জমি ফেরত পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে অসহায় বৃদ্ধা।
কুষ্টিয়া খোকসা উপজেলার গোপগ্রামের মৃত আব্দুল মজিদ বিশ্বাসের স্ত্রী হালিমা খাতুনকে বিধবা ভাতার কার্ড করিয়ে দেওয়ার কথা বলে প্রতারণার মাধ্যমে জমি লিখে নিলেন গোপগ্রাম ২নং ওয়ার্ডের সল্টু মেম্বার, দোকানের ভাড়াটিয়া আলতাব, বড় মেয়ে খালেদা ও জামাই সরিত উল্লাহ। জমি ফিরে পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিধবা হালিমা খাতুন(৭০)। আব্দুস সামাদ সল্টু মেম্বার কুষ্টিয়া জেলার খোকসা উপজেলার গোপগ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে ও দোকানের ভাড়াটিয়া আলতাব হোসেন জোতপাড়া সন্তষপুর এলাকার মৃত আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে।
গত ২৭শে আগস্ট বাংলাদেশ মানবাধিকার কল্যাণ ট্রাস্ট কুষ্টিয়া জেলা শাখা বরাবর প্রতারণা মূলে রেজিঃ করিয়ে নেওয়া জমি ফিরে পাওয়ার প্রার্থনায় লিখিত দরখাস্ত দিয়েছেন তিনি।
এতে উলেখ আছে, আমি বিধবা ভাতার কার্ড পাওয়ার জন্য গোপগ্রাম ইউপি সদস্য সল্টুর নিকট যায়। সাল্টু মেম্বার কিছুদিন পর বিধবা ভাতার কার্ড করে দিতে চায়। এরপর গত ১০ জুলাই আমাকে কার্ড করে দেওয়ার কথা বলে খোকসা উপজেলা অফিসে নিয়ে যায়। সেখানে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে সল্টু মেম্বার, আলতাব, আমার বড় মেয়ে খালেদা ও জামাই সরিত উল্লাহ এই চার জন মিলে আমাকে বলে বিধবা ভাতা কার্ড পেতে হলে টিপ সহি দিতে হবে। এই ভাবে মিথ্যা কথা বলে রেজিষ্ট্রার সাহেবের নিকট নিয়ে গিয়ে আমার কানে না শোনার সুযোগে জাল জালিয়াতি দলিল তৈরি করে তাতে টিপ সহি নিয়ে ভূয়া ভাবে রেজিষ্ট্রি করে নেয়। সেই জমিতে একটি দোকান ঘর ছিল যা দ্বারা আমি সংসারের অন্য সদস্যদের নিয়ে সংসার চালিয়ে আসছিলাম। তারা আমার দোকান ঘর দখল করে নিয়েছে। বর্তমানে আমি আমার পরিবার নিয়ে অনেক কষ্টের মধ্যে দিন যাপন করছি।
শ্রবণ প্রতিবন্ধী হালিমা খাতুন খোকসা উপজেলার গোপগ্রাম এলাকার মৃত আব্দুল মজিদ বিশ্বাসের স্ত্রী।
এদিকে গতকাল সকালে খোকসা উপজেলার গোপগ্রাম এলাকায় গিয়ে জানা যায়, চার সন্তানের জননী বৃদ্ধ হালিমা খাতুনের ছেলে মৃত্যুবরণ করার পর ঐ ছেলের নামে থাকা জমি ৬ ভাগের এক ভাগ হালিমা খাতুনের নামে হয়ে যায়। সেই জমি হাতিয়ে নিতে ঐ বৃদ্ধার বড় মেয়ে খালেদা, জামাই সরিত উল্লাহকে টাকার লোভ দেখিয়ে স্থানীয় ইউপি মেম্বার আঃ সামাদ সল্টু, আলতাফ হোসেন শ্রবণ প্রতিবন্ধী বৃদ্ধার সব জমি হাতিয়ে নিয়েছে। এতে স্থানীয়দের মধ্যে নানা গুঞ্জন শোনা যায়। অনেকেই অভিযোগ করে বলেন সল্টু মেম্বার লোভী। সে ঐ বৃদ্ধার সাথে প্রতারণা করে বৃদ্ধাকে পথে বসিয়ে দিয়েছে। বৃদ্ধা হালিমা খাতুনের গোপগ্রাম বাজারে একটি দোকান রয়েছে। সেই দোকানের ভাড়া নিয়ে তার মরহুম ছেলের তিন মেয়ে দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করছেন। এই দোকান ভাড়ার টাকা দিয়ে সংসার কোন ভাবে চলে।
বৃদ্ধা শ্রবণ প্রতিবন্ধী হালিমা খাতুন এর সাথে কথা বলতে গেলে কান্নায় ভেঙে পড়েন হালিমা খাতুন। তিনি বলেন আমাকে ভাতার কার্ড করে দেওয়ার কথা বলে আমার সব কিছু কেড়ে নিয়েছে স্থানীয় মেম্বার সল্টু। আমি সল্টু মেম্বারের বিচার চাই। আমার জমি ফেরত চাই। কিভাবে বুঝলেন জমি লিখে নিয়েছে সল্টু মেম্বার জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার যে দোকান ছিল দোকানের ভাড়া তুলতে গিয়ে সল্টু মেম্বার আমাকে জানাই তোমার দোকান না এ দোকান এখন আমাদের। তুমি আমাদের কাছে দোকান ও জমি বিক্রয় করে দিয়েছো। পরে জানতে পারি আমাকে ভুল বুঝিয়ে ২২শে আগষ্ট ২০১৯ খোকসা উপজেলা অফিসে নিয়ে গিয়ে বয়স্ক ভাতার কার্ডের টাকা তোলার কথা বলে জমির দলিলে সই করিয়ে নেয়। এ বিষয়ে আমি স্থানীয় চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ মানবাধিকার কল্যাণ ট্রাস্ট কুষ্টিয়া জেলা শাখা কে অবগত করেছি।
মৃত মন্টুর স্ত্রী সালমা খাতুন জানান, আমার চার সন্তান ও শাশুড়ি হালিমা খাতুন কে নিয়ে দোকানের ভাড়ার টাকা দিয়ে সংসার চালাতাম। বেশ কিছুদিন দোকানের ভাড়াটিয়া আলতাব হোসেন দোকানের ভাড়া দেয় না। আমরা ভাড়া চাইতে গেলে সে বলে তোমাদের দোকান ও কোন জমি এখন আর নেই। সব কিছু আমার ও সল্টু মেম্বারের। তোমার শাশুড়ি সবকিছু আমাদের নামে লিখে দিয়েছে। দোকানের উপর এরপর আসলে বিপদ আছে বলে হুমকি দেয় ভাড়াটিয়া আলতাব হোসেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাশের এক ব্যবসায়ী জানান, সল্টু মেম্বার প্রতারণার মাধ্যমে বৃদ্ধ মহিলা সব জমি লিখে নিয়েছে। এটা আপনারা কিছু করেন, না হলে ওই বৃদ্ধা, তার ছেলের বউ ও সন্তানদের নিয়ে পথে বসবে।
স্থানীয় সমিল ব্যবসায়ী ইউসুফ মোল্লা বলেন, গোপগ্রাম ইউনিয়নের দুই নাম্বার ওয়ার্ডের আঃ সামাদ সল্টু মেম্বার একজন প্রতারক। এই বৃদ্ধা মহিলারা খুবই ভালো মানুষ এদের সাথে প্রতারণা করে জমি লিখে নিয়ে দোকান দখল করেছে। এছাড়াও সল্টু মেম্বার এত খারাপ মানুষ তিনি সালিশের নামে বিভিন্ন মানুষকে বিপদে ফেলে টাকা পয়সা আদায় করে। সে প্রভাবশালী হওয়ায় তার বির“দ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না।
মৃত মন্টুর চাচা আব্দুল হাই জানান, আমার ভাতিজা মন্টু মারা যাওয়ার পর আমার ভাবী হালিমার নিকট থেকে ১১ দাগে প্রায় দুই শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি করে নেয়। এখন আলতাব ও সল্টু মেম্বার ১১ দাগের জমি একই দাগে দেখিয়ে তিনটি দোকান ভোগ দখল করছে। যার আনুমানিক মূল্য ৩০ লক্ষ টাকা। আমার ভাবী আমাদেরকে জানিয়েছে বয়স্ক ভাতার টাকা তোলার কথা বলে আমি কানে না শোনার সুযোগ নিয়ে ওরা আমার সব জমি রেজিস্ট্রি করে নিয়েছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেনের সাথে কথা বলে জানা যায়, আঃ সামাদ সল্টু মেম্বার ও আলতাব হোসেন অবৈধভাবে বৃদ্ধ মহিলার কাছ থেকে প্রতারণা করে বয়স্ক ভাতার নমীনির টাকা তোলার নাম করে জমি রেজিষ্ট্রি করে নিয়েছে। এ বিষয়ে আমি অবগত আছি। এই ঘৃণিত কাজের জন্য প্রতারকদের শাস্তির দাবি। আমি আশা করছি আপনারা সহযোগিতা করবেন।
এদিকে অভিযুক্ত আব্দুস সামাদ সল্টু মেম্বার ও আলতাফ হোসেনের সাথে কথা বললে তারা বলেন, আমরা হালিমা খাতুনের বড় মেয়ে খালেদা খাতুন ও জামাই সরিত উল্লাহর সাথে আলোচনা করে প্রথমে ৪০ হাজার টাকা বায়না পরবর্তীতে ১লক্ষ ৬০ হাজার টাকা দিয়ে জমি বৈধভাবে করে নিয়েছি। সল্টু মেম্বার আরো বলেন, এই জমি আমার। এ বিষয় নিয়ে বেশি মাতামাতি করলে সমস্যা আছে বলে সাংবাদিকদের সামনেই বৃদ্ধা মহিলাকে হুমকি দেয় সল্টু মেম্বার।
এলাকাবাসীর কেউ এই বিষয় নিয়ে বলতে গেলে টাকা-পয়সা ও ক্ষমতার দাপটে মুখ বন্ধ করে দেয় সল্টু মেম্বার।