করতে হবে।

গৃহীত আবেদনের ওপর একটি ভিডিও কনফারেন্সিং কেস নং (ভিসি কেস নং) ব্যবহৃত হবে এবং পরবর্তী সব প্রয়োজনে এই নম্বর ব্যবহৃত হবে। আবেদন গৃহীত হওয়ার পর আবেদনকারী অথবা তার আইনজীবী আদালতে ও প্রতিপক্ষের ই-মেইলে ২৪ ঘণ্টা আগে ইমেজ আকারে ১০ এমবির মধ্যে পাঠানো হবে।

আদালত কর্তৃক নির্ধারিত ভিডিও কনফারেন্সিং প্লাটফর্ম জুম, গুগল মিট বা মাইক্রোসফট টিম ব্যবহার করে উভয়পক্ষের আইনজীবী শুনানিতে অংশ নেবেন। শুনানির ১৫ মিনিট আগে আইনজীবী ও প্রয়োজনে তার সহায়ক আইনজীবী আদালতের কার্যক্রমে অংশ নেবেন। ভিডিও কন্ট্রোলরুম থেকে ১৫ মিনিট ভিডিও কনফারেন্সিং ব্যাবহার কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হবে।

শুনানিকালে স্ক্রিন শেয়ার অপশন থেকে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট শেয়ার করতে হবে এবং মামলা সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সংযুক্তি আকারে আদালতের ই-মেইলে পাঠাতে হবে, যার একটি কপি প্রতিপক্ষের আাইনজীবীকেও দিতে হবে। শুনানির ফলাফল তাৎক্ষণিকভাবে জানানো সম্ভব না হলে ই-মেইলে ও খুদে বার্তার মাধ্যমে উভয়পক্ষের আইনজীবীকে জানাতে হবে।

জামিন হলে বন্ড ও রিলিজ অর্ডার পূরণ করে স্ক্যানকপি আদালতের ই-মেইলে পাঠাতে হবে। বিচারক বেইল বন্ড ও রিলিজ অর্ডার এক কপি প্রিন্ট করে অফিসিয়াল ফাইলে সংগ্রহ করবেন। আর এক কপি জেল সুপারের অফিসিয়াল মেইলে পাঠাবেন। আদালতের আদেশে সংক্ষুব্ধ হলে যে কোনো পক্ষ ফটো সার্টিফাইং কপি সংগ্রহ করে উচ্চতর আদালতে যেতে পারবেন। দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করতে হবে এবং কেউ শুনানির কোনো অংশ রেকর্ড করলে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার অভিযোগে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শুনানিকালে বিচারক ও আইনজীবীকে প্রচলিত কোর্ট ড্রেস পরতে হবে, তবে গাউন না পরলেও চলবে। ভার্চ্যুয়াল শুনানিকালে নিরিবিছন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকতে হবে। কেউ শুনানিকালে বিছন্ন হলে তাকে পুনরায় সংযুক্ত করতে হবে। সব ধরনের কোলাহল পরিত্যাগ করতে হবে। অন্য সব মোবাইল ফোনের সাউন্ড মিউট রাখতে হবে। কারিগরি সমস্যার কারণে কোনো পক্ষের আইনজীবী যুক্ত হতে না পারলে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের জন্য পরবর্তীতে আবার তারিখ নির্ধারণ করতে হবে।

শুনানিকালে কোনো প্রতারণা, মিথ্যা বর্ণনা ও জাল সাক্ষ্য প্রমাণ দিলে ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি বা ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কার্যধারা গ্রহণ করা যাবে। নির্দেশনায় বর্ণিত হয়নি এমন বিষয় উদ্ভূত হলে আদালত প্রচলিত আইন অনুসারে আদালত পরিচালনা পদ্ধতি নির্ধারণ করবেন। ভার্চ্যুয়ালি শুনানির ক্ষেত্রে আইনজীবীরা নির্দেশিকা অনুসরণ করবেন।

ভার্চুয়াল জামিন শুনানী বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মাদ আবু সাঈদ বলেন, সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে আমরা আইনজীবীরা ভার্চুয়াল জামিন শুনানীতে অংশগ্রহন করবো। আইনজীবীদের অনেকে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে কমপারদর্শী হলেও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সকলকে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার রপ্ত করার পরামর্শও দেন তিনি।

সর্বশেষ

কুষ্টিয়ায় আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল সমর্থকদের সংঘর্ষে আহত ৭

কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল খেলা নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডার পর সংঘর্ষে জড়িয়ে অন্তত সাতজন...

কুষ্টিয়ায় শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানি, বরখাস্ত প্রধান শিক্ষককে পুলিশে সোপর্দ

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে পঞ্চম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানির মামলায় বরখাস্ত প্রধান শিক্ষককে বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর)...

কুষ্টিয়ায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২

কুষ্টিয়ায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় একটি শিশুসহ দু’জনের মৃত্যু হয়েছে।   বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে...

পাসপোর্ট সংশোধনে সরকারের নতুন নির্দেশনা

এনআইডির তথ্য অনুযায়ী পাসপোর্ট রি-ইস্যুর নির্দেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পাসপোর্ট...

আরও পড়ুন

কুষ্টিয়ায় হত্যার দায়ে ৬ ডাকাতের যাবজ্জীবন

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ডাকাতি করার সময় শাজাহান আলী নামের এক বাড়ির মালিককে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে...

কুষ্টিয়ায় দুর্নীতির দায়ে ডিসি অফিসের সাবেক দুই কর্মচারীর কারাদণ্ড

গ্যাস সঞ্চলন পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্পে দুর্নীতির দায়ে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সাবেক কানুনগো রেজাউল করিম...

কুষ্টিয়ায় ভার্চুয়াল আদালতে অংশ নিচ্ছেন আইনজীবীরা

ভার্চুয়াল আদালতের মাধ্যমে গেল কয়েক দিনে শতাধিক মামলার শুনানি হয়েছে। এসব মামলায় জামিন পাচ্ছেন...