কুষ্টিয়ায় গত শনিবার শুরু হওয়া বাস ধর্মঘটের আজ ছয় দিন হতে চলেছে। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে মঙ্গলবার বৈঠকও হয়েছে বাসমালিক-শ্রমিকদের। তারপরও অঘোষিত ধর্মঘট প্রত্যাহারে কোনো পদক্ষেপ নেই। এতে দুঃসহ দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।
সড়কে বাস নামাতে মালিকেরা রাজি থাকলেও না চালানোর সিদ্ধান্তে অটল কুষ্টিয়ার শ্রমিকেরা। গতকাল বুধবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাস ও আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের পরও শ্রমিকেরা বাস চালাচ্ছেন না। ছয় দিন ধরে কুষ্টিয়া থেকে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। দূরপাল্লার গাড়িসহ স্থানীয় বিভিন্ন রুট ও ভাড়া গাড়ি চলাচলও বন্ধ রয়েছে।
পরিবহন চালক ও শ্রমিকরা বলছেন শ্রমিক সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় নেতাদের সিদ্ধন্তে আজ থেকে পরিবহন চলাচলের কথা থাকলেও সড়ক দুর্ঘটনায় ৫লক্ষ টাকা জরিমানা ও ৫ বছর জেলের বিষয়ে কোন সমাধান না হওয়া তারা কর্মবিরতি পালন করছে। পরিবহন শ্রমিকদের স্বার্থপরিপন্থি আইন এর ধারা ও উপধারা সংশোধন না করা পর্যন্ত গাড়ী চালাবেনা বলেও জানান শ্রমিকরা।
এবিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি মকবুল হোসেন বলেন, ‘ ভাই, খুবই চেষ্টা করছি, কিন্তু কাজ হচ্ছে না। শ্রমিকেরা বাসের কাছেই আসতে চাইছে না। আমরা মালিকপক্ষ সড়কে বাস দিতে রাজি। কেন যে শ্রমিকেরা আসছে না, সেটা বধগম্য হচ্ছে না। শুনেছি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে রাতে একটা বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। কার্যালয়ে গিয়ে বসে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আতাহার আলী বলেন, দুপুরে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে দ্বিতীয়বারের মতো বৈঠক হয়। সেখানে বাস চালানোর জন্য মালিকেরা একমত হন। এরপর টার্মিনালে গিয়ে চালকদের বাস চালানোর কথা জানালে তাঁরা চালাবেন না বলে জানান। তাঁদের অনুরোধ করেও কাজ হচ্ছে না।
কুষ্টিয়া বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক আফজাল হোসেন জানান, কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে কুষ্টিয়ায় চালক ও শ্রমিকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করার কথা বললেও তারা আমাদের মতো নেতাদের কথা মানছেনা। শ্রমিকরা তাদেও নিজের সিন্ধাতেই কর্মবিরতি পালন করছে বলেও জানান এই শ্রমিক নেতা।
আজ দুপুরে চৌড়হাস ও মজমপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় রুটগুলোতে বাস ধর্মঘটের সঙ্গে দূরপাল্লার বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাসসহ সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রেখেছেন শ্রমিকেরা। সকালে চৌড়হাস ও মজমপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীরা দাঁড়িয়ে আছেন। কেউ কেউ ঝুঁকি নিয়ে ইজিবাইকসহ তিন চাকার যানে গন্তব্যে যাচ্ছেন। মজমপুর এলাকায় দূরপাল্লার বাস কাউন্টারগুলোতেও কোনো টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে না।
সকাল থেকে পরিবহন চলাচল শুরু হচ্ছে টেলিভিশনে এমন সংবাদ দেখে অনেক যাত্রীরাই মজমপুর বাসষ্টান্ডে এসে পরিবহন চলাচল বন্ধ দেখে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। যাত্রীরা বলছেন আর ধর্মঘট নয়, এই পরিবহন সমস্যার স্থায়ী সমাধান চান তারা।
ক্ষোভের সাথে এক যাত্রী জানান, দুই দিন আগে কাজ শেষ হয়েছে। ঢাকা থেকে এসে আটকা পড়েছি। সকালে ঘুম থেকে উঠে খবরে জানতে পারলাম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ফলপ্রসূ বৈঠক হয়েছে, বাস ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। ঢাকা যাওয়ার জন্য পরিবার নিয়ে টার্মিনালে গিয়ে দেখি উল্টো। বাস থাকলেও চালানোর কেউ নাই। এত মেনে নেওয়ার পরও তারা কী চায়?