মহান মুক্তিযুদ্ধে বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার অন্যতম সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাবিদ, জাসদ নেতা, নিভৃতচারী সজ্জন ব্যক্তি সাহাবুব আলীর চির বিদায়। (ইন্না লিল্লাহী—- রাজিউন)।
বৃহষ্পতিবার সকাল ১০টায় চৌড়হাস টার্মিনালের সামনে তাঁর নিজ বাস ভবনে হৃদ যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু বরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৬৫বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই পূত্রসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে যান।
বৃহষ্পতিবার দুপুর আড়াই টায় শহরতলী চৌড়হাস গ্রামে মরহুমের পৈত্রিক ভিটায় ১ম জানাযা শেষে কুষ্টিয়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের উদ্যোগে কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজ মাঠে বিকেল সাড়ে ৪টায় নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোসাদ্দে হোসেন ও মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতিতে আইন শৃংখলা বাহিনী গার্ড অব অনার প্রদান শেষে সেখানে ২য় জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। পরে বাদ এশা কুষ্টিয়া বড় মসজিদের ৩য় জানাযা শেষে রাত টায় কুষ্টিয়া পৌর গোরস্থানের মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম সাহাবুব আলীর দাফন সম্পন্ন হয় এবং আজ শুক্রবার বিকেল ৪টায় চৌড়হাস টার্মিনালের সামনে তাঁর নিজ বাস ভবনে মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনায় কুলখানী অনুষ্ঠিত হবে বলে নিশ্চিত করেন তার পরিবার।
কুষ্টিয়া জেলার এই বীর যোদ্ধার তড়িৎ বিদায়ে শোকের ছায়া নেমে আসে তার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, দল জাসদ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও কমান্ড কাউন্সিলসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানে। অত্যন্ত মর্যাদাবোধ সম্পন্ন আত্মত্যাগী এই বীর যোদ্ধা ব্যক্তিগত জীবনে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকতা। তিনি ২০১৬ সালে খাদিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে অবসরে যান। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা না নেয়া নির্লোভ সজ্জন এই যোদ্ধার আকস্মিক মৃত্যু স্তম্ভিত করেছে সকলকে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম সাহাবুব আলীর অন্যতম সহযোদ্ধা ও ঘনিষ্ট সহচর মহান মুক্তিযুদ্ধের মুহুর্তে কুষ্টিয়ায় প্রথম স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলনকারী ছাত্রনেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাড. আব্দুল জলিল শ্রদ্ধাঞ্জলী দেয়ার সময় শোক কাতর কন্ঠে বলেন, ছাত্র জীবন থেকেই সাহাবুব স্বপ্ন দেখেছিলেন বৈষম্যহীন শোষনমুক্ত সমাজ বির্নিমানের। সেই থেকে লালিত স্বপ্ন পূরণেও আত্ম প্রত্যয়ী লড়াকু সৈনিক হিসেবে আবির্ভুত হয়েছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগে। হানাদার পাক শাসনের মূলোৎপাটনে সংগঠিত জাগড়িত বাঙালীর মুক্তি সংগ্রামেও তিনি আত্মোৎসর্গী প্রানে এগিয়ে যান দৃঢ়তার সাথে। যুদ্ধকালীন সময়ে তার বীরত্বগাথা ইতিহাস দীর্ঘতর। আজীবন শোষনমুক্তির সংগ্রামে অবিচল এই বীর যোদ্ধার নীতি আদর্শ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বিকশিত হোক।
বীরমুক্তি যোদ্ধা সাহাবুব আলীর প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে ফুল দেন- রাষ্ট্রীয় ভাবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আইন শৃংখলা বাহিনী, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও কমান্ড কাউন্সিল, জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটি ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় জাসদের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আলীম স্বপন, কুষ্টিয়া জেলা ও উপজেলা জাসদের নেতৃবৃন্দ, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি কুষ্টিয়া জেলা, বাসদ, রবিন্দ্র মৈত্রী বিশ^বিদ্যালয়, উদিচী কুষ্টিয়া, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, তার স্কুল খাদিমপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, কাজী আরেফ সংসদ, কুষ্টিয়া জেলা আইজীবি সমিতি, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন কুষ্টিয়া, মিরপুর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডসহ বিভিন্ন সংগঠন।